বড় দরপতনে সপ্তাহ শুরু, হতাশ বিনিয়োগকারীরা

বড় দরপতনে সপ্তাহ শুরু, হতাশ বিনিয়োগকারীরা

চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার ডিএসইতে ৫৩৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবারের চেয়ে ১৬৫ কোটি টাকা কম।

বড় দরপতনে আরেকটি সপ্তাহ শুরু করল বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। গত সপ্তাহে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন ৭০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের কিছুটা হলেও আশা জাগিয়েছিল।

কিন্তু সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার ডিএসইতে লেনদেন ৫০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। মূল্যসূচকেরও বড় পতন হয়েছে। কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর। ফের হতাশা ফিরে এসেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

বেশ কিছুদিন খরা যাওয়ার পর গত সপ্তাহে দুই বাজারেই লেনদেন খানিকটা বেড়েছিল।

গত সপ্তাহের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার ডিএসইতে লেনদেন ৭০০ কোটির ঘর অতিক্রম করে; লেনদেন হয় ৭৩৪ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার। যা ছিল গত দেড় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

আগের দিন সোমবার এই বাজারে ৫৭৭ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এ হিসাবে এক দিনের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বাড়ে ১৫৭ কোটি টাকার বেশি।

৬ সেপ্টেম্বর বুধবার জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সরকারি ছুটি ছিল। ওই দিন পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ ছিল।

পরের দিন অর্থাৎ সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন কিছুটা কমে নেমে আসে ৭০০ কোটি ৭৮ লাখ ডলারে।

চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার ডিএসইতে ৫৩৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবারের চেয়ে ১৬৫ কোটি টাকা কম।

রোববার ডিএসইতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২১ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৮৫ দশমিক ৬৯ পয়েন্টে নেমে এসেছে।

অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৬৩ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১২৮ পয়েন্টে।

রোববার ডিএসইতে ৩০০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৩৩টির, কমেছে ১৩১টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৩৬টির দর।

অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৬ দশমিক ২৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৮ হাজার ৫৯৬ দশমিক ১৪ পয়েন্টে।

১২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার  লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

লেনদেন হয়েছে ১৭৩টি কোম্পানির শেয়ারের দর। এর মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ২৫টির; কমেছে ৭৯টির। আর দর বদলায়নি অর্থাৎ বৃহস্পতিবারের দরেই লেনদেন হয়েছে ৬৯টির দর।

দরপতনে সপ্তাহ শুরু হওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্দ ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারী। বাজার শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? আদৌ কোনো দিন ভালো হবে কী না? এ সব উদ্বিগ্ন সবাই।

বাজারে কী হয়েছে-জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবু আহমেদ এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “বাজারে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজার ভালো হওয়ার কোনো কারণ নেই। বাজারে এখন নতুন কোনো সাধারণ বিনিয়োগকারী আসছে না। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের পরিচালক নিজেরাই চেষ্টা করছেন তাদের কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়াতে।”

এর সমাধান কোথায় এমন প্রশ্নে অধ্যাপক আবু আহমেদ দুষছেন, ফ্লোর প্রাইসকে। বলেন, “সিলেক্টিভ ৩০টি কোম্পানির দিকে তাকালে দেখা যায় ২৩টিই আছে ফ্লোরে, তাহলে বাজারে লেনদেন হবে কেমনে?”

বাজারে স্বাভাবিক ধারা ফিরিয়ে আনতে তার পরামর্শ, ফ্লোর প্রাইস তুলে দিতে হবে। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও বাজারমুখী হবেন বলে আশা এই পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞের।

পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সংগঠন পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “গত সপ্তাহে লেদনদেন ৭০০ কোটি টাকা ছাড়ানোয় আমরা কিছুটা আশান্বিত হয়েছিলাম। কিন্তু বড় দরপতনে নতুন সপ্তাহ শুরু হলো। লেনদেনও ৫০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে।”

তিনি বলেন, “দীর্ঘদিনের মন্দায় প্রতিদিন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজি হারাচ্ছেন। বিনিয়োগ করা পুঁজি হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। আমাদের দেখার কেউ নেই।”

ডিএসইতে লেনদেন ৭০০ কোটি টাকা ছাড়াল পরবর্তী

ডিএসইতে লেনদেন ৭০০ কোটি টাকা ছাড়াল

কমেন্ট