অবশেষে ২২ শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে

অবশেষে ২২ শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে

সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার তালিকাভুক্ত ২২ কোম্পানির শেয়ারকে আগের ‘এ’ বা ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে অবনমন করে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভূক্ত করেছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ।

অনেক আলোচনা-সমালোচনার পর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২২টি কোম্পানির শেয়ারকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর এর ফলে বাজারে বড় দরপতন হয়েছে।

সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার তালিকাভুক্ত ২২ কোম্পানির শেয়ারকে আগের ‘এ’ বা ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে অবনমন করে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভূক্ত করেছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ।

এ কারণে সকাল ১০টায় লেনদেনের শুরুতে এসব শেয়ারের ব্যাপক দরপতন হয়। অন্তত ১৯টি কোম্পানির শেয়ার দিনের সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন দরে কেনাবেচা হতে দেখা যায়।

লেনদেন শুরুর প্রথম ঘণ্টা শেষে বেলা ১১টায়ও এসব শেয়ারের অন্তত ১১টিকে এমন দরে কেনাবেচা হতে দেখা যায়, যেখানে বিপুল সংখ্যক শেয়ারের বিক্রির আদেশের বিপরীতে ক্রেতাশূন্য অবস্থাও দেখা যায়।

নানা নাটকীয়তা ও বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পর এ পরির্বতন করা হলো। এ নিয়ে এখনও বির্তক ও সমালোচনার ঝড় বইছে।

দুই দফায় পরিবর্তনের পর গত বৃহস্পতিবার রাতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) যে আদেশ দিয়েছিল, তার ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ।

যেসব শেয়ারকে জেড ক্যাটাগরিতে অবনমন করা হয়েছে সেগুলো হলো- অলটেক্স, আরামিট সিমেন্ট, আজিজ পাইপস, ডেল্টা স্পিনার্স, এফএএস ফাইন্যান্স, জিবিবি পাওয়ার, ইনটেক অনলাইন, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, কেয়া কসমেটিক্স, খুলনা প্রিন্টিং, ন্যাশনাল টি, প্রিমিয়ার লিজিং, রিজেন্ট টেক্সটাইল, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, রিং শাইন, সাফকো স্পিনিং, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, ঢাকা ডাইং, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, উত্তরা ফাইন্যান্স, ইয়াকিন পলিমার ও জাহিনটেক্স।

এর মধ্যে রেনউইক যোগেশ্বর, রিংসাইন টেক্সটাইলস ও উত্তরা ফাইন্যান্স এত দিন শেয়ারবাজারে ভালো মানের কোম্পানি হিসেবে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত ছিল। বাকি ১৯টি কোম্পানি মধ্যম মানের কোম্পানি হিসেবে ছিল ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত।

নির্ধারিত সময়ে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করা অথবা টানা ছয় মাসের বেশি সময় কোম্পানির উৎপাদন বা ব্যবসা বন্ধ থাকা অথবা পুঞ্জীভূত লোকসান সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো এক বা একাধিক কারণে এসব কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিভুক্ত করা হয়েছে।

তালিকাভুক্ত কোনও কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের নিয়মিত লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হলেও সে কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার বিএসইসির আদেশে পর পর দুই বছর লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণেও সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে অবিলম্বে জেড ক্যাটাগরিতে অবনমনের নির্দেশনা ছিল।

তবে লভ্যাংশ ইস্যুতে কোনও কোম্পানিকে এখনই জেড ক্যাটাগরিভুক্ত করার অনুমতি দেয়নি বিএসইসি।

একই আদেশের খণ্ডিত অংশ অনুসরণের অনুমতি দেওয়া হলেও কেন বাকি ক্ষেত্রে অনুমতি দেয়নি— সে প্রশ্নের উত্তর বিএসইসি থেকে মেলেনি।

দেশের পুঁজিবাজারে জেড ক্যাটাগরি হিসেবে চিহ্নিত শেয়ারগুলোকে মূলত জাঙ্ক বা মন্দ মানের শেয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বাজার বিশ্লেষক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ)সভাপতি সাইফুল ইসলাম এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “নীতি-সিদ্ধান্তে স্থিরতা না থাকলে এবং তা দীর্ঘমেয়াদি না হলে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেকোনো নীতি ভেবেচিন্তে নেওয়া উচিত। এমনভাবে কোনো আইন করা উচিত নয়, তা হুট করে বদলাতে হবে।”

