‘ফ্লোর প্রাইস’ ওঠার পর ধস পুঁজিবাজারে

‘ফ্লোর প্রাইস’ ওঠার পর ধস পুঁজিবাজারে

রোববার ডিএসইতে ৩৮৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৫৪টির, কমেছে ২৯৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬ টির।

শেয়ারের বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দর বা ‘ফ্লোর প্রাইস’তুলে নেওয়ার পর প্রথম কার্যদিবসে বড় দরপতন হয়েছে বাংলাদেরে পুঁজিবাজারে। মূল্যসূচকের পাশপাশি লেনদেনও কমেছে; কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর।

দেড় বছর পর গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে বহুল প্রত্যাশিত ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে বহাল আছে অনেকটা বড় মূলধনি ৩৫টি কোম্পানির ‘ফ্লোর প্রাইস’।

বেশিরভাগ শেয়ারের ‘ফ্লোর প্রাইস’ তুলে দেওয়ার পর সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার লেনদেনের শুরুতেই বড় ধস নামে দেশের দুই পুঁজিবাজারে। ২০ মিনিট লেনদেনের পর দেশের প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২০০ পয়েন্টের বেশি কমে যায়। পরে অবশ্য তা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। শেষ পর্যন্ত প্রায় ১০০ পয়েন্ট কমার মধ্য দিয়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে।

ডিএসইএক্স সূচক ৯৬ দশমিক ৫০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫২ শতাংশ কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৪০ পয়েন্টে। অন্য সূচকের মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ১৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৭৪ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ০৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৩৭ পয়েন্টে।

রোববার ডিএসইতে ৩৮৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৫৪টির, কমেছে ২৯৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬ টির।

৫ হাজার ৮৮০ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৬৩৭ কোটি ১১ লাখ টাকা।

তবে অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪৭৬ দশমিক ৯২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৮ হাজার ৩২৯ দশমিক ৪৪ পয়েন্টে।

লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা।

২১৮টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪১টির, কমেছে ১৫৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টির দর।

বাজার সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন পর মূল্যস্তরে ওঠে যাওয়ার পর রোববার প্রথম দিনের লেনদেনে সূচক কমে যাওয়া অপ্রত্যাশিত নয়। তবে দিন যত গড়াবে পতনের ধারা ততই কমে আসবে এবং বাজার স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে।

পুঁজিবাজারে এখন তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ৩৯২টি। এর মধ্যে ৩৫৭টির শেয়ারদরের সর্বনিম্ন সীমা তুলে নিয়েছে বিএসইসি। তবে ৩৫ কোম্পানিতে ফ্লোর বহাল রাখা হয়েছে।

সর্বনিম্ন দর বেঁধে রাখায় অনেকে এতদিন শেয়ার বিক্রি করতে পারেননি। ফলে ফ্লোর প্রাইস ওঠার সুযোগে অনেকেই শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন। সে কারণে ফ্লোর প্রাইস ওঠার প্রথম দিন যে দরপতন হবে, তা অনেকটা অনুমিতই ছিল।

এসব কোম্পানির শেয়ারদর ওঠানামার সার্কিট ব্রেকার আগের মতই ১০ শতাংশই থাকছে। অর্থাৎ, কোনো শেয়ারের দাম ১০ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না।

করোনাভাইরাস মহামারীর সময় শেয়ারদর ক্রমশ কমতে থাকায় ২০২০ সালের ১৯ মার্চ বাংলাদেশে পুঁজিবাজারে প্রথমবারের মত ফ্লোরপ্রাইস বেঁধে দেওয়া হয়।

ওই বছরের জুন থেকে প্রথমে বীমা খাত ও পরে আরো কিছু খাতের শেয়ারদর বাড়তে থাকলে ধাপে ধাপে ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে ফ্লোর প্রাইস তুলে নিয়েছিল কমিশন।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষে ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর আতঙ্কে আবার পুঁজিবাজারে দরপতন শুরু হলে দ্বিতীয়বারের মত ফ্লোর প্রাইস দেওয়া হয় ২৮ জুলাই।

বিনিয়োগকারীদের একাংশের দাবির মুখে একই বছরের ডিসেম্বরে ১৬৯ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে শেয়ারের দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ১ শতাংশ বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর এমন কোম্পানিও দেখা যায়, তার দর টানা ৪০ কর্মদিবস এক শতাংশের কাছাকাছি কমেছে। পরে ২০২৩ সালের মার্চে আবার এসব কোম্পানিতে সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেওয়া হয়।

এরপর থেকে সূচক মোটামুটি একটি বৃত্তে ঘুরপাক খেলেও শেয়ারের লেনদেন একেবারেই কমে আসে। প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা অর্ডার বসিয়ে শেয়ার বিক্রি করতে পারছিলেন না। লেনদেনও কমে আসে অনেকটাই।

ওই অবস্থায় ফ্লোর তুলে স্টক ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশনসহ বড় বিনিয়োগকারীরা ফ্লোর তুলে দেওয়ার অনুরোধ জানায় বিএসইসিকে। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কোনো ‘ঝুঁকি’ নিতে চায়নি বিএসইসি।

বাজার বিশ্লেষক ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন “সর্বনিম্ন মূল্যস্তরের কারণে অনেকে দীর্ঘদিন শেয়ার বিক্রি করতে পারেননি। ফলে মূল্যস্তরে উঠে যাওয়ার প্রথম দিনে যাদের নগদ অর্থের বেশি প্রয়োজন ছিল, তাদের অনেকেই শেয়ার বিক্রি করে দেন।

“এ ছাড়া যারা ঋণ করে শেয়ার কিনেছেন, তাদের অনেকে আজ এক শেয়ার বিক্রি করে আরেক শেয়ার কিনছেন। এতদিন মূল্যস্তরের কারণে শেয়ার লেনদেন হয়েছে কম। ফলে আয় তেমন একটা না হলেও তাদের সুদ গুনতে হচ্ছিল। সে কারণে এই শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা আজ শেয়ার বিক্রি করেছেন। এতে বাজারে সূচকের পতন হয়েছে।”

এই প্রবণতা সাময়িক বলে মনে করেন শাকিল রিজভী। আশার কথা শুনিয়ে বলেন, “বাজার শিগগিরই স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসবে।”

বেশিরভাগ শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস উঠে গেল পরবর্তী

বেশিরভাগ শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস উঠে গেল

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর