৭ কার্যদিবস পর সূচক বাড়ল পুঁজিবাজারে
বাজার বিশ্লেষকরা আশার কথা শুনিয়ে বলেছেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া এবং ২২ কোম্পানির ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে অবনমনের ধাক্কা সব কেটে গেছে। বাজার এখন ভালোর দিকে যাবে।
লেনদেন ও মূল্যসূচক বেড়েছে পুঁজিবাজারে। টানা ৭ কার্যদিবস পতনের পর সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার দুই বাজারেই সূচকের পাশাপাশি লেনদেন বেড়েছে। বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর।
বাজার বিশ্লেষকরা আশার কথা শুনিয়ে বলেছেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া এবং ২২ কোম্পানির ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে অবনমনের ধাক্কা সব কেটে গেছে। বাজার এখন ভালোর দিকে যাবে।
সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৭ দশমিক ৮২ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৭৩ দশমিক ৯৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আরেক বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৪ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন শেষ হয়েছে ১৮ হাজার ৫ দশমিক ২০ পয়েন্টে।
টানা দশ কার্যদিবস বাড়ার পর গত সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার থেকে বাজারে পতন শুরু হয়। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবারও পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবারও বাজারে বড় পতন হয়। দ্বিতীয় দিন সোমবারও পতনের ধারা অব্যাহত থাকে।
পরের দিন মঙ্গলবারও সূচক পড়ে ডিএসইতে; লেনদেন নেমে আসে ৭০০ কোটি টাকার ঘরে।
বাজার ফের দরপতনের ধারায় ফেরায় হতাশ ও ক্ষুব্দ হন ছোট ও বড় বিনিয়োগকারীরা।
ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দর তুলে নেওয়ার পর কয়েকদিন বাজারে পতন হলেও সেই ধাক্কা কাটিয়ে তেজিভাবে ফিরছিল বাজার। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেন বাড়ায় বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে এসেছিল। দীর্ঘ মন্দায় যারা বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তারা ফিরে আসতে শুরু করেছিলেন।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে পাঁচ কার্যদিবসের পাঁচ দিনই ডিএসইর সূচকে উল্লম্ফন দেখা যায়। তার আগের সপ্তাহের প্রথম দিন (রবিবার) ছাড়া পরের চার দিনই সূচক বেড়েছিল।
গত সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার ডিএসইএক্স ৭৩ দশমিক ৭১ পয়েন্ট বেড়েছিল। সব মিলিয়ে দশ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৭০ পয়েন্টের মতো বেড়েছিল।
গত সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার সেই সূচক ২২ দশমিক ১৩ পয়েন্ট কমে। মঙ্গলবার কমে ৩০ দশমিক ১১ পয়েন্ট। বুধবার কমে ২৩ দশমিক ২৭ পয়েন্ট। শেষ দিন বৃহস্পতিবার কমেছিল ৩৫ দশমিক ২৮ পয়েন্ট। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার কমে ৫৩ পয়েন্ট। সোমবার কমে ২৪ দশমিক ২৫ পয়েন্ট। মঙ্গলবার কমে ৩ পয়েন্টের মতো। সব মিলিয়ে ওই সাত কার্যদিবসে ডিএসইএক্স ১৯০ পয়েন্ট কমেছিল।
বুধবার ছিল একুশে ফেব্রুয়ারির সাধারণ ছুটি। এদিন দুই বাজারেই লেনদেন বন্ধ ছিল।
সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাজার। দুই বাজারেই লেনদেনের পাশাপাশি সূচক বেড়েছে।
বাজার বিশ্লেষক ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী বলেছেন, সব ধাক্কা কেটে গেছে। বাজার এখন ভালোর দিকে যাবে।
এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া এবং ২২ কোম্পানির ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে অবনমনের ধাক্কা কেটে গেছে। বাজার এখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে; ভালো হবে।”
“এটা ঠিক যে, টানা কয়েক দিন সূচক কমেছে; লেনদেনও কমেছে। টানা দশ দিন বাজার চড়ার পর সূচক কমবে—এটাই স্বাভাবিক। এটাকে আমরা মূল্যসংশোধন বলি। পৃথিবীর সব বাজারেই এটা হয়ে থাকে। কয়েক দিন বাড়বে, পরে দু-একদিন কমবে—এটাই বাজারের স্বাভাবিক গতি।”
বৃহস্পতিবারের বাজার পরিস্থিতি
সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৭ দশমিক ৮২ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৭৩ দশমিক ৯৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস দশমিক ৭৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৬০ দশমিক ৫২ পয়েন্টে। ডিএস-৩০ সূচক ৭ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৩৯ দশমিক ৫৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয় ৩৯৯টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৯৭টির, কমেছে ১৩৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৩টির দর।
লেনদেন খানিকটা বেড়েছে; ৮৬২ কোটি ১৮ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। মঙ্গলবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৭৬৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার এই বাজারে ৯২৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। সোমবার তা কমে ৮১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় নেমে এসেছে।
গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল এক হাজার ৭৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
বাড়তে বাড়তে গত ১২ ফেব্রুয়ারি এই বাজারে লেনদেন এক হাজার ৮৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকায় উঠেছিল।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার আরেক বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৪ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন শেষ হয়েছে ১৮ হাজার ৫ দশমিক ২০ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ২৫৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২০টির, কমেছে ৯৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৮টির দর।
১১ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। মঙ্গলবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
কমেন্ট