পতন চলছেই, ডিএসইতে লেনদেন নামল হাজার কোটি টাকার নিচে

পতন চলছেই, ডিএসইতে লেনদেন নামল হাজার কোটি টাকার নিচে

টানা দশ কার্যদিবস বাড়ার পর গত সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার থেকে বাজারে পতন শুরু হয়। সপ্তাহের শেষ বৃহস্পতিবারও পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবারও বড় পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শুরু হয়েছে।

দরপতন চলছেই বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও কমছে। কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর। প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন ফের হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে।

টানা দশ কার্যদিবস বাড়ার পর গত সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার থেকে বাজারে পতন শুরু হয়। সপ্তাহের শেষ বৃহস্পতিবারও পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবারও বড় পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শুরু হয়েছে।

আর এতে হতাশ ও ক্ষুব্দ ছোট বিনিয়োগকারীরা। তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলেছেন, ভয়ের কিছু নেই; আস্তে আস্তে বাজার ঠিক হয়ে যাবে। টানা দশ দিন সূচক বাড়ার পর মূল্যসংশোধন হচ্ছে বাজারে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেকেই মুনাফা তুলে নিচ্ছেন। সে কারণে বাজারে সূচক ও লেনদেন কমছে বলে মনে করছেন তারা।

সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৩ দশমিক শূন্য এক পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৮৩ দশমিক ২৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আরেক বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২০৪ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট কমে লেনদেন শেষ হয়েছে ১৮ হাজার ৮৫ দশমিক ৮২ পয়েন্টে।

ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দর তুলে নেওয়ার পর কয়েকদিন বাজারে পতন হলেও সেই ধাক্কা কাটিয়ে তেজিভাবে ফিরছিল বাজার। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেন বাড়ায় বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে এসেছিল। দীর্ঘ মন্দায় যারা এতদিন বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তারা ফিরে আসতে শুরু করেছিলেন।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে পাঁচ কার্যদিবসের পাঁচ দিনই ডিএসইর সূচকে উল্লম্ফন দেখা যায়। তার আগের সপ্তাহের প্রথম দিন (রবিবার) ছাড়া পরের চার দিনই সূচক বেড়েছিল।

গত সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার ডিএসইএক্স ৭৩ দশমিক ৭১ পয়েন্ট বেড়েছিল। সব মিলিয়ে দশ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৭০ পয়েন্টের মতো বেড়েছিল।

গত সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার সেই সূচক ২২ দশমিক ১৩ পয়েন্ট কমে। মঙ্গলবার কমে ৩০ দশমিক ১১ পয়েন্ট। বুধবার কমে ২৩ দশমিক ২৭ পয়েন্ট। বৃহস্পতিবার কমেছিল ৩৫ দশমিক ২৮ পয়েন্ট। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার কমেছে ৫৩ পয়েন্ট।

সব মিলিয়ে এই পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইএক্স ১৬৩ পয়েন্টের বেশি কমেছে।

এই দরপতনে হতাশ ও ক্ষুব্দ ছোট বিনিয়োগকারী শামীম আহমেদ। রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা শামীম মিরপুর-১০ নম্বরের একটি ব্রোকারেজ হাউসে শেয়ার লেনদেন করেন।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের পুঁজিবাজার আসলে কোনো দিনই ভালো হবে না। বেশ ভালোই চলছিল কয়েক দিন; লোকসান কিছুটা কাটিয়ে উঠেছিলাম। মনে হচ্ছিল বাজার এখন ভালেঅ যাবে। কিন্তু আবার সেই দরপতন, মন্দা।”

তবে বাজারের এই পতনে ‘উদ্বিগ্ন’ নন বাজার বিশ্লেষক ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী।

এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “এটা ঠিক যে, টানা কয়েক দিন সূচক কমেছে; লেনদেনও কমেছে। টানা দশ দিন বাজার চড়ার পর সূচক কিছুটা কমবে—এটাই স্বাভাবিক। এটা মূল্যসংশোধন। পৃথিবীর সব বাজারেই এটা হয়ে থাকে। কয়েক দিন বাড়বে, পরে দু-একদিন কমবে—এটাই বাজারের স্বাভাবিক গতি।”

‘এতে ভয়ের কিছু নেই’ মন্তব্য করে শাকিল রিজভী বলেন, “বাজারে বিনিয়োগকারীরা ফিরে এসেছেন। ছোট বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ করছেন। আগামীতে বাজার আরও ভালো হবে।”

“আস্তে আস্তে বাজার ঠিক হয়ে যাবে।”

তিনি বলেন, “আমি আগেই বলেছিলাম ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ার পর বিক্রির চাপে দু-একদিন বাজারে পতন হবে। তারপর ঠিক হয়ে যাবে। বাজার ভালোর দিকে যাবে। হয়েছিলও তাই। কয়েক দিন পতনের পর বাজার চাঙাভাব দেখা দিয়েছিল। এখন পতনের ধারায় রয়েছে। মূলত বিক্রির চাপেই এটা হয়েছে। ফ্লোর পাইসের কারণে অনেকে শেয়ার বিক্রি করতে পারেনি; উঠে যাওয়ার পর দাম কিছুটা বেড়েছিল। এখন যাদের টাকা দরকার তারা বিক্রি করে দিচ্ছে।”

রবিবারের বাজার পরিস্থিতি

সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৩ দশমিক শূন্য এক পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৮৩ দশমিক ২৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ১৩ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৬৮ দশমিক ৮২ পয়েন্টে। ডিএস-৩০ সূচক ২৭ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১২৯ দশমিক ২৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

রবিবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয় ৩৯২টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১০৭টির, কমেছে ২৫৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টির দর।

লেনদেনও বেশ খানিকটা কমেছে। রবিবার এই বাজারে ৯২৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল এক হাজার ৭৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

বাড়তে বাড়তে গত সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার এই বাজারে এক হাজার ৮৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকায় উঠেছিল।

আরেক বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২০৪ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট কমে লেনদেন শেষ হয়েছে ১৮ হাজার ৮৫ দশমিক ৮২ পয়েন্টে।

এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৬৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৭০টির, কমেছে ১৬৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৭টির দর।

২৯ কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বৃহস্পতিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ২৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

ফের টানা পতন পুঁজিবাজারে পরবর্তী

ফের টানা পতন পুঁজিবাজারে

কমেন্ট