বাজারের এই হালচালে খুশি ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারী। বাজার এবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা।

পুঁজিবাজারে চাঙাভাব অব্যাহত রয়েছে। সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবারও উল্লম্ফনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। দুই বাজারেই মূল্যসূচক বেড়েছে। এ নিয়ে টানা ১০ কার্যদিবস সূচক বাড়ল বাজারে। এমনটা গত কয়েক বছরে দেখা যায়নি। লেনদেনের ইতিবাচক ধারাও অব্যাহত রয়েছে।

বাজারের এই হালচালে খুশি ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারী। বাজার এবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা।

সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭৩ দশমিক ৭১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৫ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ৪৪৭ দশমিক ০৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ১০ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৯৮ দশমিক ০৬ পয়েন্টে। ডিএস-৩০ সূচক ২১ দশমিক ৭০ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৫৯ দশমিক ৯২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

রবিবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয় ৩৯৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৬৫টির, কমেছে ১৯৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টির দর।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের পাঁচ দিনই ডিএসইর সূচকে উল্লম্ফন দেখা যায়। তার আগের সপ্তাহের প্রথম দিন (রবিবার) ছাড়া পরের চার দিনই সূচক বেড়েছিল।

সব মিলিয়ে দশ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৭০ পয়েন্টের মতো বেড়েছে।

রবিবারও ডিএসইতে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। এদিন এক হাজার ৮৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৮৫৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩০৯ দশমিক ৩২ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়ে লেনদেন শেষ হয়েছে ১৮ হাজার ৬০৫ দশমিক ২২ পয়েন্টে।

এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৯৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২৮টির, কমেছে ১৪৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির দর।

লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ৩৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার ঝোঁক বাড়ায় সূচকের পাশাপাশি লেনদেন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা। আগামী দিনগুলোতে বাজারের এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন তারা।

ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দর তুলে নেওয়ার পর কয়েকদিন বাজারে পতন হলেও সেই ধাক্কা কাটিয়ে তেজিভাবে ফিরেছে বাজার। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেন বাড়ায় বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে এসেছে। দীর্ঘ মন্দায় যারা এতদিন বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তারা ফিরে আসছেন। বিশ্লেষকরাও আশার কথা শোনাচ্ছেন। বলছেন, বাজার আরও ভালো হবে।

টানা টানা ১০ কার্যদিবস বাজারের চাঙাভাবে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাজার বিশ্লেষক ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী।

এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “অনেক দিন পর বাজার ভালো দুটি সপ্তাহ পার করেছিল। সেই ইতিবাচক ধারায় নতুন সপ্তাহও শুরু হয়েছে। লেনদেন পরিস্থিতিও  ভালো ১৮শ’ কোটি টাকার বেশি লেনদেন বর্তমান বাজারের জন্য খুবই ভালো।”

তিনি বলেন, “আমি আগেই বলেছিলাম ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ার পর বিক্রির চাপে দু-একদিন বাজারে পতন হবে। তারপর ঠিক হয়ে যাবে। বাজার ভালোর দিকে যাবে। এখন আসলে তাই হচ্ছে।”

“নির্বাচনের আগে ও পরে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে—এমন শঙ্কা ছিল। কিন্তু সব কিছু ঠিকঠাক মতো হয়েছে। সব ভয় কেটে গেছে। এখন বাজার স্বাভাবিক হবে; ভালো হবে। সর্বনিম্ন মূল্যস্তরের কারণে অনেকে দীর্ঘদিন শেয়ার বিক্রি করতে পারেননি। ফলে মূল্যস্তর উঠে যাওয়ায় যাদের নগদ অর্থের বেশি প্রয়োজন ছিল, তাদের অনেকেই শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছিলেন। সে কারণে বাজার সমন্বয় হয়েছে। এখন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। বাজার এখন ভালো হবে।”

“ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পর বাজারের একটা ধাক্কা লেগেছিল। সেই ধাক্কা কেটে গেছে। বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরছে। আমি মনে করি বাজার সঠিক পথেই আছে।”

‘বাজার এখন ভালোর দিকে যাবে’ মন্তব্য করে শাকিল রিজভী বলেন, “বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরতে হবে। দেখেশুনে বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের আমি বলব—মূল্যসূচকের দিকে না তাকিয়ে শেয়ারের গতিপ্রকৃতি দেখে বিনিয়োগ করুন। আতঙ্কিত হয়ে কোনও শেয়ার বিক্রি করে দেবেন না। হুট করে কোনও সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ভুল সিদ্ধান্ত হবে।”

“তবে বিনিয়োগকারীদের একটা বিষয় মনে রাখতে হবে। বাজারে উত্থান-পতন থাকবে। পৃথিবীর সব বাজারেই থাকে। এই যে এখন বাজার বাড়ছে, সবাই খুশি। যে কোনো মুহূর্তে বাজারে ‘মূল্য সংশোধন’ হতে পারে; তখন কিন্তু বাজার পড়তে পারে। সেটার জন্য বিনিয়োগকারীদের মানষিক প্রস্তুতি রাখতে হবে। দেখেমুণে কোম্পানি দেশে বিনিয়োগ করতে হবে,” বলেন শাকিল রিজভী।