‘গেইন ট্যাক্স’ প্রস্তাবের পর পুঁজিবাজারে বড় পতন
বাজেট পেশের পর রবিবার প্রথম লেনদেনে দেশের দুই পুঁজিবাজারেই বড় দরপতন হয়েছে। প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৫ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৫ শতাংশ কমে ৫ হাজার ১৭১ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
পুঁজিবাজারে মন্দা কাটাতে কোনও দিক-নির্দেশনা ছিল না নতুন বাজেটে; উল্টো মূলধনি মুনাফা বা ক্যাপিটাল গেইনের ওপর ছিল করের প্রস্তাব। এই অবস্থায় বাজেট পেশের পর লেনদেনের প্রথম দিনই বড় দরপতন হয়েছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে। দুই বাজারেই মূল্যসূচকের পাশাপাশি কমেছে লেনদেন।
গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রায় আট লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন; তাতে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) অর্জনের লক্ষ্য ধরেছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
সরকারের আর্থে পরিচালিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষনা প্রতিষ্ঠান-বিআইডিএস বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি, সানেমসহ দেশের প্রায় সব অর্থনীতিবিদ বলছে, বর্তমান কঠিন সময়ে মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য বাস্তবভিত্তিক নয়; কোনো ভাবেই এই দুই লক্ষ্য অর্জিত হবে না।
এমন পরিস্থিতিতে বাজেট পেশের পর রবিবার প্রথম লেনদেনে দেশের দুই পুঁজিবাজারেই বড় দরপতন হয়েছে। প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৫ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৫ শতাংশ কমে ৫ হাজার ১৭১ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০৬ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৭১ শতাংশ কমে ১৪ হাজার ৮৪০ দশমিক ৪৮ পয়েন্টে নেমেছে।
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে মন্দা চলছে। ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারী হতাশ। অনেক বিনিয়োগকারী বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
অথচ এই মন্দা পুঁজিবাজারের চাঙা করতে কোনও জন্য সুখবর নেই অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলীর প্রস্তাবিত বাজেটে। উল্টো নতুন করে মূলধনি মুনাফা বা ক্যাপিটাল গেইনের ওপর কর বসানো হয়েছে।
যদিও বাজেটের আগে থেকেই প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইসহ বাজার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দাবি ছিল, ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে নতুন করে যেন করারোপ করা না হয়। কিন্তু সেই দাবি শেষ পর্যন্ত পূরণ হয়নি।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেটে প্রস্তাব করেছেন, ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত মূলধনি মুনাফায় কোনো কর বসবে না। তবে ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফা করলে তার ওপর কর দিতে হবে।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, সেকেন্ডারি বাজারে শেয়ার লেনদেন করে কোনো বিনিয়োগকারী এক বছরে ৫৫ লাখ টাকা মুনাফা করেছেন। সে ক্ষেত্রে মুনাফার ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত–সুবিধার আওতায় থাকবে। বাকি ৫ লাখ টাকা মুনাফা ওই বিনিয়োগকারীর মোট আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে।
তাতে ওই বিনিয়োগকারীর নির্দিষ্ট একটি অর্থবছরে তার মোট আয়ের ওপর যে হারে কর প্রযোজ্য হবে, সেই হারে কর দিতে হবে। তবে কোনো বিনিয়োগকারী যদি কোনো শেয়ার একটানা ৫ বছর ধরে রেখে ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফা করেন, সে ক্ষেত্রে ওই মুনাফার ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপ হবে।
রবিবারের লেনদেনে ক্যাপিটাল গেইনের ওপর ১৫ শতাংশ কর বসানো প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী।
এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “প্রস্তাবিত বাজেট পুঁজিবাজারের ছোট বড় সব বিনিয়োগকারীকে হতাশ করেছে। পুঁজিবাজারের জন্য কোনো সুখবর নেই, উল্টো মূলধনি মুনাফায় কর বসানো হয়েছে।”
“এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে বাজারে মন্দা চলছে। ভালো-মন্দ সব শেয়ারের দামই কমতে কমতে একেবারে নিচে নেমে এসেছে। বাজেটের আগে ‘গেইন ট্যাক্স’ আতঙ্ক নিয়ে কয়েক দিন টানা পড়েছে বাজার। সত্যি সত্যি সেই ট্যাক্স আরোপের ফলে বাজেট পেশের পরও দরপতন অব্যাহত রয়েছে।”
“জানি না বাজারের কি হবে?”
রবিবারের বাজার পরিস্থিতি
বাজেট পেশের আগে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পড়তে পড়তে ৫ হাজার ২৫০ পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছিল। বাজেট উপস্থাপনের দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ২৩৭ দশমিক ৩২ পয়েন্ট।
সপ্তাহের প্রথম দিন সেই সূচক ৬৫ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৫ শতাংশ কমে ৫ হাজার ১৭১ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এক বছর আগে ৫ জুন ডিএসইএক্স ছিল ৬ হাজার ৩৫৬ দশমিক ৩০ পয়েন্ট।
হিসাব বলছে, এক বছরের ব্যবধানে ডিএসইএক্স কমেছে ১ হাজার ১৮৪ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০৬ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৭১ শতাংশ কমে ১৪ হাজার ৮৪০ দশমিক ৪৮ পয়েন্টে নেমেছে। এক বছর আগে ৫ জুন সিএএসপিআই ছিল ১৮ হাজার ৭৭৬ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এক বছরে সিএএসপিআই কমেছে ৩ হাজার ৯৩৬ দশমিক ৫১ পয়েন্ট।
রবিবার ডিএসইতে ৩৫৭ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবস গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৫৪২ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
এদিন ডিএসইতে মোট ৩৯২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৩৩টি কোম্পানির, বিপরীতে ৩৪০টি কোম্পানির দর কমেছে। পাশাপাশি ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
রবিবার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ১০ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। বৃহস্পতিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
২১৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৪টির। কমেছে ১৫১টির। অপরিবর্তিত ছিল ৩২টির দর।
কমেন্ট