দুই ব্রোকারেজ হাউসের ব্যাংক ও বিও হিসাব জব্দ
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বিএসইসির কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিএসইসি।
পুঁজিবাজারের দুই ব্রোকারেজ হাউসের সব পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (জব্দ) ও বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে ধানমন্ডি সিকিউরিটিজ লিমিটেড ও পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেড।
সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে অর্থের ঘাটতির কারণে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত এই দুই ব্রোকারেজ হাউসের সব পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহীর ব্যাংক এবং বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
পাশাপাশি এসব ব্যক্তির বিদেশযাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বিএসইসির কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিএসইসি।
এর আগে গত ২৯ আগস্ট গ্রাহক হিসাবে অর্থ ও সিকিউরিটিজ ঘাটতির কারণে মশিউর সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে একই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
বিএসইসি জানিয়েছে, গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি পূরণের জন্য ধানমন্ডি ও পিএফআই সিকিউরিটিজ সময় বাড়ানোর আবেদন করে। কিন্তু কমিশন প্রতিষ্ঠান দুটির এই আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
এর মধ্যে ব্রোকারেজ হাউস দুটির সব পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহীর ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বা বিএফআইইউকে চিঠি দেওয়া হবে। এ ছাড়া এসব ব্যক্তির বিও হিসাব জব্দে বিও হিসাব সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিডিবিএলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি ব্রোকারেজ হাউস দুটি পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা সিইওরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন, এ জন্য পুলিশের বিশেষ শাখাকে অনুরোধ জানানো হবে বলে জানিয়েছে বিএসইসি।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, গত ২১ আগস্ট পর্যন্ত পিএফআই সিকিউরিটিজের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি অর্থের পরিমাণ ছিল ২৮ কোটি টাকা। আর ২০ আগস্ট পর্যন্ত ধানমন্ডি সিকিউরিটিজের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি অর্থের পরিমাণ ছিল পৌনে ৮ কোটি টাকা।
নিয়ম অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচার জন্য ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে নগদ অর্থ জমা রাখেন বিনিয়োগকারীরা। এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউসের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে জমা থাকে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, গ্রাহকের সমন্বিত হিসাব থেকে বেশ কিছু ব্রোকারেজ হাউসে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এ কারণ বিনিয়োগকারী, তথা গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষায় বিএসইসির পক্ষ থেকে এখন নানা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ব্যাংক ও বিও হিসাব স্থগিতের পাশাপাশি ধানমন্ডি ও পিএফআই সিকিউরিটিজের পক্ষ থেকে শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে প্রাপ্ত ফ্রি–লিমিট সুবিধাও বাতিল করা হয়েছে। এমনকি এ দুটি ব্রোকারেজ হাউস স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ারের মালিকানাবাবদ যে লভ্যাংশ পায়, তা–ও স্থগিত করা থাকবে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠান দুটির নিবন্ধন সনদ নবায়ন, শাখা বা বুথ খোলার অনুমোদনও বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে বিএসইসি।
বিএসইসির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, গ্রাহক হিসাব অর্থঘাটতি পূরণের পরবর্তী এক বছর পর্যন্ত ব্রোকারেজ হাউস দুটির ওপর বিশেষ তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করবে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি প্রতি মাসে দুইবার গ্রাহক হিসাবের অর্থ ও সিকিউরিটিজের হিসাব পরীক্ষা করবে।
জানা গেছে, পিএফআই সিকিউরিটিজের পরিচালক রয়েছেন মোট ১২ জন। তারা হলেন—তারেক একরামুল হক, নাসিম ইকবাল, শাহরিয়ার খালেদ, কে এম রকিব হাসান, কাজী সালমান সারওয়ার, মোস্তাফিজুর রহমান, মনজুর আহমেদ, মোহাম্মদ জাভেদ লিয়াকত, মোহাম্মদ ফারুক, মোহাম্মদ ইয়ামিন কবির, মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান ও কাজী ফরিদউদ্দিন আহমেদ।
আর ধানমন্ডি সিকিউরিটিজের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন চারজন। তারা হলেন—মিজানুর রহমান খান, আকতার জাহান খান, মেজবাহ উদ্দিন ও আসিফ ইসলাম খান।
কমেন্ট