ঈদের পর চাঙাভাব পুঁজিবাজারে

ঈদের পর চাঙাভাব পুঁজিবাজারে

ঈদের ছুটির পর দুই দিনে (বুধ ও বৃহস্পতিবার) ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১২৬ দশমিক ৩১ পয়েন্ট। সিএসই’র সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২৩৯ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট।

ঈদের পর চাঙাভাবে ফিরেছে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার। দুই বাজারেই মূল্যসূচকের উল্লম্ফন হয়েছে; বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।

প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮২ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬০ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ২৪৪ দশমিক ১২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৭৮ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৭৮৬ দশমিক ৮২ পয়েন্টে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে ১ দশমিক ২২ শতাংশ।

ঈদের তিন দিন (১৬ থেকে ১৮ জুন) এবং সাপ্তাহিক দুই দিনের (১৪ ও ১৫ জুন) ছুটির পর বুধবার লেনদেন শুরু হয় পুঁজিবাজারে। ওই দিন ডিএসইএক্স বেড়েছিল ৪৩ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট। সিএসই’র সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছিল ৬১ দশমিক ২২ পয়েন্ট।

এ নিয়ে ঈদের ছুটির পর দুই দিনে (বুধ ও বৃহস্পতিবার) ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১২৬ দশমিক ৩১ পয়েন্ট। সিএসই’র সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২৩৯ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট।

বৃহস্পতিবার লেনদেনও বেড়েছে দুই বাজারে। ডিএসইতে ৪৫২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের দিন বুধবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ২৪৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা; যা ছিল গত ১৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।

২০২৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এই বাজারে ২৩১ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। ঈদের ছুটির আগে শেষ লেনদেন দিবস ১৩ জুন লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৪২৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

সিএসইতে বৃহস্পতিবার ১২১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। বুধবার লেনদেন হয়েছিল মাত্র ৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

ঈদের পর পুঁজিবাজারের এই ইতিবাচক ধারায় সন্তোষ প্রকাশ করে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “ঈদের আমেজ এখনও পুরোপুরি কাটেনি। অনেক বিনিয়োগকারী এখনও ঢাকায় ফেরেননি। এর পরও বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটা খুবই ভালো।”

“ঈদের ছুটির আগেও দুই দিন সূচক বেড়েছিল। সব শেয়ারের দাম কমতে কমতে অনেক নিচে নেমে গিয়েছিল। এই দামে শেয়ার কিনলে লোকসানের আশঙ্কা খুবই কম। সে কারণেই বিনিয়োগকারীরা বাজারমূখী হয়েছেন; দেখেগুনে শেয়ার কিনছেন। সূচক বাড়ছে। মনে হচ্ছে, বাজার এখন ভালোর দিকে যাবে।

দীর্ঘদিন ধরে দেশের পুঁজিবাজারে মন্দা চলছে। ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীই হতাশ। অনেক বিনিয়োগকারী বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন।

এই অবস্থায় গত ৬ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রায় আট লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন; তাতে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) অর্জনের লক্ষ্য ধরেছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

পুঁজিবাজারে মন্দা কাটাতে কোনও দিক-নির্দেশনা ছিল না নতুন বাজেটে; উল্টো মূলধনি মুনাফা বা ক্যাপিটাল গেইনের ওপর ছিল করের প্রস্তাব। এই অবস্থায় বাজেট পেশের পরও দরপতন অব্যহত থাকে বাজারে।

বাজেট উপস্থাপনের পর প্রথম লেনদেন দিবস ৯ জুন প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৫ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৫ শতাংশ কমে ৫ হাজার ১৭১ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে নেমে আসে। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০৬ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৭১ শতাংশ কমে ১৪ হাজার ৮৪০ দশমিক ৪৮ পয়েন্টে নামে।

পরের দিন ১০ জুন ডিএসইএক্স আরও ৬৫ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৬ শতাংশ কমে ৫ হাজার ১০৫ দশমিক ৮৮ পয়েন্টে নেমে আসে। সিএসই’র সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৬২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ০৯ শতাংশ কমে ১৪ হাজার ৬৭৮ দশমিক ৩৬ পয়েন্টে নামে।

১১ জুন ডিএসইএক্স আরও ৩৫ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৭০ পয়েন্টে নেমে আসে। ওই সূচক ছিল ৪২ মাস বা সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

তবে ঈদের ছুটির আগে দুই দিনে (১২ ও ১৩ জুন) ডিএসইএক্স ৪১ পয়েন্টের মতো বেড়ে ৫ হাজার ১১৭ দশমিক ৮১ পয়েন্টে অবস্থান করছিল।

বাজেট পেশের আগে ডিএসইসহ বাজার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দাবি ছিল, ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে নতুন করে যেন করারোপ করা না হয়। কিন্তু বাজেট প্রস্তাবে পুঁজিবাজারে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফায় কর আরোপের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী।

উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, সেকেন্ডারি বাজারে শেয়ার লেনদেন করে কোনও বিনিয়োগকারী এক বছরে ৫৫ লাখ টাকা মুনাফা করলে তার ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত থাকবে, বাকি ৫ লাখ টাকা মুনাফা ওই বিনিয়োগকারীর মোট আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে।

তাতে ওই বিনিয়োগকারীর নির্দিষ্ট একটি অর্থবছরে তার মোট আয়ের ওপর যে হারে কর প্রযোজ্য হবে, সেই হারে কর দিতে হবে।

তবে কোনও বিনিয়োগকারী যদি কোনও শেয়ার একটানা ৫ বছর ধরে রেখে ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফা করে, সে ক্ষেত্রে ওই মুনাফার ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপ হবে।

বৃহস্পতিবারের বাজার পরিস্থিতি

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর থেকে পুঁজিবাজারে টানা দরপতন চলছে। এই সময়ে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার বাজার মূলধন হারিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। পতন ঠেকাতে তিন শতাংশের সার্কিট ব্রেকার দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তারপরও ধারাবহিক দরপতন ঘটতে থাকে দুই বাজারে।

বাজেট পেশের আগে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পড়তে পড়তে ৫ হাজার ২৫০ পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছিল। বাজেট প্রস্তাবের দিন ৬ জুন ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ২৩৭ দশমিক ৩২ পয়েন্ট।

ঈদের ছুটির আগে ১৩ জুন শেষ লেনদেন দিবসে ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ১১৭ দশমিক ৮১ পয়েন্ট।

তবে ঈদের ছুটির পর বুধ ও বৃহস্পতিবার—দুই দিনের লেনদেনে ডিএসইএক্স ১২৬ দশমিক ৩১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ২৪৪ দশমিক ১২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

বৃহস্পতিবার ডিএসই’র অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ২৪ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৪৬ দশমিক ০৫ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে। ডিএস-৩০ সূচক ৩১ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৮৭৫ দশমিক ৪৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

এদিন বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৭৮ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৭৮৬ দশমিক ৮২ পয়েন্টে।

বৃহস্পতিবার ডিএসইতে মোট ৩৯৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে বেড়েছে ২৮৮টির। কমেছে ৫৫টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ৫০টির দর।

এদিন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ১৯৯টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১২২টির। কমেছে ৪৮টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ২৯টির দর।

ঈদের পর লেনদেনে খরা পুঁজিবাজারে পরবর্তী

ঈদের পর লেনদেনে খরা পুঁজিবাজারে

কমেন্ট