চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে বিএসইসি ভবনে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ

চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে বিএসইসি ভবনে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ

বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসির কার্যালয়ের সামনে সন্ধ্যা সোয়া ৭টা পর্যন্ত তারা বিক্ষোভ করে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবি করে। এ সময় তারা বিএসইসি ভবনের প্রধান গেটে তালা লাগিয়ে দেয়।

পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে ক্ষুব্ধ ছোট বিনিয়োগকারীরা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রধান কার্যালয়ের সামনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসির কার্যালয়ের সামনে সন্ধ্যা সোয়া ৭টা পর্যন্ত তারা বিক্ষোভ করে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবি করে। এ সময় তারা বিএসইসি ভবনের প্রধান গেটে তালা লাগিয়ে দেয়।

বিক্ষোভ শুরুর পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

‘সাধারণ বিনিয়োগকারী’ ব্যানারে দুই শতাধিক বিনিয়োগকারী বিএসইসির ফটকের সামনে অবস্থান নেয়। আর তিনটি ভ্যানে করে আসা পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নেয় বিএসইসির ভেতরে। এ অবস্থায় অফিস সময় শেষ হলেও ৭টা পর্যন্ত বিএসইসির কোনো কর্মচারী বের হতে পারেননি।

পরে পুলিশের অনুরোধে সোয়া ৭টার দিকে বিনিয়োগকারীরা প্রধান গেটের তালা খুলে দিলে চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তারা অফিস থেকে বের হয়ে যান।

চলে যাওয়ার সময় বিক্ষোভকারীরা আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, শনিবারের মধ্যে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ পদত্যাগ না করলে রবিবার তারা আবার বিক্ষোভ করবেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিনিয়োগকারীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় বিনিয়োগকারীরা বিএসইসির সামনের সড়ক অবরোধ করে ‘অযোগ্য বিএসইসির চেয়ারম্যান হঠাও দেশের পুঁজিবাজার বাঁচাও’ স্লোগান দেন।

এক পর্যায়ে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা গিয়ে আলোচনা করার জন্য আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি পাঠানোর আহ্বান জানান। তবে বিক্ষোভকারীরা তা প্রত্যাখান করেন।

বিক্ষোভের সময় বিনিয়োগকারীরা দাবি করেন, নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পর যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবং মূলধন হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তাই বিএসইসির চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ করতে হবে।

এ সময় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বিএসইসি ভবন ঘেরাও করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বিএসইসি ভবনের মূল ফটকের সামনে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

এর আগে সকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে মতিঝিলে জড়ো হন বিনিয়োগকারীরা। বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় বিএসইসির উদ্দেশে লংমার্চ কর্মসূচির সময়সূচি কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। তবে মতিঝিলে ডিএসইর পুরাতন ভবনের সামনে দ্বিতীয় দিনের মতো মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন বিনিয়োগকারীরা।

পরে সাড়ে ১১টার দিকে বিনিয়োগকারীরা লংমার্চ কর্মসূচি শুরু করেন।

বিএসইসির সামনে বিক্ষোভকালে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের অর্থ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান বলেন, বিএসইসি চেয়ারম্যান না বুঝে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। যে কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তাই বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ করা খুবই জরুরি। বিনিয়োগকারীদের এখন একটাই দাবি, বিএসসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ করতে হবে।

বিক্ষোভকারীদের একজন আমির হোসেন বলেন, কোম্পানি জেড ক্যাটেগরিতে পাঠানো হয়েছে মালিকের কারণে। আমরাতো সাধারণ বিনিয়োগকারী, আমাদেরতো লোকসান হল। মার্চেন্ট ব্যাংকের ঋণ নিয়ে শেয়ার কিনেছি, তারা তো সব বিক্রি করে দিচ্ছে দাম কমে যাওয়ায়।"

একসঙ্গে ২৭টি কোম্পানি জেড শ্রেণিতে পাঠানোয় বাজার পড় গেছে বলে দাবি করেন আমির হোসেন।

‘সাধারণ বিনিয়োগকারী’ ব্যানারে আন্দোলনে নামলেও তাদের নেতৃত্বে দেখা যায় বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রশিদ চৌধুরীকে।

তিনি বলেন, “আমাদের একটাই দাবি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ করতে হবে।”

গত বুধবার দুপুরে একদল বিনিয়োগকারী মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তারা পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক দরপতনের জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ভুল নীতিকে দায়ী করে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

এর পর তারা বৃহস্পতিবার লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর কিছুদিন শেয়ারবাজারে সূচকের উল্লম্ফন হলেও একপর্যায়ে শেয়ারের দরপতন শুরু হয়। সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে। এর মধ্যে বিএসইসিতে নতুন প্রশাসন কাজ শুরু করেছে, কিন্তু পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়নি।

টানা দরপতনের ধারায় গত বুধবার ঢাকার পুঁজিবাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের পতন হয় ১৩২ দশমিক ২৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএসের পতন হয়েছে ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ; ডিএস ৩০ সূচকের পতন হয়েছে ২ দশমিক ৫১ শতাংশ। লেনদেন হয়েছিল ৪৪০ কোটি টাকার শেয়ার। আগের দিন মঙ্গলবার ডিএসইএক্স পড়েছিল ৩৮ পয়েন্টের বেশি।

সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইতে সূচক না পড়লেও লেনদেন নেমেছে ৩১৫ কোটি টাকায়।

গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগের দিন সূচক এর চেয়ে কিছুটা কম থাকলেও বিনিয়োগকারীর লোকসান ছিল এখনকার তুলনায় কম।

৪ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ কর্মদিবসে ডিএসইএক্সের অবস্থান ছিল ৫ হাজার ২২৯ পয়েন্ট। সরকার পতনের পর চার কর্মদিবসে সূচক বাড়ে প্রায় আটশ পয়েন্ট।

সে সময় এক দিনে লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা ছুঁয়ে ফেলে। সে সময় যারা বিনিয়োগ করেছেন, তাদের সেই সিদ্ধান্ত এখন গলার কাঁটা হয়ে গেছে।

প্রাথমিক সেই উচ্ছ্বাস থেমে যাওয়ার পর ১২ অগাস্ট থেকে সূচক কমেছে ৫৬০ পয়েন্ট, বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা।

বিনিয়োগকারীরা এমনিতেই আস্থার অভাবে ভুগছিলেন, এমন সময়ে এক দিনে ২৮টি কোম্পানিকে জেড শ্রেণিতে নিয়ে যাওয়া হয় গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে। যেটি দরপতনকে আরও ত্বরান্বিত করেছে বলে মনে করেন বিনিয়োগকারীরা।

পুঁজিবাজারে বড় পতন, বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ পরবর্তী

পুঁজিবাজারে বড় পতন, বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ

কমেন্ট