নাফিজ সরাফাতের প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম তদন্তে কমিটি
কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বিএসইসির এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের আলোচিত নাম চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের মালিকানাধীন সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের (এসইএমএল) অনিয়ম তদন্ত করবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সব কার্যক্রমে কোনও অনিয়ম ছিল কি না—তা খতিয়ে দেখতে বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ এমদাদুল হককে প্রধান করে বুধবার তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। অন্য দুই সদস্য হলেন বিএসইসির উপপরিচালক রফিকুন নবী ও সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবু হেনা মোস্তফা।
কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বিএসইসির এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন। অভিযোগ আছে, তিনি পুঁজিবাজারে কারসাজি করতেন; বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের লোকজনের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত পুঁজিবাজারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বিএসইসিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করতেন।
স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের ‘অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড’ বা বিকল্প বিনিয়োগ বিধিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না—তা খতিয়ে দেখতে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি প্রতিষ্ঠানটির সব বিনিয়োগের বৈধ প্রমাণ ও এর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিনিয়োগ থেকে উদ্ভূত স্বার্থের দ্বন্দ্বের বিষয়টিও খতিয়ে দেখবে।
কমিটি ব্যাংক স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করবে এবং হিসাব বছর শেষের ব্যালেন্স যাচাই করবে। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোতে মেয়াদি আমানত ও অন্যান্য ব্যালেন্স থেকে পাওয়া সুদ/মুনাফার বৈধ প্রমাণাদি পরীক্ষা করবে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের নামে নাফিজ সরাফাত পদ্মা ব্যাংক থেকে কয়েক’শ কোটি টাকা সরিয়ে নেন। বিকল্প বিনিয়োগের নামে পদ্মা ব্যাংক থেকে ২০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ স্থানান্তর করা হয় এই সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিতে।
পরে সেই অর্থ নাফিজ সরাফতের মালিকানাধীন অন্যান্য কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয়। এভাবে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিটির মাধ্যমে পদ্মা ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে।
বিকল্প বিনিয়োগের নামে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিতে তহবিলের ব্যবহার এবং এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে বিএসইসি গঠিত তদন্ত কমিটিকে।
বিএসইসি জানিয়েছে, তদন্ত কমিটি স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বা বিকল্প বিনিয়োগ তহবিলের বিনিয়োগসংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ের পাশাপাশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আইনকানুন যথাযথভাবে পরিপালন করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে।
এছাড়া বিনিয়োগের বিপরীতে তথ্যপ্রমাণ যাচাই-বাছাই, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনও ধরনের স্বার্থের সংঘাত ঘটেছে কি না, তহবিলের ব্যাংক হিসাবের হালনাগাদ তথ্য যাচাই-বাছাই, তহবিলের অর্থ ব্যাংকে জমার বিপরীতে কী পরিমাণ সুদ পেয়েছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের বিপরীতে কী পরিমাণ মুনাফা পেয়েছে—এসব তথ্যও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে কমিটিকে।
এর বাইরে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিটির বিকল্প বিনিয়োগ তহবিলের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য যেকোনো ধরনের অনিয়মও খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।
নাফিজ সরাফাতের মালিকানাধীন স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট একটি সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০২৩ সালে বিএসইসির নিবন্ধন পায়। এই প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে চারটি মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। এই চারটি ফান্ডের প্রাথমিক আকার ৩২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় পৌনে দুই’শ কোটি টাকার দুটি তহবিলের উদ্যোক্তা বা স্পন্সর পদ্মা ব্যাংকসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। আবার দীর্ঘদিন পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন নাফিজ সরাফাত। অর্থাৎ নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট এক প্রতিষ্ঠান থেকে নিজেরই আরেক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের নামে অর্থ সরিয়ে নেন তিনি।
কমেন্ট