বাংলাদেশে মন্দা, বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা শেয়ারবাজার এখন পাকিস্তানে

বাংলাদেশে মন্দা, বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা শেয়ারবাজার এখন পাকিস্তানে

শুক্রবার পাকিস্তানের কেএসই-১০০ সূচক দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ হাজার ৬৭৩ পয়েন্টে পৌঁছেছে। ফলে ব্লুমবার্গ অনুসরণ করে বিশ্বের এমন ৯০টির বেশি সূচকের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা হয়েছে দেশটির শেয়ারবাজারের সূচক। ফাইল ছবি

বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নিয়ে কোনো সুখবর নেই; দীর্ঘদিন ধরে মন্দা চলছে। ভালো হওয়ার কোনো লক্ষণও নেই। ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারী হতাশ ও ক্ষুব্দ।

কিন্তু অর্থনীতিতে বাংলাদেশের চেয়েও সংকটে থাকা পাকিস্তানের পুঁজিবাজার চড়ছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মূল্যসূচক।

ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি মুদ্রা রুপির মান শক্তিশালী হচ্ছে। এতে দেশটির মূল্যস্ফীতিও কমে আসবে। পাকিস্তানের অর্থনীতি নিয়ে বর্তমানে এমন আশাবাদ তৈরি হয়েছে।

আর এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের পুঁজিবাজারের প্রধান সূচক বেশ কিছুদিন ধরে ভালো অবস্থার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। সর্বশেষ শুক্রবার তা বৃদ্ধি পেয়ে গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার পাকিস্তানের কেএসই-১০০ সূচক দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ হাজার ৬৭৩ পয়েন্টে পৌঁছেছে। ফলে ব্লুমবার্গ অনুসরণ করে বিশ্বের এমন ৯০টির বেশি সূচকের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা হয়েছে দেশটির শেয়ারবাজারের সূচক।

আলফালাহ সিএলএসএ সিকিউরিটিজ লিমিটেডের আন্তর্জাতিক বিক্রয়প্রধান ফয়সাল বিলওয়ানি বলেছেন, পাকিস্তানি রুপির সাম্প্রতিক পুনরুদ্ধার, সেকেন্ডারি ঋণের বাজারে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির বর্তমান অবস্থা—তিনটি বিষয়ই বিনিয়োগের জন্য নতুন তহবিল ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। ছয় বছর পর কেএসই-১০০ সূচক ৫০ হাজার পয়েন্টের ওপরে যাওয়ায় এই বাজার সম্ভবত ইতিবাচক থাকবে।

খেলাপি হওয়া এড়াতে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে পাকিস্তান। চুক্তির আওতায় পাকিস্তানকে ৩০০ কোটি ডলার ঋণসহায়তা দেবে আইএমএফ। এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর পাকিস্তানে শেয়ারের দর ২৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতেও ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির মান ছিল অনেক কম। সে সময় প্রতি ডলারের বিপরীতে দেশটির মুদ্রার মান ছিল ৩০৭ রুপি। সেই অবস্থা থেকে রুপির মান প্রায় ১০ শতাংশ পুনরুদ্ধার হয়েছে।

পাশাপাশি ব্লুমবার্গ যেসব মুদ্রার মান ওঠানামা অনুসরণ করে, তাদের মধ্যে দেড় মাসের ব্যবধানে অন্যতম শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছেছে পাকিস্তানি রুপি। এসব বিষয় শেয়ারবাজারের ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে।

তবে মুদ্রা ও শেয়ারবাজারের ইতিবাচক পরিবর্তন সত্ত্বেও পাকিস্তানের অর্থনীতি অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে বলে মনে করেন ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্সের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অর্থনীতিবিদ অঙ্কুর শুক্লা।

তিনি বলেন, “পাকিস্তানে বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। এ ছাড়া আইএমএফের শর্ত মেনে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করেছে ইসলামাবাদ। ফলে বছরের বাকি সময়ে মূল্যস্ফীতি চড়াই থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।”

পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখনো অনেক কম। এ ছাড়া ৭ অক্টোবর থেকে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম আবারও বাড়তে শুরু করেছে।

এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে পাকিস্তানের শেয়ারবাজারের অবস্থা আবার খারাপ হতে পারে বলে জানান এশিয়া ফ্রন্টিয়ার ক্যাপিটাল লিমিটেডের ফান্ড ম্যানেজার রুচির দেশাই।

আগামী বছরের জানুয়ারির শেষ দিকে পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। এই সময় দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগ ও আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে।

আইএমএফের ঋণের কিস্তি ও নতুন বিনিয়োগ আসা অব্যাহত থাকলে শেয়ারবাজারেও এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে।

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরে মন্দা চলছে। গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০ পয়েন্টের মত বেড়েছে।

লেনদেন হয়েছে ৫৫৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৭ হাজার টাকার শেয়ার। তার আগের সপ্তাহে লেনদেন ৪০০ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছিল। সূচকও বেশ খানিকটা কমেছিল।

পুঁজিবাজারে বড় দরপতন, লেনদেন তলানিতে পরবর্তী

পুঁজিবাজারে বড় দরপতন, লেনদেন তলানিতে

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর