ডিএসইতে লেনদেন ৭০০ কোটি টাকা ছাড়াল
কোরবানি ঈদের আগে থেকেই বাজার ইতিবাচক ধারায় ফেরার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। ঈদের পর তার প্রতিফলন দখা যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে সূচক ও লেনদেন। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। ফাইল ছবি
চাঙাভাবে ফিরছে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বাড়ছে।
কোরবানি ঈদের আগে থেকেই বাজার ইতিবাচক ধারায় ফেরার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। ঈদের পর তার প্রতিফলন দখা যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে সূচক ও লেনদেন। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে।
সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৭০৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। যা দেড় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আগের দিন বুধবারের চেয়ে ১৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি।
লেনদেনের পাশাপাশি মূল্যসূচকও বেশ খানিকটা বেড়েছে এই বাজারে। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫২ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট বা ১ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ৩৫৫দশমিক ৪১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের দিন বুধবার বেড়েছিল আরও বেশি, ৬০ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বৃহস্পতিবার সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৬৩ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৫ হাজার ৮৮ দশমিক ৫৯ পয়েন্টে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে দশমিক ১ শতাংশ।
ঈদের তিন দিন (১৬ থেকে ১৮ জুন) এবং সাপ্তাহিক দুই দিনের (১৪ ও ১৫ জুন) ছুটির পর ১৯ জুন লেনদেন শুরু হয় পুঁজিবাজারে। ওই দিন ডিএসইএক্স বেড়েছিল ৪৩ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট। সিএসই’র সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছিল ৬১ দশমিক ২২ পয়েন্ট।
পরের দিন ২০ জুন ডিএসইএক্স ৮২ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬০ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ২৪৪ দশমিক ১২ পয়েন্টে দাঁড়ায়। সিএএসপিআই ১৭৮ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১৪ হাজার ৭৮৬ দশমিক ৮২ পয়েন্টে।
চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার (২৩ জুন) ডিএসইএক্স ৩ পয়েন্টের কিছু বেড়ে ৫ হাজার ২৪৭ পয়েন্টে দাঁড়ায়। দ্বিতীয় দিন সোমবার (২৪ জুন) অবশ্য সূচকের খানিকটা পতন হয়। ওই দিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৬ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৫১ শতাংশ কমে ৫ হাজার ২২০ দশমিক ১৮ পয়েন্টে অবস্থান করে।
তবে একদিন পরেই ঘুরে দাঁড়ায় বাজার। তৃতীয় দিন মঙ্গলবার (২৫ জুন) ডিএসইএক্স ২১ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ২৪১ দশমিক ৮৩ পয়েন্টে অবস্থান করে।
ঈদের পর পুঁজিবাজারের এই ইতিবাচক ধারায় সন্তোষ প্রকাশ করে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “অনেক দিন পর পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটা খুবই ভালো লক্ষণ।”
তিনি বলেন, “ঈদের ছুটির আগেও দুই দিন সূচক বেড়েছিল। সব শেয়ারের দাম কমতে কমতে অনেক নিচে নেমে গিয়েছিল। এই দামে শেয়ার কিনলে লোকসানের আশঙ্কা খুবই কম। সে কারণেই বিনিয়োগকারীরা বাজারমূখী হয়েছেন; দেখেগুনে শেয়ার কিনছেন। সূচক বাড়ছে। মনে হচ্ছে, বাজার এখন ভালোর দিকে যাবে।”
দীর্ঘদিন ধরে দেশের পুঁজিবাজারে মন্দা চলছে। ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীই হতাশ। অনেক বিনিয়োগকারী বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন।
এই অবস্থায় গত ৬ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রায় আট লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
পুঁজিবাজারে মন্দা কাটাতে কোনও দিক-নির্দেশনা ছিল না নতুন বাজেটে; উল্টো মূলধনি মুনাফা বা ক্যাপিটাল গেইনের ওপর ছিল করের প্রস্তাব। এই অবস্থায় বাজেট পেশের পরও দরপতন অব্যহত থাকে বাজারে।
