ডিএসইর লেনদেন আবার ৪০০ কোটি টাকার নিচে
সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৮০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা; যা চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। ফাইল ছবি
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন আবার ৪০০ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৮০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা; যা চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এর আগে সর্বশেষ চলতি বছরের ২৯ মার্চ ডিএসইতে সর্বনিম্ন ৩৮৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ গত ১৮ জুলাই ডিএসইতে লেনদেন ছিল ১ হাজার ৪৪ কোটি টাকা। এরপর লেনদেন একটু একটু করে কমতে থাকে। সর্বশেষ তা প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা কমে ৪০০ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে।
আর তাতেই উদ্বেগ বেড়েছে শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে। কারণ, লেনদেন কমে গেলে তাতে বিনিয়োগকারীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমনি ব্রোকারেজ হাউস থেকে শুরু করে স্টক এক্সচেঞ্জ, মার্চেন্ট ব্যাংক—সবারই আয় কমে যায়।
বাজারের এই দীর্ঘ মন্দায় হতাশ ও ক্ষুব্দ ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারী। বাজার শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? আদৌ কোনো দিন ভালো হবে কী না? এ সব উদ্বিগ্ন সবাই তারা।
বৃহস্পতিবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স নামমাত্র দশমিক ২৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৯৭ দশমিক ২৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক দশমিক ৯৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৬৮ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক দশমিক ১৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৪২ পয়েন্টে।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৩ দশমিক ১৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৮ হাজার ৫৯৯ দশমিক ৭৫ পয়েন্টে।
বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৩৮০ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিনের চেয়ে ৩৮ কোটি ২১ লাখ টাকা কম। বুধবার এই বাজারে ৪১৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।
আগের দিন মঙ্গলবারও ডিএসইতে ৪০০ কোটি টাকার কম লেনদেন হয়েছিল; ওই দিন ডিএসইতে লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৩৮৬ কোটি টাকা।
কোরবানির ঈদের পর থেকে প্রতিদিনই লেনদেন বাড়তে বাড়তে ১১ জুলাই ডিএসইতে লেনদেন হাজার কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করে এক হাজার ৮৪ কোটি টাকায় উঠেছিল।
কিন্তু একদিন পরই সেই লেনদেন এক ধাক্কায় প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে; ৬৪৫ কোটি ৬৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর পর থেকে লেনদেন কমতে কমতে ৪০০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৩২৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৭২টির, কমেছে ৮৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬৮টির দর।
অন্যদিকে সিএসইতে বৃহস্পতিবার মাত্র ৫ কোটি ৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বুধবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
লেনদেন হয়েছে ১৬৭টি কোম্পানির শেয়ারের দর। এর মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ২৬টির; কমেছে ৭৪টির। আর দর বদলায়নি অর্থাৎ বুধবারের দরেই লেনদেন হয়েছে ৬৭টির দর।
বাজারে কী হয়েছে-জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবু আহমেদ এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “বাজারে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজার ভালো হওয়ার কোনো কারণ নেই। বাজারে এখন নতুন কোনো সাধারণ বিনিয়োগকারী আসছে না। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের পরিচালক নিজেরাই চেষ্টা করছেন তাদের কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়াতে।”
এর সমাধান কোথায় এমন প্রশ্নে অধ্যাপক আবু আহমেদ দুষছেন, ফ্লোর প্রাইসকে। বলেন, “সিলেক্টিভ ৩০টি কোম্পানির দিকে তাকালে দেখা যায় ২৩টিই আছে ফ্লোরে, তাহলে বাজারে লেনদেন হবে কেমনে?”
বাজারে স্বাভাবিক ধারা ফিরিয়ে আনতে তার পরামর্শ, ফ্লোর প্রাইস তুলে দিতে হবে। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও বাজারমুখী হবেন বলে আশা এই পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞের।
পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সংগঠন পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “শেয়ারবাজারে যেভাবে দরপতন হচ্ছে তাতে প্রতিদিন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজি হারাচ্ছেন। বিনিয়োগ করা পুঁজি হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি।”
কমেন্ট