চাঙা পুঁজিবাজার, ডিএসইতে লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়াল

চাঙা পুঁজিবাজার, ডিএসইতে লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়াল

নতুন অর্থবছরের ছয় কর্মদিবস লেনদেনে হয়েছে পুঁজিবাজারে। এই ছয় দিনই মূল্যসূচক বেড়েছে দুই বাজারে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের অঙ্কও।

নতুন অর্থবছরে আশার সঞ্চার হচ্ছে দেশের পুঁজিবাজারে। ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছর। এর পর থেকেই চাঙাভাবে ফিরেছে পুঁজিবাজার। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বাড়ছে। বাড়ছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর।

আর এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসছে; যারা বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তারা ফের বাজারমূখী হয়েছেন।

নতুন অর্থবছরের ছয় কর্মদিবস লেনদেনে হয়েছে পুঁজিবাজারে। এই ছয় দিনই মূল্যসূচক বেড়েছে দুই বাজারে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের অঙ্কও।

টানা উত্থানে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে; প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৫ হাজার ৬০০ পয়েন্টে উঠেছে।

সপ্তাহের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার ডিএসইএক্স ৩০ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৫৯৪ দশমিক ৬৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১৯ কোটি টাকা।

এ নিয়ে নতুন অর্থবছরের ছয় কর্মদিবসে ডিএসইএক্স বেড়েছে ২৬৫ পয়েন্টের বেশি। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।

১৭ জুন দেশে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হয়। তার আগে থেকেই বাজার ইতিবাচক ধারায় ফেরার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল।

ডিএসই’র প্রতিদিনের লেনদেন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়,গত ১২ জুন থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৬ কার্যদিবসের মধ্যে ১৪ দিনই শেয়ারদর ও মূল্য সূচক বেড়েছে। এ সময়ে তালিকাভুক্ত ৯৫ শতাংশ শেয়ারের দর বেড়েছে।

ডিএসই’র প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে প্রায় ৫৫০ পয়েন্ট বা ১০ শতাংশ। অর্থনীতির খারাপ সময়েও পুঁজিবাজারের এমন ঊর্ধ্বমুখী ধারায় খুশি বিনিয়োগকারীরা। এর আগের দর পতনে যে ক্ষতি হয়েছিল, তার কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারছেন তারা।

৩০ জুন শেষ হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছর। ওইদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৭১২ কোটি টাকার কিছুটা বেশি। নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন ১ জুলাই ছিল ব্যাংক হলিডে; ওই দিন পুঁজিবাজারও বন্ধ ছিল। ২ জুলাই ছিল ডিএসইতে লেনদেন ৪৪০ কোটি টাকায় নেমে আসলেও টানা ছয় দিন বেড়ে তা মঙ্গলবার দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১৯ হাজার টাকায়।

জুনে অর্থবছর শেষ হওয়ার আগে আগে আয়কর সুবিধা নেওয়ার কারণে সাধারণত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ে। কারণ করযোগ্য আয়ের একটি অংশ বিনিয়োগ করলে তার ১৫ শতাংশ কর ছাড় পাওয়া যায়।

ডিএসইর প্রধান সূচকের অবস্থান এখন গত দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ, আর মঙ্গলবারের লেনদেন গত ৭ মের পর সর্বোচ্চ।

গত ১১ জুন ডিএসইর প্রধান সূচক পাঁচ হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি নেমে আসার ঘটনায় হতাশা ও ক্ষোভের মধ্যেই পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করে।

নতুন অর্থবছর থেকে পুঁজিবাজারে মূলধনি আয়ে অর্থাৎ শেয়ার কেনা-বেচা করে ৫০ লাখ টাকা মুনাফা করলে করারোপ হয়েছে, যদিও এই প্রস্তাব আরোপ হবে- এমন কথা ছড়িয়ে পড়ার পর মে মাসের মাঝামাঝি থেকে নতুন করে দরপতন শুরু হয়েছিল।

তবে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এসব কিছুই না, ফ্লোর প্রাইস বা দরপতনের সার্কিট ব্রেকার কমিয়ে দিয়ে পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক গতিকে রুদ্ধ করার প্রভাবের সময় অন্য কোনো আলোচনা প্রাধান্য পায়। দর সংশোধন কৃত্রিমভাবে আটকে রাখার চেষ্টা কখনও ভালো কিছু নিয়ে আসে না। সেই দর সংশোধন শেষে এখন স্বাভাবিক উত্থান চলছে।

বাজারের চাঙাভাবে সন্তোষ প্রকাশ করে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “অনেক দিন পর পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসছে। এটা খুবই ভালো লক্ষণ।”

তিনি বলেন, “বাজার অনেক পড়ে গিয়েছিল। সব শেয়ারের দাম কমতে কমতে অনেক নিচে নেমে গিয়েছিল। এই দামে শেয়ার কিনলে লোকসানের আশঙ্কা খুবই কম। সে কারণেই বিনিয়োগকারীরা বাজারমূখী হয়েছেন; দেখেগুনে শেয়ার কিনছেন। সূচক বাড়ছে। মনে হচ্ছে, বাজার এখন ভালোর দিকে যাবে।”

“পতনের বাজারে যারা শেয়ার বিক্রি করেছিলেন, তারা কেনা শুরু করেছেন। গত কয়েকদিনে অনেকেই হারানো পুঁজির কিছুটা পেয়েছেন। আশা দেখতে শুরু করেছেন সব ধরনের বিনিয়োগকারী, তাই অনেকেই নতুন করে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন। বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।”

প্রধান সূচকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মঙ্গলবার ডিএসইর অন্য দুই সূচকও বেড়েছে। শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ৮ দশমিক ১৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২২৩ দশমিক ৩২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর তালিকাভূক্ত কোম্পানির মধ্যে ‘সেরা’ ৩০টি নিয়ে গঠিত ডিএস৩০ সূচক ৪ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৬৪ দশমিক ৫৩ পয়েন্টে।

লেনদেন হওয়া ৩৯৩টি শেয়ারের মধ্যে দর বেড়েছে ২৩৭টির, কমেছে ১১১টির এবং আগের দিনের দরে লেনদেন হয় ৪৫টি প্রতিষ্ঠানের।

সিএসইতেও উত্থান

ডিএসই’র মতো নতুন অর্থবছরের ছয় কর্মদিবসে দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

মঙ্গলবার সিএসই’র সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৯৪ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৫ হাজার ৮৮৯ দশমিক ৬২ পয়েন্টে।

১১কোটি ২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

২৮১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৭৩টির। কমেছে ৭৭টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ৩১টির দর।

নতুন অর্থবছরে আশার আলো পুঁজিবাজারে পরবর্তী

নতুন অর্থবছরে আশার আলো পুঁজিবাজারে

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর