পুঁজিবাজার: বড় উত্থানে সপ্তাহ শুরু, ডিএসইতে ১৬ মাসে সর্বোচ্চ লেনদেন
মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বেড়েছে। বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসছে। দীর্ঘ মন্দায় যারা এতদিন বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তারা ফিরে আসছেন।
ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দর তুলে নেওয়ার ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। লেনদেনের পাশাপাশি প্রতিদিনই বাড়ছে মূলসূচক। গত সপ্তাহে টানা চার দিন সূচক বেড়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবারও চাঙাভাব নিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এ নিয়ে টানা পাঁচ কার্যদিবস সূচক বাড়ল পুঁজিবাজারে।
মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বেড়েছে। বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসছে। দীর্ঘ মন্দায় যারা এতদিন বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তারা ফিরে আসছেন।
বাজার আরও ভালো হবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৬ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ২৮০ দশমিক ৭৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১ হাজার ৫৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যা আগের কার্যদিবস গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবারের চেয়ে ৪২০ কোটি টাকা বেশি।
এই লেনদেন এক বছর সাড়ে চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে এর চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর; সেদিন লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৮১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২১৮ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৪ শতাংশ বেড়ে ১৭ হাজার ৮৪৪ দশমিক ৭৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের চার দিনে (সোম, মঙ্গল,বুধ ও বৃহস্পতিবার) ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৩৫ পয়েন্ট বেড়েছিল; রবিবার বেড়েছে ৬৭ পয়েন্টের মতো। সব মিলিয়ে পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসই’র প্রধান সূচক ২০২ পয়েন্ট বেড়েছে। সিএসইতেও এই ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা গেছে।
ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দর তুলে নেওয়ার পর দুই দিন ভালোর ইঙ্গিত দিলেও পরে ফের দরপতন শুরু হয় বাজারে। টানা তিন কার্যদিবস দুই বাজারেই মূল্যসূচকের বড় পতন হয়। এই তিন দিনে ডিএসইএক্স কমে ২০০ পয়েন্টের মতো। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই ধরনের পতন দেখা যায়।
দেড় বছর পর গত ১৮ জানুয়ারি প্রথম দফায় ৩৫টি কোম্পানিকে হাতে রেখে বাকিগুলোর শেয়ারের সর্বনিম্ন দর তুলে দেওয়ার ঘোষণা দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সে ঘোষণা অনুযায়ী, ২১ জানুয়ারি ৩৫টি ছাড়া বাকি সব কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর পা্ইস মুক্ত অবস্থায় লেনদেন শুরু হয়।
২৩ জানুয়ারি থেকে আরো ২৩টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পরও সূচকের উত্থানে আশা সঞ্চার হয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। তবে বুধবার থেকে টানা দিন দিনের পতনে ফের হতাশ হন তারা।
বাজারে এখন ১২টি ছাড়া সব কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তুলে দিয়েছে বিএসইসি।
ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর বিক্রির চাপে প্রথম দিন বড় দরপতনের পর দুই দিন বাজারে সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখি। ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার আলো দেখা দিয়েছিল। সবাই ভেবেছিলেন বাজার বোধ হয় এবার ঘুরে দাঁড়াবে।
কিন্তু পরের তিন দিন (২৪, ২৫ ও ২৮ জানুয়ারি—বুধ, বৃহস্পতি ও রবিবার) )বাজারে বড় পতন হয়। ফের হতাশ হয়ে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। সবশেষ টানা পাঁচ দিন বাজারে চাঙাভাব দেখা যাওয়ায় আবার আশায় বুক বাঁধছেন তারা।
শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা গোবিন্দ শীল পুঁজিবাজারের একজন ছোট বিনিয়োগকারী। মিরপুর-১০ নম্বরে একটি ব্রোকারেজ হাউজে লেনদেন করেন। বাজারের কয়েক দিনের উত্থানে বেশ খুশি গোবিন্দ।
