ছুটছে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দর, দেড় মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৮০ শতাংশ
রাজধানীর মতিঝিলের দিলকুশায় ইসলামী ব্যাংক টাওয়ার
ক্ষমতার পালাবদলের পর চাঙাভাবে ফিরতে শুরু করেছিল বাংলাদেশের পুঁজিবাজার; এখন আর সেই আশা নেই। ফের মন্দাভাবে ফিরেছে।
কিন্তু এই হতাশার মধ্যেও ছুঁটছে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দর; দেড় মাসে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় এই ব্যাংকটির দর বেড়েছে ৮০ শতাংশ।
ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর গত দেড় মাসে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারশ’র বেশি কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে ইসলামী ব্যাংকের। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার সময় ফ্লোর প্রাইস ৩২ টাকা ৬০ পয়সায় ক্রেতা ছিল না ব্যাংকটির শেয়ারের।
সোমবার সেই ব্যাংকের শেয়ার ৫৮ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন শেষ হয়েছে। এর দর গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১২ সালের এপ্রিলে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য ৫০ টাকার ওপরে ছিল।
সোমবার ব্যাংকটির দাম ৪ টাকা ৪০ পয়সা বেড়েছে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ। সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার লেনদেন শেষ হয়েছিল ৫৪ টাকা ৩০ পয়সায়। দ্বিতীয় দিস সোমবার লেনদেন শুরু হয় ৫৫ টাকায়। বাড়তে বাড়তে ৫৯ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত উঠে যায়। শেষ পর্যন্ত ৫৮ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন শেষ হয়।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির গত তিন মাসের তথ্য পর্যালোচনা করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এ সময়ে অন্য ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দাম এই ব্যাংকের তুলনায় তেমন বাড়েনি। দুর্বল মানের কিছু ব্যাংকের শেয়ারদর এ সময়ে কমেছে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুরকে গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই নানা অনিয়ম, ঋণ কেলেঙ্কারি ও পাহাড়সম খেলাপি ঋণে জর্জরিত ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা আনতে নানা উদ্যোগ নেন।
সে উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত ২১ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনার কথা জানান। তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান পর্ষদ ভেঙে দিয়ে সরকারের সহযোগিতায় ছোট আকারে পর্ষদ গঠন করা হবে।
পরের দিন ২২ আগস্ট রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও রূপালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
একই সঙ্গে চার জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা হলেন—বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল জলিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. এম মাসুদ রহমান, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট আবদুস সালাম।
এর মধ্য দিয়ে এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয় ইসলামী ব্যাংক। মূলত এর পর থেকেই ব্যাংকটির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ে; চড়তে থাকে দাম।
ডিএসই’র তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক মাসের ব্যবধানে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। গত ২৫ আগস্ট ব্যাংকটির শেয়ারের দর ছিল ৪৪ টাকা।
আওয়ামীলীগ সরকার আমলে ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে গিয়েছিল দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক।
ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদে পরিচালক হওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক গ্রুপ ব্যাংকটির শেয়ার কিনছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তাই ব্যাংকের শেয়ারের ওপর ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা সত্ত্বেও এর শেয়ারের দাম বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
আওয়ামীলীগ সরকার আমলে ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে গিয়েছিল দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক। এ সময় ব্যাংকটির পর্ষদ সদস্য ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
ব্যাংক দখলের পর সেখান থেকে নামে-বেনামে বিপুল অঙ্কের ঋণ উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে এস আলমের নামে। বর্তমানে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, সিআইডি ও দুদক এস আলম গ্রুপ ও এর চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো তদন্ত করছে।
জানা যায়, গত ২৭ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকাবস্থায় গত সাড়ে সাত বছরে ব্যাংক থেকে নেওয়া সব ঋণ পুনঃনিরীক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ব্রোকারেজ হাউসের কর্ণধার এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “মালিকানা বদলের ফলে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা যেমন দুর্বল হয়ে গিয়েছিল, তেমনি অনিয়মের ঘটনাও ঘটেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের ধারণা, ব্যাংকটি পরিচালনায় গুণগত পরিবর্তন হবে। এমনকি পুরোনো শেয়ারধারীদের কেউ কেউ আবার মালিকানায় ফিরতে পারে। এ সব কারণে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দর বাড়ছে।”
কমেন্ট