আন্দোলনের ধাক্কা পুঁজিবাজারে, বড় দরপতন

আন্দোলনের ধাক্কা পুঁজিবাজারে, বড় দরপতন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের অসহযোগ এবং সরকারের পদত্যাগের এক দফা আন্দোলনের প্রথম দিন রবিবার ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে পুঁজিবাজার। ধস নেমেছে শেয়ারদরে; সূচকের সঙ্গে লেনদেনেও ধস নেমেছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে চলমান আন্দোলনের অস্থিরতার মধ্যে সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে বাজার। ধস নেমেছে শেয়ারদরে। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনেও ধস নেমেছে।

রবিবার প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০৪ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২২৯ দশমিক ২৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে। শতাংশ হিসাবে কমেছে প্রায় ২ শতাংশ। লেনদেন হয়েছে মাত্র ২০৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৯৩ দশমিক ১৮ পয়েন্ট কমে নেমেছে ১৪ হাজার ৯২৬ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

টানা কয়েকদিন দরপতনের পর গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে মূল্যসূচক বেশ খানিকটা বেড়েছিল। ওইদিন ডিএসই’র প্রধান সূচক ৫৩ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৩৩৩ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। লেনদেন ৫৫২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

তার আগে সবশেষ গত ১৬ জুলাই ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৫৬৪ কোটি ৪১ লাখ টাকার। এর পর কোনো দিন লেনদেন ৫০০ কোটি টাকা ছাড়ায়নি। মাঝখানে গত ২৫ জুলাই সর্বোচ্চ ৪৯৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়।

কোটা আন্দোলনকে ঘিরে বেশ কিছুদিন ধরে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা চলছিল। আন্দোলনে সহিংসতায় প্রাণহাণির মধ্যে কারফিউ শুরুর পর পূর্ণদিবস অফিস চালু হয় ৩১ জুলাই বুধবার। পুঁজিবাজারেও আগের মতো স্বাভাবিক লেনদেন হয়। সেই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবারও পুঁজিবাজারেও পূর্ণদিবস লেনদেন হয়।

কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে গত ১৮ জুলাই সংঘাতে প্রাণহানির পর ২১ থেকে ২৩ জুলাই কারফিউয়ের মধ্যে লেনদেন বন্ধ ছিল পুঁজিবাজারে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের অসহযোগ এবং সরকারের পদত্যাগের এক দফা আন্দোলনের প্রথম দিন রবিবার ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে পুঁজিবাজার। ধস নেমেছে শেয়ারদরে; সূচকের সঙ্গে লেনদেনেও ধস নেমেছে।

রবিবার প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৯৭ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ৬টি কোম্পানির শেয়ার দর। কমেছে ৩৭২টির দর। অপরিবর্তিত ছিল ১৯টির দর।

অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৯৩ দশমিক ১৮ পয়েন্ট কমে নেমেছে ১৪ হাজার ৯২৬ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

১৭৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ১০টির। কমেছে ১৫৪টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ১১টির দর।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিধান অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানি বা মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার বা ইউনিটের দাম এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারে না। তাই দিনের শুরুতেই বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী তাদের হাতে থাকা শেয়ার ৩ শতাংশ কম দামে বিক্রির চেষ্টা করেন। শুরুতে বাজারে বিক্রেতার তুলনায় ক্রেতা ছিল কম। ফলে শেয়ারের হাতবদল হয়েছে খুবই কম।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কেউই নতুন করে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি শুরু করায় বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। আশা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাজার আবার তার স্বাভাবিক রূপ ফিরে পাবে।”

ঢাকার বাজারে আজ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২০৮ কোটি টাকা। সর্বশেষ ১৮ জুলাই এই বাজারে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৫৯ কোটি টাকা। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় কারফিউ জারি ও সাধারণ ছুটির পর ২৪ জুলাই শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়। ওই দিনও সূচকের বড় পতন হয়েছিল। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছিল ৯৫ পয়েন্ট।

একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে সশরীর উপস্থিতি বলতে গেলে ছিলই না। দুপুরের পর মুঠোফোনে ফোর-জি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হলে বিনিয়োগকারীদের অনলাইনে লেনদেনে অংশ নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাজার আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

টানা তিন দিন বন্ধ বাজার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনা ঘটার পর সোমবার থেকে আবার তিন দিনের (৫, ৬ ও ৭ আগস্ট) সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এ ছুটির সময়ে দেশের সব ব্যাংক বন্ধ থাকবে এবং পুঁজিবাজারে লেনদেন হবে না।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “সাধারণ ছুটির কারণে যেহেতু ব্যাংকগুলোতে কোনো লেনদেন হবে না, তাই এই তিন দিন পুঁজিবাজারেও লেনদেন বন্ধ থাকবে।”

ফের দরপতন পুঁজিবাজারে পরবর্তী

ফের দরপতন পুঁজিবাজারে

কমেন্ট