পুঁজিবাজার: বড় উল্লম্ফনে সপ্তাহ শেষ
আর এর মধ্য দিয়ে ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দর তুলে নেওয়ার ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। লেনদেনের পাশাপাশি প্রতিদিনই বাড়ছে মূলসূচক। টানা চার দিন সূচক বেড়ে সপ্তাহ শেষ হয়েছে। অনেক দিন পর ভালো একটা সপ্তাহ পার করল পুঁজিবাজার।
আর এর মধ্য দিয়ে ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬০ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট বা ১ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ২১৩ দশমিক ৯৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১ হাজার ১২২ কোটি টাকা। যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বেশি। বুধবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৯৮০ কোটি টাকা।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৯৮ দশমিক ১২ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়ে ১৭ হাজার ৬২৬ দশমিক ১২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। লেনদেন হয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। বুধবার এই বাজারে ১৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, টানা তিন কার্যদিবস কমার পর চলতি সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার ডিএসইএক্স ১৮ দশমিক ১৬ পয়েন্ট বেড়েছিল। সিএএসপিআই বেড়েছিল ২১ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট।
তৃতীয় দিন মঙ্গলবার ডিএসইএক্স ৫২ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ১৫০ দশমিক ২১ পয়েন্টে দাঁড়ায়। লেনদেন হয় ৯৩৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বেশি। সোমবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৬৬২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
চতুর্থ দিন বুধবার ডিএসইএক্স ৩ দশমিক ১২ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ১৫৩ দশমিক ৩৩ পয়েন্টে অবস্থান করে। লেনদেন বেড়ে দাাঁড়ায় ৯৭৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এই চার দিনে (সোম,মঙ্গল,বুধ ও বৃহস্পতিবার) ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৩৫ পয়েন্টের বেশি বেড়েছে। সিএসইতেও এই ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা গেছে।
ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দর তুলে নেওয়ার পর দুই দিন ভালোর ইঙ্গিত দিলেও পরে ফের দরপতন শুরু হয় বাজারে। টানা তিন কার্যদিবস দুই বাজারেই মূল্যসূচকের বড় পতন হয়। এই তিন দিনে ডিএসইএক্স কমে ২০০ পয়েন্টের মতো। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্র দেখা যায়।
৩৫টি কোম্পানিকে হাতে রেখে বাকিগুলোর শেয়ারের সর্বনিম্ন দর তুলে দেওয়ার পর গত সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার বড় দরপতনের পর দুই দিন (সোম ও মঙ্গলবার) বাজারে সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখি। ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার আলো দেখা দিয়েছিল। সবাই ভেবেছিলেন বাজার বোধ হয় এবার ঘুরে দাঁড়াবে।
কিন্তু পরের দিন (গত সপ্তাহের বুধ ও বৃহস্পতিবার এবং চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার) বাজারে বড় পতন হয়। ফের হতাশ হয়ে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। সবশেষ টানা চার দিন বাজারে চাঙাভাব দেখা যাওয়ায় আবার আশায় বুক বাঁধছেন তারা।
সুমন হাওলাদার নামের একজন ছোট বিনিয়োগকারী এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “ভয় কেটে গেছে। এখন সাহস পাচ্ছি। ফ্লোর পাইস উঠে যাওয়ার পর বাজার যেভাবে পড়তে শুরু করেছিল, ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তবে এখন স্বস্তি পাচ্ছি। জানি না আগামী দিনগুলো বাজার কেমন যাবে।”
বাজারের এমন হালচালে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাজার বিশ্লেষক ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী।
এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “সব ভয় কেটে গেছে। এখন বাজার স্বাভাবিক হবে; ভালো হবে। সর্বনিম্ন মূল্যস্তরের কারণে অনেকে দীর্ঘদিন শেয়ার বিক্রি করতে পারেননি। ফলে মূল্যস্তরে উঠে যাওয়ায় যাদের নগদ অর্থের বেশি প্রয়োজন ছিল, তাদের অনেকেই শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছিলেন। সে কারণে বাজার সমন্বয় হয়েছে। এখন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। বাজার এখন ভালো হবে।”
“এটা ঠিক যে, ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পর বাজারের একটা ধাক্কা লেগেছিল। আমার মনে হচ্ছে, সেই ধাক্কা কেটে গেছে। বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরছে। সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বাড়ছে। আমি মনে করি বাজার সঠিক পথেই আছে। ফ্লোর পাইস উঠে যাওয়ার পর বিক্রির চাপ বেড়েছিল। সে কারণে সূচক কমেছিল; এখন ঠিক হয়ে যাচ্ছে।”
‘বাজার এখন ভালোর দিকে যাবে’ মন্তব্য করে শাকিল রিজভী বলেন, “বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরতে হবে। দেখেশুনে বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের আমি বলবো—মূল্যসূচকের দিকে না তাকিয়ে শেয়ারের গতিপ্রকৃতি দেখে বিনিয়োগ করুন। আতঙ্কিত হয়ে কোনো শেয়ার বিক্রি করে দেবেন না। হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ভুল সিদ্ধান্ত হবে।”
বৃহস্পতিবারের বাজার
সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইতে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬০ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২১৩ দশমিক ৯৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১ হাজার ১২২ কোটি টাকা। যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা বেশি। বুধবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৯৮০ কোটি টাকা।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ১০ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৬২ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১২ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১১৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে ১ হাজার ১২২ কোটি ০৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন বুধবার লেনদেন হয়েছিল ৯৭৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৯৪টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২৭১টির, কমেছে ৭১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫২টির দর।
অন্যদিকে, সিএসইতে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৯৮ দশমিক ১২ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন শেষ হয়েছে ১৭ হাজার ৬২৬ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ২৭৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৭৭টির, কমেছে ৬৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টির দর।
লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। বুধবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
কমেন্ট