পুঁজিবাজারে চাঙাভাব, ৮ মাসে সর্বোচ্চ লেনদেন
মঙ্গলবার ডিএসইতে ১ হাজার ১৭৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেন আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত বছরের ৫ জুন ডিএসইতে ১ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল।
ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর তুলে নেওয়ার পর চাঙাভাবে ফিরছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। সোমবারের পর মঙ্গলবারও মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বেড়েছে; বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর। দুই বাজারেই একই চিত্র দেখা গেছে।
দেড় বছর পর দুই দফায় ১২টি ছাড়া সব কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তুলে নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। প্রথম দফায় গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ৩৫টি বাদে সব কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয় বিএসইসি।
সে মোতাবেক চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার থেকে লেনদেন শুরু হয়। লেনদেনের শুরুতেই বাজারে বড় ধস নামে। এক পর্যায়ে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ২৫০ পয়েন্ট পড়ে যায়। তবে শেষ পর্যন্ত ৯৬ পয়েন্ট কমার মধ্য দিয়ে ওই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
তবে পরের দিন সোমবারই বাজার ঘুরে দাঁড়ায়। সকাল ১০টায় লেনদেন শুরু হয়। সূচক ৬ হাজার ২৪০ পয়েন্টে থাকা অবস্থায় ডিএসইএক্স লেনদেন শুরুর পরপরই প্রায় ৫০ পয়েন্ট কমে যায়। তবে এর পর থেকেই তা আবার বাড়তে শুরু করে।
এক পর্যায়ে বেলা পৌনে ১১টার দিকে এই সূচক ৬ হাজার ২৫৬ পয়েন্টে ওঠে, যা আগের দিনের চেয়ে ১৬ পয়েন্ট বেশি। এরপর আবার কিছুটা কমে যায় সূচক। ১১টার পর সূচক আবারও কিছুটা বাড়ে। বেলা পৌনে ১২টার দিকে সূচক আবারও ৬ হাজার ২৫৬ পয়েন্টে ওঠে। এরপর সামান্য কমে বেলা ১২টায় সূচক ৬ হাজার ২৫০ পয়েন্টে অবস্থান করে; যা ছিল আগের দিনের চেয়ে ১০ পয়েন্ট বেশি।
শেষ পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪ দশমিক ০৫ পয়েন্ট বেড়ে ওই দিনের লেনদেন শেষ হয়। সূচকটি অবস্থান করে ৬ হাজার ২৫৪ দশমিক ৩০ পয়েন্টে।
সোমবার লেনদেন শেষে আরও ২৩টি কোম্পানির ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় বিএসইসি। তাতে পুঁজিবাজারে এখন ফ্লোর প্রাইস আরোপ রয়েছে মাত্র ১২টি কোম্পানির শেয়ারের ওপর।
দ্বিতীয় ধাপে ২৩ কোম্পানির শেয়ার দরের সর্বনিম্ন সীমা বা ‘ফ্লোর প্রাইস’তুলে দেওয়ার পর সূচক বৃদ্ধির ধারা ধরে রেখেছে পুঁজিবাজার।
সপ্তাহের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার ডিএসইএক্স ২২ পয়েন্ট বাড়ার মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। সূচক দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৭৬ দশমিক ২৫ পয়েন্ট। শুরুতে সূচক কিছুটা পড়ে গেলেও দ্রুত সামলে উঠে ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। বেলা সোয়া ১১টায় সূচক পৌঁছায় ৬ হাজার ২৯৯ পয়েন্টে।
পরের সোয়া এক ঘণ্টায় সূচক কিছুটা কমলেও সোয়া ১২টার পর আবার বাড়তে শুরু করে। সাড়ে ১২টায় ডিএসইএক্স ৬ হাজার ২৭৮ পয়েন্টে পৌঁছায়, যা আগের দিনের চেয়ে ২৩ পয়েন্ট বেশি। শেষ শেষ পর্যন্ত ২২ পয়েন্ট পয়েন্ট বাড়ার মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়।
মঙ্গলবার অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইর শরীয়াহ্ সূচক ডিএসইএস ৩ দশমিক ৪০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৮৪ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ১০ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৫৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
১ হাজার ১৭৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেন আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত বছরের ৫ জুন ডিএসইতে ১ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল।
আগের দিন সোমবার লেনদেনে অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৪২ কোটি ২২ লাখ টাকা।
এদিন ডিএসইতে মোট ৩৯৩ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বৃদ্ধি পেয়েছে ১২৬টি কোম্পানির। বাকি ২২৭টি কোম্পানির শেয়ারের দাম আজ কমেছে। ৪০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর আজ অপরিবর্তিত রয়েছে।
তবে অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৭৬ দশমিক ৯১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৮ হাজার ১৫৮ দশমিক ৫৮ পয়েন্টে।
লেনদেন হয়েছে ২৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সোমবার লেনদেন হয়েছিল ২১ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
২৭৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১০৫টির, কমেছে ১৫০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টির দর।
বাজার বিশ্লেষক ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন “সর্বনিম্ন মূল্যস্তর তুলে দেওয়া নিয়ে যে ভয়-আতঙ্ক ছিল তা কেটে গেছে। এখন বাজার ভালোর দিকে যাবে বলেই মনে হচ্ছে। তার লক্ষ্যণও দেখা যাচ্ছে। মূল্যসূচকের পাশপাশি টানা দুই দিন লেনদেনও বেশ বেড়েছে।””
তিনি বলেন, “এতদিন মূল্যস্তরের কারণে শেয়ার লেনদেন হয়েছে কম। এখন বাড়ছে। এটা ইতিবাচক। বাজার স্বাভাবিক ধারায় ফিরবে বলে মনে হচ্ছে।”
কমেন্ট