বেক্মিমকো, ইসলামী ব্যাংকসহ ৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইসও উঠে যাচ্ছে
পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন থেকে বিনিয়োগকারীদের রক্ষার জন্য ২০২২ সালে ২৮ জুলাই বিএসইসি ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে। এতে বাজারে দরপতন থামানো গেলেও একটি নির্দিষ্ট দরে এসে সব শেয়ারের প্রাইস আটকে যায়। যার কারণে বাজারে লেনদেন কমে যায়।
বেক্সিমকো লিমিটেড ও ইসলামী ব্যাংকসহ বাকি ছয় কোম্পানিরও সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস উঠে যাচ্ছে যাচ্ছে। দুই বছর পর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই ছয় কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস উঠে যাচ্ছে।
এর মধ্যে বেক্সিমকো লিমিটেড, খুলনা পাওয়ার ও শাহজিবাজার পাওয়ার—এর সর্বনিম্ন মূল্যস্তর উঠবে আগামী সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার। আর বাকি তিনটির ফ্লোর প্রাইস উঠবে বুধবার। সেই কোম্পানি তিনটি হলো ইসলামী ব্যাংক, বিএসআরএম লিমিটেড ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম।
গত বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক এবং মূখপাত্র রেজাউল করিম এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার পর ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়। সে সময় অফিস বন্ধ থাকায় বিএসইসি’র ওয়েবসাইটে অর্ডারটি প্রকাশ করা যায়নি।”
পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন থেকে বিনিয়োগকারীদের রক্ষার জন্য ২০২২ সালে ২৮ জুলাই বিএসইসি ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে। এতে বাজারে দরপতন থামানো গেলেও একটি নির্দিষ্ট দরে এসে সব শেয়ারের প্রাইস আটকে যায়। যার কারণে বাজারে লেনদেন কমে যায়।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বিএসইসি ধাপে ধাপে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে।
বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে নিজ কার্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। বৃহস্পতিবার বাসা থেকে তিনি এই ছয় কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার–সংক্রান্ত আদেশে সই করেন।
বিএসইসির আদেশ বলা হয়, ইসলামী ব্যাংক, বিএসআরএম লিমিটেড ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের শেয়ারের ওপর ১৩ আগস্ট পর্যন্ত ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকবে। এই তিন কোম্পানিসহ বর্তমানে পুঁজিবাজারের ছয়টি কোম্পানির ওপর ফ্লোর প্রাইস রয়েছে। বিএসইসির আদেশ অনুযায়ী, বাকি তিনটি শেয়ারের ওপর ফ্লোর প্রাইস রোববার থেকে প্রত্যাহার হবে।
ফ্লোর প্রাইস উঠে গেলেও এসব শেয়ারের দামের উত্থান–পতনের ক্ষেত্রে বিএসইসির নিয়ম অনুযায়ী সার্কিট ব্রেকার বা মূল্যসীমা আরোপিত থাকবে। সেই নিয়ম অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত অন্য সব কোম্পানির মতো এই ছয় কোম্পানির শেয়ারের দাম দিনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারবে। আর কমতে পারবে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ।
ছুটছে পুঁজিবাজার
এদিকে ছুটছে পুঁজিবাজার; সাড়ে চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সূচক বেড়েছে বৃহস্পতিবার। সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে ক্ষমতার পালা বদলের পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসায় পুঁজিবাজারে উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের লেনদেনে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩০০ পয়েন্টের বেশি বেড়ে ৫ হাজার ৯২৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত ৪ বছর ৭ মাসের মধ্যে একদিনে এই সূচক সর্বোচ্চ বেড়েছে।
এর আগে ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি ডিএসইএক্স ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছিল।
লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৬০৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। যা ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এই বাজারে ১ হাজার ৬৪৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল।
ক্ষমতার পালা বদলের পর প্রথম দিন মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ২০০ পয়েন্ট বেড়েছিল। শতাংশ হিসাবে বেড়েছিল ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। লেনদেন হয়েছিল ৭৫০ কোটি টাকা।
সেই ধারাবাহিকতায় বুধবারও ডিএসই’র মূল্যসূচকে উল্লম্ফন দেখা যায়; প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৯২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বাড়ে; শতাংশ হিসাবে বাড়ে সাড়ে ৩ শতাংশের বেশি।
মঙ্গলবার থেকে টানা তিন দিনের উত্থানে ডিএসইএক্স ৭০০ পয়েন্টের মতো বেড়েছে। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্র দেখা গেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে ছয় কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিল বিএসইসি।
পুঁজিবাজারে পতন ঠেকাতে ২০২০ সাল থেকে কয়েক দফায় শেয়ারবাজারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়। এর ফলে শেয়ারের দাম বিএসইসির বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সীমার নিচে নামার কোনো সুযোগ ছিল না।
সর্বশেষ দফায় ২০২২ সালের ২৮ জুলাই সব শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ওপর ফ্লোর প্রাইস আরোপ করেছিল বিএসইসি। এরপর বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর একটি বড় অংশের শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে যায়। এতে দেড় বছর ধরে এসব কোম্পানির শেয়ারের তেমন কোনো লেনদেন হয়নি।
পুঁজিবাজারেও একধরনের স্থবিরতা নেমে আসে। এ অবস্থায় বাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি থেকে কয়েক ধাপে শেয়ারবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়।
সর্বশেষ ধাপে গত বৃহস্পতিবার ৬টি কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হলে শেয়ারের দাম কমার ক্ষেত্রে ৩ শতাংশের সার্কিট ব্রেকার বা মূল্যসীমা এখনো বহাল রয়েছে।
বেক্মিমকো লিমিটেড সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা পুঁজিবাজারের আলোচিত নাম সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন একটি কোম্পানি। সালমানের মালিকানাধীন আরও কয়েক কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত। সেগুলো হচ্ছে—বেক্সিমকো ফার্মা, শাইনপুকুর সিরামিকস ও আইএফআই ব্যাংক।
৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর চাঙাভাব দেখা দিয়েছে পুঁজিবাজারে। বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দামই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কিন্তু সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন সব কোম্পানির শেয়ারের দামই কমছে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারকে তার স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে হলে ৩ শতাংশ মূল্যসীমার বিধানটিও তুলে নেওয়া দরকার। কারণ, এই সীমার কারণে শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতা পাওয়া যায় না। শেয়ার বিক্রি করতে না পারলে শেয়ার কেনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন ব্যক্তিশ্রেণির বড়–মাঝারি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।
যেহেতু বাজারে এখন কিছুটা গতি ফিরেছে, তাই এখনই এ মূল্যসীমা তুলে নেওয়ার ভালো সময় বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
কমেন্ট