পুঁজিবাজার: সীমা বেঁধে দিয়েও থামল না পতন
গত আড়াই মাস ধরেই পুঁজিবাজার পতনের ধারায় রয়েছে। মাঝে দু-একদিন সামান্য বাড়লেও বেশিরভাগ দিন পতন হয়েছে।
পুঁজিবাজারে দরপতন চলছেই। লেনদেন শুরু হলেই পড়ছে সূচক। আড়াই মাস ধরে চলছে এই বেহাল দশা। এতে হতাশ ও ক্ষুব্দ বিনিয়োগকারীরা।
টানা পতন ঠেকাতে আবারও শেয়ারের মূল্যসীমায় পরিবর্তন এনেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি। বৃহস্পতিবার থেকে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দাম এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। বর্তমানে দামভেদে কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হতে পারে।
কিন্তু তাতেও পতন থামেনি। পতনের সীমা বেঁধে দেওয়ার প্রথম দিনেই দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বড় দরপতন হয়েছে; প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬০ পয়েন্টের বেশি হারিয়ে ৫ হাজার ৫১৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এর আগে ২০২১ সালের ২ মে ডিএসইএক্স এর চেয়ে বাজে অবস্থায় ছিল, সেদিন সূচক ছিল ৫ হাজার ৫১৭ পয়েন্টের ঘরে।
আড়াই মাসের কম সময়ে পুঁজিবাজারে ৮১৫ পয়েন্ট সূচক পতনের পর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি বাজারে হস্তক্ষেপ করে।
বুধবার জানানো হয়, এক দিনে শেয়ার দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে ফ্লোর প্রাইসে থাকা তিনটি কোম্পানির শেয়ারের দর কমতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার ডিএসইতে এই নতুন নিয়মে লেনদেন শুরু হয় ৫ হাজার ৫৭৮ পয়েন্ট নিয়ে। কিন্তু এক পর্যায়ে সূচক পড়ে যায় ৯৮ পয়েন্ট। কয়েকবারের চেষ্টায় হারানো সূচক কিছুটা ফিরে পেলেও দিন শেষে বাজার শেষ হয় সূচকের ঘরে আগের দিনের চেয়ে ৬০ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট কম নিয়ে।
সূচকের সঙ্গে কমেছে ডিএসইর লেনদেনও। ৫১১ কোটি টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে এদিন, আগের দিন হয়েছিল ৬০২ কোটি টাকা।
সপ্তাহের শেষ দিন ৩০০টি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে, বেড়েছে ৬৯টির, ২৭টির দর অপরিবর্তিত ছিল।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার আরেক বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৬৪ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট কমে লেনদেন শেষ হয়েছে ১৫ হাজার ৮১৫ দশমিক ৭৫ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ২১৯টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৩৩টির, কমেছে ১৬১টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২৫টির দর।
১১ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বুধবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
গত আড়াই মাস ধরেই পুঁজিবাজার পতনের ধারায় রয়েছে। মাঝে দু-একদিন সামান্য বাড়লেও বেশিরভাগ দিন পতন হয়েছে।
এর মাঝে রোজা ও ঈদ চলে আসায় বিনিয়োগকারীরা আশা করেছিলেন ঈদের পর বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু ঈদের ছুটির পরও ছন্দে ফেরেনি বাজার। উল্টো পতনের পর পতন হয়েই চলেছে।
গত ১৩ মার্চ ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে আসে। এর পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই সূচক পড়ছে।
বাজারের এই নাজুক অবস্থায় ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীদের মধ্যেই হতাশা ও ক্ষোভ বিজার করছে। অব্যাহত দর পতন রুখতে ব্যর্থতার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে দায়ী করে কিছু বিনিয়োগকারী মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে ডিএসই’র পুরোনো ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে দাঁড়ানো বিনিয়োগকারীরা বলেন, বর্তমান কমিশনের জন্য শেয়ারবাজারের এ দুরবস্থা। এ জন্য সংস্থাটির চেয়ারম্যান পদে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে ফের নিয়োগ না দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান তারা।
বাজারের অব্যাহত দরপতনে হতাশ ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্রোকারেজ হাউসের কর্ণধার সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এভাবে শেয়ারের দাম কমার ক্ষেত্রে মূল্যসীমা বা সার্কিট ব্রেকারের সীমা কমিয়ে দেওয়ায় বাজারে আরও বেশি দরপতন হয়েছে। কারণ, এই সীমা কমিয়ে দেওয়ার ফলে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। আবার শেয়ার বিক্রি না হওয়ায় নতুন শেয়ার কিনতেও পারছেন না।”
ফলে সীমা আরোপের সিদ্ধান্ত বাজারে আরও বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এতদিন ধরে বাজার পতন হওয়া মানে যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তা যথাযথ হচ্ছে না। বাজারের ওপর হস্তক্ষেপের বিষয়টি বিনিয়োগকারীরা ভালোভাবে নিচ্ছে না। বাজারকে তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে দেওয়া উচিৎ।”
দরবৃদ্ধির শীর্ষে এডিএন টেলিকম
বড় দরপতনের মধ্যেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত টেলিকম খাতের কোম্পানি এডিএন টেলিকম লিমিটেডের শেয়ারের দাম বেশ খানিকটা বেড়েছে। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৬৯টির দর বেড়েছে; দরবৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষে উঠে ছিল এডিএন টেলিকম লিমিটেড।
বৃহস্পতিবার এডিএন টেলিকমের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় বেড়েছে ৯ টাকা ৬০ পয়সা বা ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ। তাতে দরবৃদ্ধির শীর্ষে জায়গা নিয়েছে কোম্পানিটি। ১০৮ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৮০ পয়সায় মধ্যে লেনদেনে হয়েছে শেয়ারটি।
দরবৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ৭ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়েছে। আর ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে এমবি ফার্মা।
দরবৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো- সোনালী আঁশ, কোহিনূর কেমিক্যাল, লিবরা ইনফিউশন, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, আইটিসি, জিকিউ বলপেন এবং প্রিমিয়ার সিমেন্ট লিমিটেড।
কমেন্ট