১০ কার্যদিবস পর মূল্যসংশোধন পুঁজিবাজারে

১০ কার্যদিবস পর মূল্যসংশোধন পুঁজিবাজারে

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, টানা দশ দিন সূচক বাড়ার পর কিছুটা মূল্য সংশোধন হয়েছে সোমবার। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। তাই সূচক কিছুটা কমেছে। যেটাকে মূল্য সংশোধন বলা হয়ে থাকে।

টানা দশ কার্যদিবস পর সূচক কমেছে পুঁজিবাজারে। কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর।

সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২২ দশমিক ১৩ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৪২৪ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আরেক বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪৩ দশমিক ৭১ পয়েন্ট কমে লেনদেন শেষ হয়েছে ১৮ হাজার ৫৬১ দশমিক ৫১ পয়েন্টে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, টানা দশ দিন সূচক বাড়ার পর কিছুটা মূল্য সংশোধন হয়েছে সোমবার। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। তাই সূচক কিছুটা কমেছে। যেটাকে মূল্য সংশোধন বলা হয়ে থাকে।

ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দর তুলে নেওয়ার পর কয়েকদিন বাজারে পতন হলেও সেই ধাক্কা কাটিয়ে তেজিভাবে ফিরছিল বাজার। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেন বাড়ায় বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে এসেছিল। দীর্ঘ মন্দায় যারা এতদিন বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তারা ফিরে আসছেন। বিশ্লেষকরাও আশার কথা শোনাচ্ছেন। বলছেন, বাজার আরও ভালো হবে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের পাঁচ দিনই ডিএসইর সূচকে উল্লম্ফন দেখা যায়। তার আগের সপ্তাহের প্রথম দিন (রবিবার) ছাড়া পরের চার দিনই সূচক বেড়েছিল।

চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার ডিএসইএক্স ৭৩ দশমিক ৭১ পয়েন্ট বেড়েছিল। সব মিলিয়ে দশ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৭০ পয়েন্টের মতো বেড়েছিল। সোমবার ২২ দশমিক ১৩ পয়েন্ট কমেছে।

সোমবার বাজারে সূচক কমাকে ‘স্বাভাবিক’ বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষক ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী।

এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “টানা দশ দিন বাজার চড়ে সোমবার সূচকের কিছুটা কমাকে আমি স্বাভাবিক বলে মনে করি। এটা মূল্যসংশোধন। পৃথিবীর সব বাজারেই এটা হয়ে থাকে। কয়েক দিন বাড়বে, পরে দু-একদিন কমবে—এটাই বাজারের স্বাভাবিক গতি।”

‘এতে ভয়ের কিছু নেই’ মন্তব্য করে শাকিল রিজভী বলেন, “বাজারে বিনিয়োগকারীরা ফিরে এসেছেন। ছোট বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ করছেন। সে কারণেই লেনদেন বেড়েছে। আগামীতে বাজার আরও ভালো হবে।”

তিনি বলেন, “আমি আগেই বলেছিলাম ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ার পর বিক্রির চাপে দু-একদিন বাজারে পতন হবে। তারপর ঠিক হয়ে যাবে। বাজার ভালোর দিকে যাবে। এখন আসলে তাই হবে।”

“নির্বাচনের আগে ও পরে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে—এমন শঙ্কা ছিল। কিন্তু সব কিছু ঠিকঠাক মতো হয়েছে। সব ভয় কেটে গেছে। এখন বাজার স্বাভাবিক হবে; ভালো হবে। সর্বনিম্ন মূল্যস্তরের কারণে অনেকে দীর্ঘদিন শেয়ার বিক্রি করতে পারেননি। ফলে মূল্যস্তর উঠে যাওয়ায় যাদের নগদ অর্থের বেশি প্রয়োজন ছিল, তাদের অনেকেই শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছিলেন। সে কারণে বাজার সমন্বয় হয়েছে। এখন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। বাজার এখন ভালো হবে।”

ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পর বাজারের একটা ধাক্কা লেগেছিল। সেই ধাক্কা কেটে গেছে। বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরছে। আমি মনে করি বাজার সঠিক পথেই আছে।”

“তবে বিনিয়োগকারীদের একটা বিষয় মনে রাখতে হবে। বাজারে উত্থান-পতন থাকবে। পৃথিবীর সব বাজারেই থাকে। এই যে এখন বাজার বাড়ছে, সবাই খুশি। যে কোনো মুহূর্তে বাজারে বড় ‘মূল্যসংশোধন’ হতে পারে; তখন কিন্তু বাজার পড়তে পারে। সেটার জন্য বিনিয়োগকারীদের মানষিক প্রস্তুতি রাখতে হবে। দেখেশুনে কোম্পানি দেশে বিনিয়োগ করতে হবে,” বলেন শাকিল রিজভী।

বাজারের হালচাল

সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২২ দশমিক ১৩ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৪২৪ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ৪ দশমিক ১২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৯৩ দশমিক ৯৪ পয়েন্টে। তবে ডিএস-৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৬৫ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

সোমবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয় ৩৯৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১১৪টির, কমেছে ২৫৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৭টির দর।

সোমবার ডিএসইতে লেনদেনও খানিকটা কমেছে। রবিবার এই বাজারে এক হাজার ৮৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সোমবার লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৬৯৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪৩ দশমিক ৭১ পয়েন্ট কমে লেনদেন শেষ হয়েছে ১৮ হাজার ৫৬১ দশমিক ৫১ পয়েন্টে।

এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৮৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯৭টির, কমেছে ১৬২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৪টির দর।

তবে এই বাজারে সোমবার লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে; ৪০ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। রবিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ২৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

চাঙা পুঁজিবাজার, টানা ১০ কার্যদিবস সূচক বাড়ল পরবর্তী

চাঙা পুঁজিবাজার, টানা ১০ কার্যদিবস সূচক বাড়ল

কমেন্ট