পুঁজিবাজারে বড় দরপতন, সূচক ৩৭ মাসে সর্বনিম্ন

পুঁজিবাজারে বড় দরপতন, সূচক ৩৭ মাসে সর্বনিম্ন

গত পাঁচ কর্মদিবসে দেশের পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২৬৫ পয়েন্ট।

দরপতন চলছেই বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে। লেনদেন শুরু হলেই পড়ছে সূচক। লেনদেনও তলানিতে নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮৬ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৪৩১ দশমিক ২৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এই সূচক ২০২১ সালের ২৭ এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন।

এ নিয়ে গত পাঁচ কর্মদিবসে ডিএসইএক্স কমেছে ২৬৫ পয়েন্ট।

মূল্যস্ফীতির চাপে দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে অনেক বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার থেকে তাদের বিনিয়োগ কমিয়ে নিচ্ছে। আবার আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপের আশঙ্কাও এই বাজার থেকে মূলধন সরিয়ে নিতে বিনিয়োগকারীদের মনোভাব সৃষ্টি করছে বলে বাজারসংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করছেন।

রবিবার দেশের অন্য পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচকেরও বড় পতন হয়েছে। ২৬৯ পয়েন্টের বেশি কমে এ সূচক নেমেছে ১৫৭৩৭ পয়েন্টে।

বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘদিন ধরে আস্থার সংকটে ভুগছেন; সাম্প্রতিক সময়ে সূচকের টানা পতন তাদের মধ্যে আরও অস্থিরতা বাড়িয়েছে বলে বাজারসংশ্লিষ্টরা মনে করছে।

পুঁজিবাজার ঘিরে চলা দীর্ঘ উৎকণ্ঠার মধ্যে গত ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের পুনঃনিয়োগ হয়। সেদিন অবশ্য সূচকের বড় উত্থান হয়।

ওই দিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ১০০ পয়েন্টের মতো বেড়েছিল। এমন উত্থান অনেক দিন দেখা যায়নি। সেদিন অন্য বাজার সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছিল প্রায় ২০০ পয়েন্ট।

পরের দিন অর্থাৎ ২৯ এপ্রিল দুই বাজারেই সূচক পড়ে যায়। ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৬ দশমিক ১৫ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৫৬৯ দশমিক ৬৮ পয়েন্টে নামে। অন্য বাজার সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬১ পয়েন্ট কমে ১৫ হাজার ৯৩৮ পয়েন্টে অবস্থান করে।

এরপর কয়েক দিন অবশ্য সূচক অল্প অল্প করে খানিকটা বেড়েছে। ডিএসইতে লেনদেন ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে দিয়েছিল।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ধারা ৫(৬) মোতাবেক ২০২৪ সালের ১৭ মে থেকে অথবা যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী চার বছর মেয়াদের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান পদে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে পুনঃনিয়োগ দেওয়া হয়।

১৭ ও ১৮ মে (শুক্র ও শনিবার) ছিল সপ্তাহিক ছুটি। সে হিসাবে পুনঃনিয়োগ পাওয়ার পর রবিবার ছিল শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের প্রথম কর্মদিবস। এই দিনে দুই বাজারেই বড় পতন হয়েছে।

পুঁজিবাজারে বর্তমানে এক দিনে কোনও কোম্পানির শেয়ারের দাম ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারে না। বাজারের পতন ঠেকাতে গত ২৫ এপ্রিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি দরপতনের এ সীমা আরোপ করে।

সেই হিসাবে তালিকাভুক্ত সব শেয়ারের দাম কমলে সূচকও এক দিনে ৩ শতাংশের মতো কমতে পারবে।

রবিবারের বাজার পরিস্থিতি

গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসই’র প্রধান ডিএসইক্স প্রায় ১০ পয়েন্ট বা দশমিক ১৮ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৫১৭ পয়েন্টে নেমে আসে। তার আগের দিন বুধবার এই বাজারে ডিএসইক্স কমেছিল ৫৮ পয়েন্টের বেশি।

এরপর চলতি সপ্তাহের শুরু দিন রবিবার এই সূচক ৮৬ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৪৩১ দশমিক ২৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে। যা ২০২১ সালের ২৭ এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন।

অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ২০ দশমিক ৫২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৯১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএস-৩০ সূচক ২৫ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৪৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৮৮টি কোম্পানির শেয়ার ও মিচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ২২টির, কমেছে ৩৪৭টির ও অপরিবর্তিত ছিল ১৯টির দর।

ঢাকার বাজারে এদিন লেনদেনও হয়েছে গত ৩৪ দিনের মধ্যে সর্বিনিম্ন। আগের দিনের চেয়ে ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ কমে এদিন লেনদেন হয় ৪০৯ কোটি ১৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। বৃহস্পতিবার লেনদেরে অঙ্ক ছিল ৬৭৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

রবিবার ডিএসইতে লেনদেনে এগিয়ে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত। এ খাতে মোট লেনদেনের ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। আরও দুটি খাতও লেনদেনে বেশি অংশ পূরণ করেছে; সেদুটি হচ্ছে খাদ্য (১৪ দশমিক ২ শতাংশ) ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড (৯ দশমিক ৮ শতাংশ)।

যা বলছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক

পুঁজিবাজারের টানা পতনের কারণ জানতে কথা হয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালীর সঙ্গে।

তিনি এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে বাজারে মন্দা চলছে। এর মধ্যে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটকে ঘিরে গণমাধ্যমে নানান খবর প্রকাশিত হচ্ছে। বলা হচ্ছে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে ৪০ লাখ টাকার বেশি মুনাফার ওপর কর ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স আরোপ করবে। এই খবর নিয়ে বাজারে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আর সেই আতঙ্কে বাজারে সূচকের টানা পতন হচ্ছে।”

‘এছাড়া যখন তখন বাজারে অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণেও বাজার পড়ছে’ এ মন্তব্য করে আহমেদ রশিদ লালী বলেন, “ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর তুলে নেওয়ার কিছু দিন যেতে না যেতেই ২২ কোম্পানিকে ‘জেড’ গ্রুপে পাঠানো হলো। পরে আরও ৬টিকে পাঠানো হয়েছে। আরও কিছু কোম্পানিকে পাঠানো হবে বলে জানা যাচ্ছে। যেসব বিনিয়োগকারী এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছিলেন, তাদের এখন কী হবে?

“এরপর পুঁজিবাজারে দরপতন সীমা বেঁধে দেয় বিএসইসি। বলা হয়, তালিকাভুক্ত কোনও কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না।”

“এসব কারণে বাজারে এখন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বাজারের প্রতি ছোট-বড় কোনও বিনিয়োগকারীর এখন আস্থা নেই। লেনদেন শুরু হলেই বাজার পড়ছে,” বলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক লালী।

আবার সেই মন্দাভাব পুঁজিবাজারে পরবর্তী

আবার সেই মন্দাভাব পুঁজিবাজারে

কমেন্ট