ফের দরপতনের ধারায় পুঁজিবাজার

ফের দরপতনের ধারায় পুঁজিবাজার

বুধবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছিল ৫০ পয়েন্ট। বৃহস্পতিবার কমেছে আরও বেশি, ৭০ দশমিক ২৪ পয়েন্ট; সূচক নেমে এসেছে ৬ হাজার ১৫৬ দশমিক ৪০ পয়েন্টে।

ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দর তুলে নেওয়ার পর দুই দিন ভালোর ইঙ্গিত দিলেও ফের দরপতনের ধারায় ফিরেছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। বুধবারের পর সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবারও বড় দরপতন হয়েছে। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও কমেছে। কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর। দুই বাজারেই একই চিত্র দেখা গেছে।

বুধবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছিল ৫০ পয়েন্ট। বৃহস্পতিবার কমেছে আরও বেশি, ৭০ দশমিক ২৪ পয়েন্ট; সূচক নেমে এসেছে ৬ হাজার ১৫৬ দশমিক ৪০ পয়েন্টে। যা দেড় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বুধবার কমেছিল ৩৪৭ দশমিক ২৭ পয়েন্ট। বৃহস্পতিবার আরও ২৫৯ দশমিক ১৮ পয়েন্ট হারিয়ে ১৭ হাজার ৫৫২দশমিক ১২ পয়েন্টে নেমে এসেছে।

বাজারের এই পতনে ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ফের হতাশা ফিরে এসেছে। তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ভয় বা আতঙ্কের কিছু নেই। বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে।

৩৫টি কোম্পানিকে হাতে রেখে বাকিগুলোর শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পর সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার বড় দরপতনের পর দুই দিন বাজারে সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখি।

মঙ্গলবার থেকে আরো ২৩টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পরও সূচকের উত্থানে আশা সঞ্চার হয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। তবে বুধবার ফের দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মন খারাপ হয়ে যায়।

রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক পড়েছিল ৯৬ পয়েন্ট, যদিও লেনদেন শুরু হয়েছিল ২১৬ পয়েন্ট পতনের মধ্য দিয়ে। সেখান থেকে ১২০ পয়েন্ট পুনরুদ্ধারের পর সোমবার ১৪ পয়েন্ট এবং মঙ্গলবার ২১ পয়েন্ট উত্থানের পাশাপাশি টানা দুই দিন হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছিল।

বুধবারও লেনদেন হয় এক হাজার কোটি টাকার বেশি। গত বছরের জুনের প্রথম সপ্তাহের পর এই প্রথম টানা তিন দিন এই চিত্র দেখা যায়। ওইদিন ৫০ পয়েন্ট সূচকের পতনকে স্বাভাবিক ‘মূল্য সংশোধন’ভেবে স্বাভাবিক মনে করেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বৃহস্পতিবারের আবার বড় দরপতনে স্বস্তিতে নেই তারা।

রেজাউল করিম নামের একজন ছোট বিনিয়োগকারী এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “অনেক দিন পর হাউজে যাওয়া শুরু করেছিলাম। শেয়ার কেনা-বেচা করছিলাম। আশা করছিলাম ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠবো। কিন্তু পর পর দুই দিনের বড় পতনে হতাশ হয়েছি। জানি না আগামী দিনগুলো বাজার কেমন যাবে।”

তবে ‘ভয়ের কিছু নেই’ বলে আশ্বস্ত করেছেন বাজার বিশ্লেষক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী।

এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “এটা ঠিক যে, পর পর দুই দিন বাজার পড়েছে। তার আগে কিন্তু দুই দিন বেড়েছে। লেনদেনের গতি কিন্তু বেশ বেড়েছে। লেনদেন বাড়াকে আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। আমি মনে করি বাজার ঠিক আছে। ফ্লোর পাইস উঠে যাওয়ার পর বিক্রির চাপ বেড়েছে। সে কারণে মূল্যসূচক কমেছে।”

“তবে আমি মনে করি বাজার এখন ঠিক হয়ে যাবে যাবে; ভালোর দিকে যাবে। বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরতে হবে। দেখেশুনে বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের আমি বলবো—মূল্যসূচকের দিকে না তাকিয়ে শেয়ারের গতিপ্রকৃতি দেখে বিনিয়োগ করুন। আতঙ্কিত হয়ে কোনো শেয়ার বিক্রি করে দেবেন না। হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ভুল সিদ্ধান্ত হবে।”

বৃহস্পতিবারের বাজার

সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইতে অধিংকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭০ দশমিক ২৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ১৫৬ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ২০ দশমিক ৬১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৫২ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২৪ দশমিক ৫২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১১৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

৮৭০ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন বুধবার লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১৭৩ কোটি ২১ লাখ টাকা।

বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৮৯ টি কোম্পানির। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৮৫টির, কমেছে ২৮২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টির দর।

অন্যদিকে সিএসই সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৫৯ দশমিক ১৮৬ পয়েন্ট কমে ১৭ হাজার ৫৫২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

লেনদেন হওয়া ২৬০ টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬০টির, কমেছে ১৭৮ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টির দর।

লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। বুধবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

পুঁজিবাজারে বড় দরপতন পরবর্তী

পুঁজিবাজারে বড় দরপতন

কমেন্ট