ইচ্ছেমতো আইনের ব্যবহারে বিনিয়োগকারীরা বিরক্ত ও বাজার বিমুখ হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ২২ কোম্পানিকে জেড শ্রেণিভুক্ত করার বিষয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। তাতে বলা হয়েছে, যেসব কোম্পানি পরপর দুই বছর লভ্যাংশ দেবে না ও দুই বছর বার্ষিক সাধারণ সভা করবে না, সেগুলো জেড শ্রেণিভুক্ত হবে। এ ছাড়া ছয় মাস কোনো কোম্পানি উৎপাদনে না থাকলে এবং কোনো কোম্পানির রিটেইনড আর্নিংস ওই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে বেশি হলে সেটিও জেড শ্রেণিভুক্ত হবে।

যেসব কোম্পানি দুর্বল মানের কোম্পানি হিসেবে জেড শ্রেণিভুক্ত হচ্ছে তার মধ্যে ডেলটা স্পিনার্স, কেয়া কসমেটিকস ও উত্তরা ফাইন্যান্স নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা করেনি। এ ছাড়া ছয় মাসের বেশি সময় ধরে উৎপাদনে না থাকায় জিবিবি পাওয়ার, খুলনা প্রিন্টিং, রিজেন্ট টেক্সটাইল ও ইয়াকিন পলিমার জেড শ্রেণিভুক্ত হচ্ছে। বাকি ১৫ কোম্পানি জেড শ্রেণিতে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে বড় ধরনের লোকসানে থাকায়।

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে জেড ক্যাটাগরি হিসেবে চিহ্নিত শেয়ারগুলোকে মূলত জাঙ্ক বা মন্দ মানের শেয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তালিকাভুক্ত কোম্পানি নিয়মিত এজিএম করলে এবং সবশেষ এজিএমের মাধ্যমে কমপক্ষে ১০ শতাংশ বা তার বেশি লভ্যাংশ দিয়েছে, সেগুলোকে এ ক্যাটাগরি শেয়ার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যেগুলো সর্বশেষ ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দিয়েছে, সেগুলোকে বি ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

জানা গেছে, যেসব কোম্পানি দুর্বল মানের কোম্পানি হিসেবে জেড শ্রেণিভুক্ত হচ্ছে তার মধ্যে ডেলটা স্পিনার্স, কেয়া কসমেটিকস ও উত্তরা ফাইন্যান্স নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা করেনি। এ ছাড়া ছয় মাসের বেশি সময় ধরে উৎপাদনে না থাকায় জিবিবি পাওয়ার, খুলনা প্রিন্টিং, রিজেন্ট টেক্সটাইল ও ইয়াকিন পলিমার জেড শ্রেণিভুক্ত হয়েছে।

বাকি ১৫ কোম্পানি জেড শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে বড় ধরনের লোকসানে থাকায়।

সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার ‘জেড’ ক্যাটাগরির সব শেয়ারের দরপতনের কারণে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৩ দশমিক শূন্য এক পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৮৩ দশমিক ২৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ১৩ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট কমে নেমেছে ১ হাজার ৩৬৮ দশমিক ৮২ পয়েন্টে। ডিএস-৩০ সূচক ২৭ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট কমে নেমেছে ২ হাজার ১২৯ দশমিক ২৮ পয়েন্টে।

রবিবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয় ৩৯২টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১০৭টির, কমেছে ২৫৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টির দর।

লেনদেনও বেশ খানিকটা কমেছে। রবিবার ডিএসইতে ৯২৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল এক হাজার ৭৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

আরেক বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২০৪ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট কমে লেনদেন শেষে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৮৫ দশমিক ৮২ পয়েন্টে।

এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৬৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৭০টির, কমেছে ১৬৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৭টির দর।

২৯ কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বৃহস্পতিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ২৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

পতন চলছেই, ডিএসইতে লেনদেন নামল হাজার কোটি টাকার নিচে পরবর্তী

পতন চলছেই, ডিএসইতে লেনদেন নামল হাজার কোটি টাকার নিচে

কমেন্ট