রবিবার দুপুরে এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “বাজার বেশ ভালোই যাচ্ছে। ভয় কেটে গেছে। এখন সাহস পাচ্ছি। ফ্লোর পাইস উঠে যাওয়ার পর বাজার যেভাবে পড়তে শুরু করেছিল, ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তবে এখন স্বস্তি পাচ্ছি। জানি না আগামী দিনগুলো বাজার কেমন যাবে।”
বাজারের এমন হালচালে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাজার বিশ্লেষক ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী।
এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “আমি আগেই বলেছিলাম ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ার পর বিক্রির চাপে দু-একদিন বাজারে পতন হবে। তার পর ঠিক হয়ে যাবে। বাজার ভালেঅর দিকে যাবে।। এখন কিন্তু তাই হচ্ছে।”
“সব ভয় কেটে গেছে। এখন বাজার স্বাভাবিক হবে; ভালো হবে। সর্বনিম্ন মূল্যস্তরের কারণে অনেকে দীর্ঘদিন শেয়ার বিক্রি করতে পারেননি। ফলে মূল্যস্তরে উঠে যাওয়ায় যাদের নগদ অর্থের বেশি প্রয়োজন ছিল, তাদের অনেকেই শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছিলেন। সে কারণে বাজার সমন্বয় হয়েছে। এখন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। বাজার এখন ভালো হবে।”
“এটা ঠিক যে, ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পর বাজারের একটা ধাক্কা লেগেছিল। আমার মনে হচ্ছে, সেই ধাক্কা কেটে গেছে। বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরছে। সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বাড়ছে। আমি মনে করি বাজার সঠিক পথেই আছে। ফ্লোর পাইস উঠে যাওয়ার পর বিক্রির চাপ বেড়েছিল। সে কারণে সূচক কমেছিল; এখন ঠিক হয়ে যাচ্ছে।”
“বাজার এখন ভালোর দিকে যাবে’ মন্তব্য করে শাকিল রিজভী বলেন, “বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরতে হবে। দেখেশুনে বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের আমি বলবো—মূল্যসূচকের দিকে না তাকিয়ে শেয়ারের গতিপ্রকৃতি দেখে বিনিয়োগ করুন। আতঙ্কিত হয়ে কোনো শেয়ার বিক্রি করে দেবেন না। হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ভুল সিদ্ধান্ত হবে।”
একই কথা বলেছেন আরেক বাজার বিশ্লেষক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী।
এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরছে। সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বাড়ছে। আমি মনে করি বাজার সঠিক পথেই আছে। ফ্লোর পাইস উঠে যাওয়ার পর বিক্রির চাপ বেড়েছিল। সে কারণে সূচক কমেছিল; এখন ঠিক হয়ে যাচ্ছে।”
রবিবারের বাজার পরিস্থিতি
সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার দেশের প্রধান বাজার ডিএসইতে মূল্যসূচকের উত্থানে লেনদেন শুরু হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূচকও বাড়তে থাকে। বেড়ে চলে লেনদেন।
শেষ পর্যন্ত ডিএসইএক্স ৬৬ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ বাড়ার মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়। সূচক দাঁড়িয়েছে৬ হাজার ২৮০ দশমিক ৭৩ পয়েন্টে।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ৮ দশমিক ১৩পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৭১ দশমিক শূন্য ছয় পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৭ দশমিক ৯২ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১২৪ দশমিক ৬৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
রবিবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১ হাজার ৫৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যা আগের কার্যদিবস গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবারের চেয়ে ৪২০ কোটি টাকা বেশি।
এই লেনদেন এক বছর সাড়ে চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে এর চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর; সেদিন লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৮১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
রবিবার ডিএসইতে লেনদেনে হয়েছে ৩৯৫ টি কোম্পানির। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩২১টির, কমেছে ৪৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টির দর।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২১৮ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৪ শতাংশ বেড়ে ১৭ হাজার ৮৪৪ দশমিক ৭৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৯৪ টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২২৬টির, কমেছে ৪৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির দর।
কমেন্ট