অবণ্টিত লভ্যাংশ ৩০ জুনের মধ্যে না দিলে ২% হারে সারচার্জ দিতে হবে
সিএমএসএফ গঠনের পর এখন পর্যন্ত ১ হাজার ১৭০ জন বিনিয়োগকারীকে তাদের প্রাপ্য লভ্যাংশ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছেন তহবিলের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান। ছবি: এআরএইচ ডটকম
তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি গত ৩০ জুনের মধ্যে অবণ্টিত লভ্যাংশ পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিলে (সিএমএসএফ) জমা দেয়নি, তাদের অতিরিক্ত ২ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হবে বলে জানিয়েছেন তহবিলের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান।
সিএমএসএফ গঠনের পর এখন পর্যন্ত ১ হাজার ১৭০ জন বিনিয়োগকারীকে তাদের প্রাপ্য লভ্যাংশ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছেন তিনি।
পুঁজিবাজারবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টকে’ অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর পল্টনে সিএমজেএফ কার্যালয়ে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি জিয়াউর রহমান। আর সঞ্চালনায় ছিলেন সিএমজেএফের সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন নজিবুর রহমান। অবণ্টিত লভ্যাংশ প্রত্যাশা অনুযায়ী সিএমএসএফে জমা না হওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি আমাদের একটি নির্দেশনা দিয়েছিল এবং আমরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আমরা পর্যায়ক্রমে প্রতিটি কোম্পানি অডিট করবো। এটি বিএসইসির বিশেষ পদক্ষেপ।”
তিনি বলেন, “গত ৩০ জুনের মধ্যে যে সব কোম্পানি অবণ্টিত লভ্যাংশ দিয়ে দিয়েছে, তাদের কোনো সমস্যা হবে না। যারা দেয়নি, তাদের ২ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হবে। এ সারচার্জসহ অবণ্টিত লভ্যাংশ ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে জমা দিতে হবে। সে প্রক্রিয়ার মধ্যে আমরা আছি।”
নজিবুর রহমান বলেন, বিএসইসির উদ্যোগে এই তহবিল গঠনের পর এখন পর্যন্ত ১ হাজার ১৭০ বিনিয়োগকারীকে তাদের প্রাপ্য লভ্যাংশ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নগদ লভ্যাংশ পেয়েছেন ৮০০ বিনিয়োগকারী। আর বোনাস লভ্যাংশ পেয়েছেন ৩৭০ জন।
“দীর্ঘদিন ধরে এসব বিনিয়োগকারীর লভ্যাংশ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর হাতে অবণ্টিত লভ্যাংশ হিসেবে পড়ে ছিল। সিএমএসএফ গঠনের পর এসব অবণ্টিত লভ্যাংশের একটি বড় অংশ তহবিলে ফেরত আনা হয়েছে। সেখান থেকে এখন তা লভ্যাংশের দাবিদারদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।”
নজিবুর রহমান বলেন, সিএমএসএফের আকার বেড়ে এখন ১ হাজার ২৭০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে বিনিয়োগকারীদের অবণ্টিত ও দাবিহীন বোনাস ও রাইট শেয়ারের মূল্য ৭১০ কোটি টাকা। আর নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ প্রায় ৫৬০ কোটি টাকা। গত বছর এই তহবিলের পরিচালন খরচ মিটিয়ে আরও ৯ কোটি টাকা তহবিলে যুক্ত হয়েছে। এ বছর তারচেয়েও বেশি টাকা জমা হতে পারে।
তিনি বলেন, “সিএমএসএফ পুঁজিবাজারের জন্য অত্যন্ত জরুরি একটি উদ্ভাবন। এত দিন নানা কারণে অনেক বিনিয়োগকারীর প্রাপ্য লভ্যাংশ এবং বোনাস ও রাইট শেয়ার কোম্পানিগুলোর কাছে আটকে ছিল। সিএমএসএফ গঠিত হওয়ায় তাদের সেই লভ্যাংশ বুঝে পাওয়ার সহজ সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করেছে।”
“পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে তহবিলের আকার বাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। যেসব কোম্পানি গত ৩০ জুনের মধ্যে অবণ্টিত লভ্যাংশ ও শেয়ার তহবিলে স্থানান্তর করেনি, তাদের ২ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হবে।”
এই তহবিল থেকে এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার জন্য আইসিবির মাধ্যমে ২৭৫ কোটি টাকা বাজারে বিনিয়োগ করা হয়েছে জানিয়ে নজিবুর রহমান বলেন, “আগামী দিনের সুন্দর পুঁজিবাজারের জন্যই আমরা সবাই কাজ করছি। বাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের উন্নয়নে ইটিএফ চালু করতে কাজ করছি আমরা। ইতোমধ্যে আমাদের কাছে তিনটি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।”
দেশের শেয়ারবাজারে এক যুগের বেশি সময় ধরে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এমন বাজারে সিএমএসএফের উদ্যোগে নতুন মিউচ্যুয়াল ফান্ড নিয়ে আসার উদ্দেশ্য কি এবং সেই উদ্দেশ্য কতটা সফল হয়েছে—এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সমস্যা থাকবেই, কিন্তু হতাশ হলে চলবে না। আগামী দিনের সম্ভাবনার জন্য কাজ করে যেতে হবে।”
ব্যাংকগুলোর অবণ্টিত লভ্যাংশ সিএমএসএফে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক আপত্তি তুলেছিল। বিষয়টি এখন কী পর্যায়ে আছে? এক সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান্য নজিবুর রহমান বলেন, “আমি সচিব মহোদয়কে চিঠি দিয়েছিলাম, আপনার মন্ত্রণালয়ের এই প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আছে। তাদের কাছে সিএমএসএফের এ টাকাগুলো বা শেয়ারগুলো আছে ফেরত দেন। তার পরেই তারা কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা দেন। কোম্পানিগুলো সরাসরি এসে প্রত্যেকেই সেই শেয়ার ও টাকা ফেরত দেন।”
“আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তার প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলেছে- সিএমএসএফের রুলস ও নিয়মানুযায়ী তাদের হাতে শেয়ার এবং ক্যাশ দেন। রূপালী ব্যাংক এবং আইসিবিকে তারা নির্দেশ দেন। এটি হচ্ছে সিএমএসএফের কার্যকারিতা এবং বাস্তবতার প্রতি সরকারের সমর্থন।”
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে ব্যাংক একটা অবস্থান নিয়েছিল, এটা আমরা সবাই জানি। বাংলাদেশ ব্যাংক মানি মার্কেটের রেগুলেটর এবং বিএসইসি ক্যাপিটাল মার্কেটের রেগুলেটর। তারা এ বিষয়ে নিরন্তন আলাপ-আলোচনা করছেন। আমার ধারণা দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভালো অগ্রগতি হয়েছে।”
“বাংলাদেশ ব্যাংক কনসার্ন (সচেতন) ছিল যেন আমানতকারীদের কোনো ফান্ড এদিকে না আসে এবং বিএসইসির কনসার্ন ছিল বিনিয়োগকারীদের কোনো ফান্ড যেন ঝুলন্ত অবস্থায় না থাকে। বিষয়টি নিয়ে অগ্রগতি হচ্ছে।”
নজিবুর রহমান বলেন, “সিএমএসএফের বর্তমান যে আইনি কাঠামো আছে, তার আলোকে আমরা কাজ করছি। সেই কাজে কেউ বাধা দিচ্ছে না। সবাই বলছেন- এই ফান্ডটা খুবই দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএসইসির মধ্যে নিয়মিতভাবে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, পুরো পুঁজিবাজারের মঙ্গলের জন্য।”
নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর তার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা আমরা অনুপ্রাণিত হচ্ছি। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সবকিছু হবে,” সিএমএসএফ চেয়ারম্যান।
কমেন্ট