ভোটের পর চাঙা পুঁজিবাজার, ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়েছে ১০০ পয়েন্ট
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ভোটের আগে ও পরে ভয়-আতঙ্ক কেটে যাওয়ায় বাজার ভালো দিকে যাচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে আরও ভালো হবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
নির্বাচনের পর ইতিবাচক ধারায় ফিরছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বাড়ছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসছে। সব মিলিয়ে পুঁজিবাজারে চাঙাভাব দেখা দিয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ভোটের আগে ও পরে ভয়-আতঙ্ক কেটে যাওয়ায় বাজার ভালো দিকে যাচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে আরও ভালো হবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
ভোট গ্রহণের পর প্রথম কার্যদিবস ৮ জানুয়ারি দেশের দুই বাজারেই মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেন বেড়েছিল। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৫ পয়েন্টের বেশি বেড়েছিল। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বাড়ে ৬০ পয়েন্টের মত। গত কয়েক মাসের মধ্যে ওটিই ছিল দুই বাজারে সূচকের সর্বোচ্চ উত্থান।
পরের দিন ৯ জানুয়ারি অবশ্য ডিএসইএক্স সামান্য দেড় পয়েন্টের মত কমেছিল। তবে লেনদেন বেড়েছিল। এর পর থেকেই প্রতিদিনই দুই বাজারে মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেন বেড়েছে।
সবশেষ মঙ্গলবার প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৩ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট বেড়ে ৬৩৩১ দশমিক ৬১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে ৮০০ কোটি ৮৪ লাখ টাকায় উঠেছে। এই অঙ্ক আগের দিনের চেয়ে ১২৫ কোটি টাকা বেশি; সোমবার এই বাজারে ৬৭৪ কোটি ২১ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে শেষ কার্যদিবস ৪ জানুয়ারি ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৬ হাজার ২৪০ পয়েন্ট। হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, ভোটের পর ডিএসইর এই সূচক প্রায় ১০০ পয়েন্ট বেড়েছে।
লেনদেন বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। ৪ জানুয়ারি ডিএসইতে লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৪০০ কোটি টাকার কম।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনকে ঘিরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের শঙ্কা ছিল। কিন্তু বড় ধরনের কোনো সংঘাত ছাড়া নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা কিছুটা শঙ্কামুক্ত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মত প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে নবযাত্রা শুরু করেছেন। বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে দেশ আরও এগিয়ে যাবে—এ আশায় পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আস্থা ফিরে এসেছে। সে কারণেই বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরছে বলে জানিয়েছেন তারা।
নির্বাচনের পর কয়েক দিনের বাজারের ইতিবাচক ধারায় সন্তোষজনক প্রকাশ করে ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “নির্বাচন নিয়ে যে ভয়-আতঙ্ক ছিল সেটা কেটে গেছে; শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট শেষ হয়েছে। শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা দায়িত্ব পালন শুরু করে দিয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমানোসহ অর্থনীতিতে যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে, তা মোকাবেলার অঙ্গীকার করেছেন। এর প্রভাব পুঁজিবাজারেও পড়তে শুরু করেছে।”
“রাজনীতি নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ছিল তা আর নেই। সে কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে; বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে।”
আগামী দিনগুলোতে বাজার ভালো হবে বলে আশার কথা শোনার এই বাজার বিশ্লেষক।
শাকিল রিজভী বলেন, “বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ছে, তাতে সূচক বেড়েছে। আর সূচকের এ উত্থানে ব্যাংক খাতের কিছু শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির বড় প্রভাব রয়েছে। শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক খাতের শেয়ারের দামে কোনো নড়াচড়া ছিল না। কিন্তু নির্বাচনের পর প্রথম কার্যদিবস থেকেই ব্যাংকের শেয়ারের পাশাপাশি মৌলভিত্তিক অন্যান্য কোম্পানির শেয়ারের দরও বাড়ছে। এটি বাজারের জন্য ইতিবাচক।”
“যদিও বাজারে চ্যালেঞ্জ আছে। সুদের হার বেড়েই চলেছে। বাজারে ডলার সংকট আছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা এখনও লাগছে। সব মিলিয়ে দুশ্চিন্তা এখনও পুরোপুরি কাটেনি,” বলেন শাকিল রিজভী।
মঙ্গলবারের বাজার পরিস্থিতি
চলতি সপ্তাহের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৩ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট বেড়ে ৬৩৩১ দশমিক ৬১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচক ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৭৮২ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ২ হাজার ১২৯ পয়েন্টে।
লেনদেন ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে ৮০০ কোটি ৮৪ লাখ টাকায় উঠেছে। এই অঙ্ক আগের দিনের চেয়ে ১২৫ কোটি টাকা বেশি; সোমবার এই বাজারে ৬৭৪ কোটি ২১ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল।
মঙ্গলবার ডিএসইতে ৩৪৯টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৯৭টির, কমেছে ৭৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭৩টির দর।
অপর বাজার সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৯ দশমিক ০৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৮ হাজার ৭৩৮ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে।
২০৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৭৫টির, কমেছে ৩৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৮৫টির দর।
কমেন্ট