বাজেট উপস্থাপনের পর প্রথম লেনদেন দিবস ৯ জুন প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৫ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৫ শতাংশ কমে ৫ হাজার ১৭১ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে নেমে আসে। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০৬ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৭১ শতাংশ কমে ১৪ হাজার ৮৪০ দশমিক ৪৮ পয়েন্টে নামে।
পরের দিন ১০ জুন ডিএসইএক্স আরও ৬৫ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৬ শতাংশ কমে ৫ হাজার ১০৫ দশমিক ৮৮ পয়েন্টে নেমে আসে। সিএসই’র সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৬২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ০৯ শতাংশ কমে ১৪ হাজার ৬৭৮ দশমিক ৩৬ পয়েন্টে নামে।
১১ জুন ডিএসইএক্স আরও ৩৫ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৭০ পয়েন্টে নেমে আসে। ওই সূচক ছিল ৪২ মাস বা সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
তবে ঈদের ছুটির আগে দুই দিনে (১২ ও ১৩ জুন) ডিএসইএক্স ৪১ পয়েন্টের মতো বেড়ে ৫ হাজার ১১৭ দশমিক ৮১ পয়েন্টে অবস্থান করছিল।
বাজেট পেশের আগে ডিএসইসহ বাজার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দাবি ছিল, ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে নতুন করে যেন করারোপ করা না হয়। কিন্তু বাজেট প্রস্তাবে পুঁজিবাজারে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফায় কর আরোপের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, সেকেন্ডারি বাজারে শেয়ার লেনদেন করে কোনও বিনিয়োগকারী এক বছরে ৫৫ লাখ টাকা মুনাফা করলে তার ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত থাকবে, বাকি ৫ লাখ টাকা মুনাফা ওই বিনিয়োগকারীর মোট আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে।
তাতে ওই বিনিয়োগকারীর নির্দিষ্ট একটি অর্থবছরে তার মোট আয়ের ওপর যে হারে কর প্রযোজ্য হবে, সেই হারে কর দিতে হবে।
তবে কোনও বিনিয়োগকারী যদি কোনও শেয়ার একটানা ৫ বছর ধরে রেখে ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফা করে, সে ক্ষেত্রে ওই মুনাফার ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপ হবে।
বাজার পরিস্থিতি
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর থেকে পুঁজিবাজারে টানা দরপতন চলছে। এই সময়ে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার বাজার মূলধন হারিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। পতন ঠেকাতে তিন শতাংশের সার্কিট ব্রেকার দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তারপরও ধারাবহিক দরপতন ঘটতে থাকে দুই বাজারে।
বাজেট পেশের আগে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পড়তে পড়তে ৫ হাজার ২৫০ পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছিল। বাজেট প্রস্তাবের দিন ৬ জুন ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ২৩৭ দশমিক ৩২ পয়েন্ট।
ঈদের ছুটির আগে ১৩ জুন শেষ লেনদেন দিবসে ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ১১৭ দশমিক ৮১ পয়েন্ট।
বৃহস্পতিবার ডিএসই’র অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ১৭ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৮৩ দশমিক ৫১ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে। ডিএস-৩০ সূচক ১৮ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯২২ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিন ডিএসইতে ৭০৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন বুধবার লেনদেন হয়েছিল ৬০৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। মঙ্গলবার লেনদেনে অঙ্ক ছিল ৫২৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার ডিএসইতে মোট ৪০১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২৪৬টির। কমেছে ৯৯টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ৫৬টির দর।
এদিন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৬৩ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৫ হাজার ৮৮ দশমিক ৫৯ পয়েন্টে।
লেনদেন হয়েছে ১১৫ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। বুধবার লেনদেন হয়েছিল ১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
২৪১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৩৪টির। কমেছে ৬৯টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ৩৮টির দর।
কমেন্ট