চাঙা পুঁজিবাজার, দুই দিনে সূচক বেড়েছে ৭১ পয়েন্ট

চাঙা পুঁজিবাজার, দুই দিনে সূচক বেড়েছে ৭১ পয়েন্ট

সপ্তাহের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫২ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ১৫০ দশমিক ২১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দর তুলে নেওয়ার ধাক্কা কেটে গেছে; চাঙাভাবে ফিরছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। সোমবারের পর মঙ্গলবারও মূল্যসূচক বেড়েছে বাজারে। বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর। লেনদেনও বেড়েছে। দুই বাজারেই একই চিত্র দেখা গেছে।

সপ্তাহের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫২ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ১৫০ দশমিক ২১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৯৩৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বেশি। সোমবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৬৬২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৭৭ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বেড়ে ১৭ হাজার ৪৪২ দশমিক ৭৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সোমবার এই বাজারে ১৩ কোটি ৬ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল।

টানা তিন কার্যদিবস কমার পর চলতি সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার ডিএসইএক্স ১৮ দশমিক ১৬ পয়েন্ট বেড়েছিল। সিএএসপিআই বেড়েছিল ২১ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট।

হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এই দুই দিনে (সোম ও মঙ্গলবার) ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭১ পয়েন্টের বেশি বেড়েছে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২০০ পয়েন্টের মতো।

ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দর তুলে নেওয়ার পর দুই দিন ভালোর ইঙ্গিত দিলেও ফের দরপতন শুরু হয় বাজারে। টানা তিন কার্যদিবস দুই বাজারেই মূল্যসূচকের বড় পতন হয়। এই তিন দিনে ডিএসইএক্স কমে ২০০ পয়েন্টের মতো। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্র দেখা যায়।

৩৫টি কোম্পানিকে হাতে রেখে বাকিগুলোর শেয়ারের সর্বনিম্ন দর তুলে দেওয়ার পর গত সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার বড় দরপতনের পর দুই দিন (সোম ও মঙ্গলবার) বাজারে সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখি। ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার আলো দেখা দিয়েছিল। সবাই ভেবেছিলেন বাজার বোধ হয় এবার ঘুরে দাঁড়াবে।

কিন্তু পরের দিন (গত সপ্তাহের বুধ ও বৃহস্পতিবার এবং চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার) বাজারে বড় পতন হয়। ফের হতাশ হয়ে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। সোম ও মঙ্গলবার বাজারে চাঙাভাব দেখা যাওয়ায় আবার আশায় বুক বাঁধছেন তারা।

এনামুল হক নামের একজন ছোট বিনিয়োগকারী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ফ্লোর পাইস উঠে যাওয়ার পর বাজার যেভাবে পড়তে শুরু করেছিল, ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তবে দুই দিন ধরে বাজার বাড়ায় এখন কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি। জানি না আগামী দিনগুলো বাজার কেমন যাবে।”

বাজার বিশ্লেষক ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন “সর্বনিম্ন মূল্যস্তরের কারণে অনেকে দীর্ঘদিন শেয়ার বিক্রি করতে পারেননি। ফলে মূল্যস্তরে উঠে যাওয়ায় যাদের নগদ অর্থের বেশি প্রয়োজন ছিল, তাদের অনেকেই শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছিলেন। সে কারণে বাজার সমন্বয় হয়েছে। এখন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। বাজার এখন ভালো হবে।”

দেড় বছর পর গত ১৮ জানুয়ারি পুঁজিবাজারে বেশিরভাগ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয় বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে বহাল রাখা হয় অনেকটা বড় মূলধনি ৩৫টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস।

বেশিরভাগ শেয়ার থেকে বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দর তুলে নেওয়ার পর প্রথম কার্যদিবস ২১ জানুয়ারি (গত সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার) দুই পুঁজিবাজারেই মূল্যসূচকের বড় পতন হয়, কমে যায় লেনদেনও। তবে পরের দুই দিন (সোম ও মঙ্গলবার) বাজারে চাঙাভাব দেখা যায়। লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে প্রায় ১২শ’ কোটি টাকায় ওঠে।

২৩ জানুয়ারি থেকে আরো ২৩টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পরও সূচকের উত্থানে আশা সঞ্চার হয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। তবে বুধবার ফের দরপতনে বিনিয়োগকারীদের আর্থিক লোকসান বেড়েছে।

বাজারে এখন ১২টি ছাড়া সব কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তুলে দিয়েছে বিএসইসি।

‘বাজার ভালো হবে’ মন্তব্য করে ডিশাকিল রিজভী বলেন, “ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর টানা তিন দিন বাজারে বড় পতন হয়। তার আগে কিন্তু দুই দিন বেড়েছিল। লেনদেনের গতি ভালো। লেনদেন বাড়াকে আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। আমি মনে করি বাজার ঠিক আছে। ফ্লোর পাইস উঠে যাওয়ার পর বিক্রির চাপ বেড়েছিল। সে কারণে মূল্যসূচক কমেছিল।”

“আমি মনে করি বাজার এখন ঠিক হয়ে যাবে যাবে; ভালোর দিকে যাবে। বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরতে হবে। দেখেশুনে বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের আমি বলবো—মূল্যসূচকের দিকে না তাকিয়ে শেয়ারের গতিপ্রকৃতি দেখে বিনিয়োগ করুন। আতঙ্কিত হয়ে কোনো শেয়ার বিক্রি করে দেবেন না। হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ভুল সিদ্ধান্ত হবে।”

মঙ্গলবারের বাজারের হালচাল

সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার ডিএসইতে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫২ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৬ হাজার ১৫০ পয়েন্টে।

অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ১২ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৫৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৭ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১১১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

ডিএসইতে ৯৩৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর আগের কার্যদিবস সোমবার লেনদেন হয়েছিলো ৬৬২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

মঙ্গলবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৯৪টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২৫৫টির, কমেছে ৯২ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৭টির দর।

অন্যদিকে, দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৭৭ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন শেষ হয়েছে ১৭ হাজার ৪৪২ পয়েন্টে।

এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৭২টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৭১টির; কমেছে ৭৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫টির দর।

লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

শিগগিরই ডলার সংকট কেটে যাবে: সালমান রহমান পরবর্তী

শিগগিরই ডলার সংকট কেটে যাবে: সালমান রহমান

কমেন্ট