চাঙা পুঁজিবাজার, দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় উত্থান সূচকে

চাঙা পুঁজিবাজার, দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় উত্থান সূচকে

সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১২৩ দশমিক ৭১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৪৯৭ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

চাঙাভাবে ফিরছে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বেড়েছে দুই বাজারে। বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর।

সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১২৩ দশমিক ৭১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৪৯৭ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। শতাংশ হিসাবে এই সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ৩০ শতাংশ।

সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে এমন উত্থান দেখা যায়নি। এর আগে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই ডিএসইএক্স ১৫৩ পয়েন্ট বেড়েছিল।

অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩০৬ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৫ হাজার ৪৬৩ দশমিক ৫২ পয়েন্টে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি।

কোরবানির ঈদের পর থেকেই পুঁজিবাজার ইতিবাচক ধারায় ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। বাজেট পাশের পর তা চাঙাভাবে ফিরছে।

১৭ জুন দেশে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হয়। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাশ হয় ৩০ জুন।

নতুন অর্থবছর শুরু হয় ১ জুলাই সোমবার। তবে ওইদিন ব্যাংক হলিডে থাকায় পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ ছিল। বাজেট পাশের পর প্রথম লেনদেন হয় মঙ্গলবার। ওই দিন ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছিল ১১ পয়েন্ট। পরের দিন বুধবার এই সূচক বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট।

সেই ইতিবাচক ধারায় সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবারও সূচকের বড় উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে।

বাজারের চাঙাভাবে সন্তোষ প্রকাশ করে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “অনেক দিন পর পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসছে। এটা খুবই ভালো লক্ষণ।”

তিনি বলেন, “বাজার অনেক পড়ে গিয়েছিল। সব শেয়ারের দাম কমতে কমতে অনেক নিচে নেমে গিয়েছিল। এই দামে শেয়ার কিনলে লোকসানের আশঙ্কা খুবই কম। সে কারণেই বিনিয়োগকারীরা বাজারমূখী হয়েছেন; দেখেগুনে শেয়ার কিনছেন। সূচক বাড়ছে। মনে হচ্ছে, বাজার এখন ভালোর দিকে যাবে।”

ঈদের তিন দিন (১৬ থেকে ১৮ জুন) এবং সাপ্তাহিক দুই দিনের (১৪ ও ১৫ জুন) ছুটির পর ১৯ জুন লেনদেন শুরু হয় পুঁজিবাজারে। ওই দিন ডিএসইএক্স বেড়েছিল ৪৩ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট। সিএসই’র সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছিল ৬১ দশমিক ২২ পয়েন্ট।

পরের দিন ২০ জুন ডিএসইএক্স ৮২ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬০ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ২৪৪ দশমিক ১২ পয়েন্টে দাঁড়ায়। সিএএসপিআই ১৭৮ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১৪ হাজার ৭৮৬ দশমিক ৮২ পয়েন্টে।

এর পর দু-একদিন ছাড়া প্রতিদিনই সূচকের পাশাপাশি লেনদেন বেড়েছে দুই বাজারে।

দীর্ঘদিন ধরে দেশের পুঁজিবাজারে মন্দা চলছিল। ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। অনেক বিনিয়োগকারী বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন।

এই অবস্থায় গত ৬ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রায় আট লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।

পুঁজিবাজারে মন্দা কাটাতে কোনও দিক-নির্দেশনা ছিল না নতুন বাজেটে; উল্টো মূলধনি মুনাফা বা ক্যাপিটাল গেইনের ওপর ছিল করের প্রস্তাব। এই অবস্থায় বাজেট পেশের পরও দরপতন অব্যাহত থাকে বাজারে।

বাজেট পেশের আগে ডিএসইসহ বাজার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দাবি ছিল, ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে নতুন করে যেন করারোপ করা না হয়। কিন্তু বাজেট প্রস্তাবে পুঁজিবাজারে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফায় কর আরোপের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী।

বৃহস্পতিবারের বাজার পরিস্থিতি

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর থেকে পুঁজিবাজারে টানা দরপতন চলতে থাকে। এই সময়ে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার বাজার মূলধন হারায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। পতন ঠেকাতে তিন শতাংশের সার্কিট ব্রেকার দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তারপরও ধারাবহিক দরপতন ঘটতে থাকে দুই বাজারে।

বাজেট পেশের আগে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পড়তে পড়তে ৫ হাজার ২৫০ পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছিল। বাজেট প্রস্তাবের দিন ৬ জুন ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ২৩৭ দশমিক ৩২ পয়েন্ট।

ঈদের ছুটির আগে ১৩ জুন শেষ লেনদেন দিবসে ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ১১৭ দশমিক ৮১ পয়েন্ট।

বৃহস্পতিবার ডিএসই’র অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ২২ দশমিক ১৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২০৮ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে। ডিএস-৩০ সূচক ৩০ দশমিক ৪০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯৫১ দশমিক ৩৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

এদিন ডিএসইতে ৭৭০ কোটি ৭০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন বুধবার লেনদেনে অঙ্ক ছিল ৫৩৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

বৃহস্পতিবার ডিএসইতে মোট ৩৯৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৬৫টির। কমেছে মাত্র ১৩টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ১৮টির দর।

এদিন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩০৬ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৫ হাজার ৪৬৩ দশমিক ৫২ পয়েন্টে।

লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। বুধবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

২৪৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৯৯টির। কমেছে ৩১টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ১৭টির দর।

ডিএসইতে লেনদেন ৭০০ কোটি টাকা ছাড়াল পরবর্তী

ডিএসইতে লেনদেন ৭০০ কোটি টাকা ছাড়াল

কমেন্ট