পুঁজিবাজারে সংস্কার: অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে বিএসইসি
অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন ও সংস্কারে পথনকশা বা রোডম্যাপ তৈরি করা হবে।
অবশেষে পুঁজিবাজারের অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সংস্থাটি জানিয়েছে, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন ও সংস্কারে পথনকশা বা রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। আজ শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিএসইসি।
বিএসইসি জানিয়েছে, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কারে অংশীজনদের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। তারই ধারাবাহিকতায় আগামী সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম), বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটস (বিএএসএম) ও ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক করবে বিএসইসি।
এরপর মঙ্গলবার সংস্থাটি বৈঠক করবে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন বা ডিবিএ, মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ বা বিএপিএলসি, অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ড (এএএমসিএমএফ), অ্যাসোসিয়েশন অব ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি অব বাংলাদেশ (এসিআরএবি), ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) ও ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) সঙ্গে।
বিএসইসি আরও জানিয়েছে, উল্লিখিত সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠকের পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য চেম্বার, এজেন্সি ও বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করবে কমিশন।
বিএসইসি বলছে, শেয়ারবাজারের অংশীজন ও তাদের মতামতের ভিত্তিতে বাজারের টেকসই উন্নয়ন ও সংস্কার সম্ভব বলে মনে করে কমিশন। সবার মতামত, অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় একটি স্বচ্ছ ও সমৃদ্ধ পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর বিএসইসি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুথানে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়। এরপর ১৯ আগস্ট সাবেক ব্যাংকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে বিএসইসি পুনর্গঠন করা হয়। রাশেদ মাকসুদ দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ারবাজারের অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে বাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে, চার সদস্য বিশিষ্ট বিএসইসির বর্তমান কমিশনে শেয়ারবাজার বিষয়ে সরাসরি অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন কেউ নেই। আবার নতুন কমিশন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগও স্থাপন করছে না।
ফলে নীতি সিদ্ধান্ত গ্রহণে নানা অসংগতি ও আইনের ব্যত্যয় ঘটছে। এ অবস্থায় বাজারের একটি পক্ষ কমিশনের কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করে। এমনকি নতুন কমিশন গঠনের পর এক মাসের বেশি অতিবাহিত হলেও বিএসইসির সব শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গেও কোনো বৈঠক করেনি কমিশন। এমন পরিস্থিতি বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্নের মুখে পড়ে এখন বাজার অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিএসইসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২৩ সেপ্টেম্বর বিএসইসির সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে কমিশন।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেরিতে হলেও কমিশন তাদের অবস্থান বদল করে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে, এটি বাজারের জন্য ভালো দিক। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে বাজারের বিভিন্ন সমস্যা ও করণীয় বিষয়ে নানা সুপারিশ উঠে আসবে। বাজারের স্বার্থে যেসব সুপারিশ গ্রহণযোগ্য, যাচাই-বাছাইয়ের পর সেগুলো বাস্তবায়ন করা হলে তাতে দীর্ঘ মেয়াদে বাজারে তার সুফল মিলবে।
কমেন্ট