পুঁজিবাজার পতনে বিক্ষোভ, বিএসইসির নিরাপত্তায় সশস্ত্র বাহিনী

পুঁজিবাজার পতনে বিক্ষোভ, বিএসইসির নিরাপত্তায় সশস্ত্র বাহিনী

বিক্ষোভ শুরু হয় গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার। ওইদিন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি ভবনের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা। সেদিন সন্ধ্যা সোয়া ৭টা পর্যন্ত তারা বিক্ষোভ করে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবি করে।

পুঁজিবাজার পতনের ধারায় থাকার প্রতিবাদে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভের পর এই বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কার্যালয়ে নিরাপত্তায় যুক্ত হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী।

বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী ও সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোমবার বিএসইসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবারও পতনের ধারায় ছিল দেশের দুই পুঁজিবাজার। কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর।

বিএসইসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবকাঠামো হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী এর সুরক্ষায় দায়বদ্ধ থাকবে। বিএসইসির কার্যক্রম যথাযথ প্রক্রিয়ায় ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এরই ধরাবাহিকতায় রবিবার বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সঙ্গে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল মীর এরশাদ আলী এবং সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বিএসইসির কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিএসইসির সরকার ঘোষিত গুরত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোর (সিআইআই) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিএসইসির সুষ্ঠু নিরাপত্তা নিশ্চিতে আগারগাঁও শেরেবাংলা নগর প্রশাসনিক এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সহায়তা করবে বলে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের প্রতিবাদে গত কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন একদল বিনিয়োগকারী। সোমবারও বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বিক্ষোভ করেছেন।

এই বিক্ষোভ শুরু হয় গত বুধবার থেকে। ওইদিন দুপুরের দিকে একদল বিনিয়োগকারী মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তারা পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক দরপতনের জন্য বিএসইসির ভুল নীতিকে দায়ী করে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

সেদিন বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই বিক্ষোভ হয়।

বিক্ষোভ শুরু হয় গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার। ওইদিন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি ভবনের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা। সেদিন সন্ধ্যা সোয়া ৭টা পর্যন্ত তারা বিক্ষোভ করে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবি করে।

বিক্ষোভ শুরুর পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ‘সাধারণ বিনিয়োগকারী’ ব্যানারে দুই শতাধিক মানুষ বিএসইসির ফটকের সামনে অবস্থান নেয়। আর পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নেয় বিএসইসির ভেতরে। এ অবস্থায় অফিস সময় শেষ হলেও সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিএসইসির কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী বের হতে পারেননি। পরে পুলিশের অনুরোধে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে বিক্ষোভকারীরা প্রধান ফটকের তালা খুলে দিলে চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তারা অফিস থেকে বের হয়ে যান।

চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবারও একদল মানুষ বিএসইসি ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। একই দিন বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে মতিঝিলের বক চত্বরেও বিক্ষোভ হয়।

সবশেষ সোমবারও আগারগাঁওয়ে বিএসইসি ভবনের সামনে একদল মানুষ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। তবে এদিন তারা বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি না করে পুঁজিবাজারের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে ‘রোডম্যাপ’ চেয়েছেন।

সোমবারের বাজার পরিস্থিতি

সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবারও পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে। দুই বাজারেই কমেছে লেনদেনর অঙ্ক।

দিন শেষে দেশের প্রধান বাজার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৪৩.৭২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৩৩৫ পয়েন্টে। অপর দুই সূচক ডিএসই শরিয়া সূচক ১.৪৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৮৯ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ২২.০৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৪২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

এদিন ডিএসইতে মোট ৩৯৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৫৩টি কোম্পানির, কমেছে ২৮৮টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৫৫টির।

মোট ৩৬৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩৬৮ কোটি ১৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক ৮৮.১২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯ হাজার ১১৫ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৫৪.৫০ পয়েন্ট কমে ১৫ হাজার ১২ পয়েন্টে, শরিয়া সূচক ১১.৬৭ পয়েন্ট কমে ৯৭৯ পয়েন্টে এবং সিএসই ৩০ সূচক ১২১.৮৪ পয়েন্ট কমে ১২ হাজার ২৪৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সিএসইতে ১৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৪৮টি কোম্পানির, কমেছে ১২২টির এবং অপরিবর্তিত আছে ২৬টির।

দিন শেষে সিএসইতে ৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

পুঁজিবাজার সংস্কারে ৫ সদস্যের টাস্কফোর্স পরবর্তী

পুঁজিবাজার সংস্কারে ৫ সদস্যের টাস্কফোর্স

কমেন্ট