পুঁজিবাজারে ভালো আইপিও আসছে না: ডিএসই চেয়ারম্যান
সোমবার মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সঙ্গে এক মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে ভারত বা পাকিস্তানের অনুপাতে বেশি পরিমাণ মার্চেন্ট ব্যাংক থাকলেও সেই পরিমাণ ভালো কোম্পানি দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু।
সোমবার মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সঙ্গে এক মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ডিএসই ট্রেনিং একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সভায় দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, “এশিয়ার অন্যান্য স্টক এক্সচেঞ্জের তুলনায় বাংলাদেশে মার্চেন্ট ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি থাকা সত্ত্বেও গত কয়েক বছর ধরে পুঁজিবাজারে ভালো মানের আইপিও তালিকাভুক্তি হয়নি। বর্তমানে বাংলাদেশে ৬৮টি মার্চেন্ট ব্যাংক কাজ করছে। কিন্তু নতুন আইপিও আনার অনুপাত অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম।”
পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি বলেন, ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে ২১৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক আছে এবং সেখানে ২২১৩টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত। পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জে ১৩টি মার্চেন্ট ব্যাংক ৫২৪টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত করেছে। বোরসা মালয়েশিয়ার ও কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জে ইস্যু ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অনুযায়ী গড় তালিকাভুক্ত কোম্পানি যথাক্রমে ২৪ এবং ১২টি।
“ডিএসই গড় মাত্র ৫টি। আরও অধিক আইপিও আনতে আমাদের যৌথভাবে কাজ করতে হবে এবং ইস্যু ম্যানেজারদের সক্রিয় হতে হবে। এ বিষয়ে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা ডিএসই করবে এবং সুন্দর আগামীর পুঁজিবাজার গঠনে আমরা একসঙ্গে কাজ করব।”
স্টক এক্সচেঞ্জে নতুন নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি ত্বরান্বিত করা এবং পুঁজিবাজার উন্নয়নে মানসম্পন্ন আইপিও আনতে মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সঙ্গে তালিকাভুক্তিসংক্রান্ত এই সমন্বয় সভার আয়োজন করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড৷
মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, “দেশে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের জন্য আরও শক্তিশালী পুঁজিবাজার অপরিহার্য। আর উন্নয়ন ও উৎপাদন কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা এলে বিদেশি বিনিয়োগ পুঁজিবাজারমুখী হতে উৎসাহিত হয়। দেশের শেয়ারবাজার এখন অনেক পরিণত, তাই উদীয়মান পুঁজিবাজারকে উন্নয়নের অংশীদারত্বের ভিত্তিতে নিয়ে শেয়ারবাজারে জমে ওঠা বিপুল পরিমাণ মূলধনের একাংশ উৎপাদনশীল খাতে স্থানান্তর করে অর্থনীতির মূল স্রোতের সঙ্গে যুক্ত করা প্রয়োজন।”
“বাংলাদেশের অর্থনীতির সব সূচক ইতিবাচক থাকার কারণে পুঁজিবাজারের উন্নয়নের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আর এ জন্য পলিসি সাপোর্টের দিকে না তাকিয়ে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে পূর্বে আপনারা যেভাবে ভূমিকা রেখেছেন ভবিষ্যতেও আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ পুঁজিবাজারকে একটি শক্ত অবস্থানে নেবেে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।”
ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম সাইফুর রহমান মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মত বিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ডিএসইর প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ এবং মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ডিভিশনের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার ছামিউল ইসলাম।
প্রাইভেট বন্ড সম্পর্কে হাসান বাবু বলেন, “১৬ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা মূল্যের ৪২টি প্রাইভেট বন্ড এটিবি প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। ছোট পুঁজির প্রয়োজনে এসএমই প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কীভাবে পুঁজিবাজারমুখী করা যায় এবং কীভাবে পরামর্শ সেবা দেয়া যায় সেটা নিয়ে আমরা যৌথভাবে কাজ করতে চাই।”
কোম্পানি তালিকাভুক্তির প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের অনেক বাধা রয়েছে, যেমন-উদ্যোক্তাদের মানসিকতা, আমলাতন্ত্র, সঠিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়া, আইপিওর দীর্ঘসূত্রতা, বহুজাতিক কোম্পানির ক্ষেত্রে মূল দেশ থেকে তহবিল প্রাপ্তি, রাজস্ব গোপন করার প্রবণতা, নীতির অসামঞ্জস্যতা, কর বৈষম্য, ব্যাংক এবং নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সহজে ঋণ ইত্যাদি।”
“আজকের সভার মাধ্যমে আমাদের মূল প্রতিবন্ধকতাগুলো উঠে আসবে এবং সে অনুযায়ী আমরা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করব। এ ছাড়া অঞ্চলভিত্তিক রোড শো আয়োজনের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্ত করতে উৎসাহিত করব।”
জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদানের কথা প্রসঙ্গে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, বাজারের গভীরতা অর্জনে ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন স্থানীয় ও বহুজাতিক কোম্পানি দ্রুত তালিকাভুক্তকরণের কোনো বিকল্প নেই। আর এ বিষয়ে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে অবদান রাখতে হবে।
মার্চেন্ট ব্যাংকারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন “এ কাজগুলো করতে পারলে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। পুঁজিবাজারের সেতুবন্ধ হিসেবে আপনারা বাজারে বিনিয়োগকারী ও কোম্পানিগুলোকে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে প্রত্যাশিত পুঁজিবাজার গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।”
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে যখন প্রস্তাব দেয়া হয়, তখন কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হলে তাদের লাভ কী সে বিষয়ে জানতে চায়। কিন্তু মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো তাদের লাভের বিষয়ে বলতে পারে না। কারণ, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোই জানে না, তালিকাভুক্ত হলে কোম্পানিগুলোর কী লাভ হবে।
তিনি বলেন, “বাজারে তালিকাভুক্তি ও বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে অনেকবার কথা হয়েছে এবং তাদের বেশ কিছু বিষয় বোঝানো হয়েছে। দীর্ঘদিন বোঝানোর ফলে বিএসইসি অনেক কিছু আমলে নিলেও এনবিআর এখনো কোনো বিষয় আমলে নেয়নি। ফলে তালিকাভুক্ত হলে কোনো লাভ হবে না দেখে কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হচ্ছে না।”
কমেন্ট