মুনাফা তোলার প্রবণতা পুঁজিবাজারে, সূচক কমেছে
টানা দশ কার্যদিবস বাড়ার পর সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার সূচক ও লেনদেন কমেছিল বাজারে; তৃতীয় দিন মঙ্গলবারও কমেছে।
মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও কমেছে পুঁজিবাজারে। কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর।
টানা দশ কার্যদিবস বাড়ার পর সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার সূচক ও লেনদেন কমেছিল বাজারে; তৃতীয় দিন মঙ্গলবারও কমেছে।
সোমবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩০ দশমিক ১১ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৩৯৪ দশমিক ৮১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আরেক বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬১ দশমিক শূন্য নয় পয়েন্ট কমে লেনদেন শেষ হয়েছে ১৮ হাজার ৫০০ দশমিক ৪১ পয়েন্টে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, টানা দশ দিন সূচক বাড়ার পর কিছুটা মূল্য সংশোধন হয় সোমবার। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেকেই মুনাফা তুলে নেন। মঙ্গলবারও সেই প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। তাই সূচক কিছুটা কমেছে। যেটাকে মূল্য সংশোধন বলা হয়ে থাকে।
ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দর তুলে নেওয়ার পর কয়েকদিন বাজারে পতন হলেও সেই ধাক্কা কাটিয়ে তেজিভাবে ফিরছিল বাজার। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেন বাড়ায় বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে এসেছিল। দীর্ঘ মন্দায় যারা এতদিন বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তারা ফিরে আসছেন। বিশ্লেষকরাও আশার কথা শোনাচ্ছেন। বলছেন, বাজার আরও ভালো হবে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের পাঁচ দিনই ডিএসইর সূচকে উল্লম্ফন দেখা যায়। তার আগের সপ্তাহের প্রথম দিন (রবিবার) ছাড়া পরের চার দিনই সূচক বেড়েছিল।
চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার ডিএসইএক্স ৭৩ দশমিক ৭১ পয়েন্ট বেড়েছিল। সব মিলিয়ে দশ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৭০ পয়েন্টের মতো বেড়েছিল।
সোমবার সেই সূচক ২২ দশমিক ১৩ পয়েন্ট কমেছে। মঙ্গলবার কমেছে ৩০ দশমিক ১১ পয়েন্ট।
এই দুই দিন বাজারে সূচক কমাকে ‘স্বাভাবিক’ বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষক ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি মোশতাক আহমেদ সাদেক।
এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “ফ্লোর পাইস বসিয়ে বাজারটাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। তুলে নেওয়ায় এখন স্বাভাবিক হচ্ছে। আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে আরও ভালো হবে। টানা দশ দিন বাজার চড়ার পর সূচক কিছুটা কমবে—এটাই স্বাভাবিক। এটা মূল্যসংশোধন। পৃথিবীর সব বাজারেই এটা হয়ে থাকে। কয়েক দিন বাড়বে, পরে দু-একদিন কমবে—এটাই বাজারের স্বাভাবিক গতি।”
‘এতে ভয়ের কিছু নেই’ মন্তব্য করে মোশতাক আহমেদ বলেন, “বাজারে বিনিয়োগকারীরা ফিরে এসেছেন। ছোট বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ করছেন। সে কারণেই লেনদেন বেড়েছে। আগামীতে বাজার আরও ভালো হবে।”
তিনি বলেন, “আমি আগেই বলেছিলাম ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ার পর বিক্রির চাপে দু-একদিন বাজারে পতন হবে। তারপর ঠিক হয়ে যাবে। বাজার ভালোর দিকে যাবে। এখন আসলে তাই হবে।”
বাজারের হালচাল
সপ্তাহের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩০ দশমিক ১১ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৩৯৪ দশমিক ৮১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ২ দশমিক ৭০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৯১ দশমিক ২৩ পয়েন্টে। তবে ডিএস-৩০ সূচক ৫ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৭১ দশমিক ৫২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
মঙ্গলবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয় ৩৯৯টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৬৫টির, কমেছে ২৯৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৯টির দর।
লেনদেনও খানিকটা কমেছে। রবিবার এই বাজারে এক হাজার ৮৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। সোমবার লেনদেন হয় এক হাজার ৬৯৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। মঙ্গলবার তা আরও কমেছে, এক হাজার ৬৪৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।
আরেক বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬১ দশমিক শূন্য নয় পয়েন্ট কমে লেনদেন শেষ হয়েছে ১৮ হাজার ৫০০ দশমিক ৪১ পয়েন্টে।
এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৮৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৮৭টির, কমেছে ১৬৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টির দর।
২৪ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সোমবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৪০ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। রবিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ২৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
কমেন্ট