অনেক দিন পর পুঁজিবাজারে বড় উত্থান

অনেক দিন পর পুঁজিবাজারে বড় উত্থান

প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ১০০ পয়েন্টের মতো বেড়েছে। এমন উত্থান অনেক দিন দেখা যায়নি। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৮৪ পয়েন্টে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের পুনঃনিয়োগের দিনে সূচকের বড় উত্থান হয়েছে বাজারে।

প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ১০০ পয়েন্টের মতো বেড়েছে। এমন উত্থান অনেক দিন দেখা যায়নি। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৮৪ পয়েন্টে।

সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বেড়েছে দুই বাজারে। তবে টানা পতনের বাজারে হঠাৎ করে বাজারের এই তেজিভাবে কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বাজার বিশ্লেষকরা।

ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “এই যে বাজার পড়তে পড়তে তলানিতে নেমে এলো; আবার হঠাৎ করে সূচকের বড় উল্লম্ফন হলো—তার কোনো কারণই আমার কাছে নেই। এটা বাজারের স্বাভাবিক আচরণ নয়।”

তবে গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে ডিএসই পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকের প্রভাব বাজারে পড়তে পারে বলে মনে করেন এই বাজার বিশ্লেষক।

তিনি বলেন, “অনেক পড়ে গিয়েছিল, এখন ভালোর দিকে যেতে যারে।”

পতনের পর পতনের পর সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার লেনদেন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯৭ দশমিক ৩৬ দশমিক পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ৬১৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইর প্রধান সূচক পড়ে গিয়েছিল ৬০ পয়েন্ট। সূচকের ঘরে ৫৫১৮ পয়েন্ট নিয়ে রবিবার সকালে লেনদেন শুরু হয় ইতিবাচক প্রবনতায়।

আধা ঘণ্টার মাথায় সূচক কিছুটা কমে গেলেও এরপর ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। লেনদেন শেষ হয় সূচকে ৫৬১৫ পয়েন্ট নিয়ে।

অপর দুই সূচক ডিএসইএস ১৬ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৩৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএস-৩০ সূচক ২১ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট বেড়ে ১৯৯৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকার বাজারে এদিন লেনদেন হয়েছে ৬১৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার। তাতে ডিএসই একদিনেই আট হাজার ১৩১ কোটি টাকার বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছে। আগের কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ৫১১ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।

রবিবার এ বাজারে বেশিরভাগ শেয়ারের দাম বেড়েছে। লেনদেন হওয়া ৩৯৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩০০টিরই দাম বেড়েছে, ৫২টির কমেছে এবং ৪৪টির দাম অপরিবর্তত রয়েছে।

গত ২৩ এপ্রিল ডিএসইএক্স সূচকটি ছিল পাঁচ হাজার ৬৩৩ পয়েন্ট। এর পরের দুই দিনে সূচক নেমে গিয়েছিল পাঁচ হাজার ৫১৮ পয়েন্টে, যা ছিল গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

আড়াই মাসের কম সময়ে পুঁজিবাজারে ৮১৫ পয়েন্ট সূচক পতনের পর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি বাজারে হস্তক্ষেপ করে।

অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই রবিবার ১৮৩ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৬ শতাংশ কমে ১৫ হাজার ৯৯৯ দশমিক ৫২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের শেষ দিন এই বাজারে ১১ কোটি ১০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল।

রবিবার এই বাজারে ২০৬টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে দর বেড়েছে ১১৩টির, কমেছে ৭১টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টির দর।

গত বুধবার এক আদেশে বিএসইসি এক দিনে শেয়ার দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশে নামিয়ে অঅনে। তবে ফ্লোর প্রাইসে থাকা তিনটি কোম্পানির শেয়ারের দর কমতে পারবে না।

এরপরও বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ৬০ পয়েন্ট পড়ে যায়। বাজারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ ধরনের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করা হয় ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে।

এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর পরিচালক পর্ষদের সদস্যরা বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন।

ওই সভায় শেয়ার দর কমার সীমা বেঁধে দেওয়ার বিরোধিতা করেন ডিএসইর পরিচালকরা।

একই দিনে বিএসইসির পক্ষ থেকে বৈঠক করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।

প্রতিষ্ঠানটিকে সক্ষমতা অনুযায়ী পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আহ্বান করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। এসব উদ্যোগের মধ্যে রবিবার বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে বলে মনে করছে বিএসইসি।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “বাজারের পতন থামাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারী ও বাজারের উন্নয়নের স্বার্থে কমিশন নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে। যার ফলে বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরছে।

“এখনো বিনিয়োগ উপযোগী শেয়ারের সংখ্যা অনেক। ভালো মানের শেয়ারের কতোগুলো এখনো প্রত্যাশিত দরের চেয়ে অনেক নিচে রয়েছে। সেখানে বিনিয়োগের সুযোগ আছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে এলে বাজার আরও ভালো হবে।”

এদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে আবারও নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

রবিবার দুপুরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ শিবলী রুবাইয়াতকে চার বছরের জন্য পুনঃনিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে যুগ্মসচিব জাহিদ হোসেনের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে বিএসইসি আইন, ১৯৯৩ এর ধারা ৫(৬) অনুযায়ী ২০২৪ সালের ১৭ মে থেকে বা যোগ দেওয়ার তারিখ থেকে পরবর্তী চার বছর মেয়াদের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান পদে পুনঃনিয়োগ দেওয়া হলো।

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি দ্বারা নির্ধারিত হবে।

গত ৩১ মার্চ শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে আরও এক মেয়াদে পুনঃনিয়োগ দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়।

এরপর ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাতে সই করেন বলে জানা যায়।

২০২০ সালে শিবলী রুবাইয়াতকে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে প্রথম নিয়োগ দেয় সরকার।

শিবলী রুবাইয়াত আবারও বিএসইসি চেয়ারম্যান পরবর্তী

শিবলী রুবাইয়াত আবারও বিএসইসি চেয়ারম্যান

কমেন্ট