ফের দরপতন পুঁজিবাজারে
নতুন অর্থবছরে আশার সঞ্চার হয়েছিল পুঁজিবাজারে। ১ জুলাই থেকে শুরু হয় ২০২৪-২৫ অর্থবছর। এর পর থেকেই চাঙাভাব দেখা যাচ্ছিল বাজারে। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বাড়ছিল।
কয়েক দিন চাঙাভাবের পর ফের দরপতনের ধারায় ফিরেছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও কমেছে; কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর।
সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বড় দরপতনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে লেনদেন। দুই বাজারেই সূচকের সঙ্গে লেনদেনও কমেছে। প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬১ দশমিক৬৬ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৫০৬ দশমিক ৭৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে। আগের দিন বুধবার এই সূচক ২৬ দশমিক ১৯ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৫৬৮ দশমিক ৪৫ পয়েন্টে নেমিছিল।
বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৬৬৪ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বুধবার এই বাজারে ৯৬৭ কোটি ২২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল। আগের দিন মঙ্গলবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১ হাজার ১৯ কোটি টাকা; যা ছিল দুই মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।
নতুন অর্থবছরে আশার সঞ্চার হয়েছিল পুঁজিবাজারে। ১ জুলাই থেকে শুরু হয় ২০২৪-২৫ অর্থবছর। এর পর থেকেই চাঙাভাব দেখা যাচ্ছিল বাজারে। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বাড়ছিল। আর তাতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসতে শুরু করছিল।যারা বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তারা ফের বাজারমূখী হয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবারের আগে নতুন অর্থবছরের ছয় কর্মদিবস লেনদেনে হয় পুঁজিবাজারে। ওই ছয় দিনই মূল্যসূচক বেড়েছে; সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের অঙ্কও।
টানা উত্থানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৫ হাজার ৬০০ পয়েন্টে উঠেছিল। ছয় কর্মদিবসে ডিএসইএক্স বেড়েছিল ২৬৫ পয়েন্ট। কিন্তু দুই দিনের পতনে (বুধ ও বৃহস্পতিবার) এই সূচক কমেছে ৯০ পয়েন্টের মতো।
তবে এই পতনকে কারেকশন বা মূল্যসংশোধন বলছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী।
এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “শেষ দুই দিনে বাজারে সূচক কমাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এটা কারেকশন বা মূল্যসংশোধন। এটাই বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম। কয়েক দিন বাড়ার পর বাজার কারেকশন হবে, সেটাই হয়েছে। যারা কম দামে শেয়ার কিনেছিলেন, দাম বাড়ায় সেই য়োর বিক্রি করে দিয়ে মুনাফা তুলে নিয়েছেন। বিক্রির চাপে বুধ ও বৃহস্পতিবার সূচক কমেছে।”
‘আগামী দিনগুলোতে বাজার ভালো হবে’ আশার কথা শুনিয়ে শাকিল রিজভী বলেন, “অনেক দিন পর পুঁজিবাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরেছিল। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে। এটা খুবই ভালো লক্ষণ।”
“বাজার অনেক পড়ে গিয়েছিল। সব শেয়ারের দাম কমতে কমতে অনেক নিচে নেমে গিয়েছিল। এই দামে শেয়ার কিনলে লোকসানের আশঙ্কা খুবই কম। সে কারণেই বিনিয়োগকারীরা বাজারমূখী হয়েছেন; দেখেগুনে শেয়ার কিনছেন। মনে হচ্ছে, বাজার এখন ভালোর দিকে যাবে।”
১৭ জুন দেশে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হয়। তার আগে থেকেই বাজার ইতিবাচক ধারায় ফেরার আভাস পাওয়া যায়।
ডিএসই’র প্রতিদিনের লেনদেন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়,গত ১২ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত ১৬ কর্মদিবসের মধ্যে ১৪ দিনই শেয়ারদর ও মূল্য সূচক বেড়েছে। এ সময়ে তালিকাভুক্ত ৯৪ শতাংশ শেয়ারের দর বেড়েছিল।
ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে প্রায় ৫৫০ পয়েন্ট বা ১০ শতাংশ। অর্থনীতির খারাপ সময়েও পুঁজিবাজারের এমন ঊর্ধ্বমুখী ধারায় খুশি হয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা। এর আগের দর পতনে যে ক্ষতি হয়েছিল, তার কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারছেন তারা।
৩০ জুন শেষ হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছর। ওইদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৭১২ কোটি টাকার কিছুটা বেশি। নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন ১ জুলাই ছিল ব্যাংক হলিডে; ওই দিন পুঁজিবাজারও বন্ধ ছিল। ২ জুলাই ছিল ডিএসইতে লেনদেন ৪৪০ কোটি টাকায় নেমে আসলেও টানা ছয় দিন বেড়ে তা মঙ্গলবার দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১৯ হাজার টাকায়।
প্রধান সূচকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বৃহস্পতিবার ডিএসইর অন্য দুই সূচকও বেশ খানিকটা কমেছে। শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ১১ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২০৭ দশমিক ৫৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর তালিকাভূক্ত কোম্পানির মধ্যে ‘সেরা’ ৩০টি নিয়ে গঠিত ডিএস৩০ সূচক ১৫ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৪২ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ৩৯৭টি শেয়ারের মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৩৬টির, কমেছে ৩৪৩টির এবং আগের দিনের দরে লেনদেন হয় ১৮টি প্রতিষ্ঠানের।
সিএসইতেও পতন
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১২৮ দশমিক ০৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৫ হাজার ৭৫৭ দশমিক ৬০ পয়েন্টে।
৯ কোটি ১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
২৬৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৪৩টির। কমেছে ২১২টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ১২টির দর।
কমেন্ট