পুঁজিবাজারে ধসের কারণ খুঁজতে তদন্ত কমিটি
কমিটির প্রধান করা হয়েছে সংস্থাটির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ শামসুর রহমানকে।
পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের কারণ অনুসন্ধানে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
রবিবার এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে সংস্থাটির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ শামসুর রহমানকে। অন্য সদস্যরা হলেন—বিএসইসির উপপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারিসুল হাসান রিফাত, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সহকারী মহাব্যবস্থাপক কাজী মিনহাজ উদ্দিন।
তদন্ত কমিটি গঠনসংক্রান্ত বিএসইসির আদেশে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার দরপতনের ধারায় রয়েছে। এই পতনকে অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে দরপতনের কারণ খতিয়ে দেখা দরকার। এ জন্য গঠিত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
কমিটিকে বেশ কয়েকটি বিষয় খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। এ জন্য সুনির্দিষ্ট কার্যপরিধিও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে—সাম্প্রতিক সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের টানা পতনের কারণ অনুসন্ধান, এ সময়ে বাজারে গুজব ছড়ানোর সঙ্গে কোনো ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন কি না—তা খুঁজে দেখা, দরপতনের পেছনে আকস্মিক কোনো ঘটনা রয়েছে কি না ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধিতে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ করবে কমিটি।
বিএসইসির পক্ষ থেকে এমন এক সময়ে এই তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, যখন টানা পতনে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছে।
সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার সাড়ে তিন বছরে মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে পুঁজিবাজারে। বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর হারানোয় ডিএসইএক্স ১৪৯ দশমিক ২০ পয়েন্ট হারিয়ে ৪ হাজার ৯৬৫ দশমিক ৩৯ পয়েন্টে নেমেছে।
এই সূচক প্রায় চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর ডিএসইএক্স পড়তে পড়তে ৪ হাজার ৯৩৪ দশমিক ৮৬ পয়েন্টে নেমে এসেছিল।
শতাংশ হিসাবে রবিবার সূচক পতনের হার ছিল প্রায় ৩ শতাংশ। যা সাড়ে তিন বছরের সর্বোচ্চ পতন। ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল ঢাকার বাজারে ডিএসইএক্স সূচকটি ১৮১ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ হারিয়ে ৫ হাজার ৮৯ পয়েন্টে নেমেছিল।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক প্রায় ৩০০ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার পয়েন্টে নেমে এসেছে। শতাংশ হিসাবে এই সূচক কমেছে ২ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ।
পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের প্রতিবাদে ক্ষুব্দ বিনিয়োগকারীরা রবিবার দুপুরে মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন করেছে। বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন বিনিয়োগকারীরা।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর পুঁজিবাজারে ব্যাপক উত্থান শুরু হয়। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। টানা চার কর্মদিবসে (৬, ৭, ৮ ও ১১ আগস্ট) প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৮০০ পয়েন্টের মতো বেড়েছিল।
১১ আগস্ট ডিএসইএক্স ৯১ পয়েন্টের বেশি বেড়ে ৬ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে ৬ হাজার ১৫ দশমিক ৯০ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। লেনদেন ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
তবে ১২ ও ১৩ আগস্ট বাজার হোঁচট খায়; এই দুই দিনে ডিএসইএক্স প্রায় ১৫০ পয়েন্টের মতো পড়ে যায়; সূচক নেমে আসে ৫ হাজার ৮৬৭ দশমিক ৯৬ পয়েন্টে। লেনদেন নেমে আসে হাজার কোটি টাকায়।
এরই মধ্যে ১৩ আগস্ট অর্থনীতিবিদ পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
তার নিয়োগের খবরে ১৪ আগস্ট দুই বাজারেই সূচক বাড়ে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বাড়ে ৮৪ দশমিক ৮১ পয়েন্ট। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বাড়ে ১৩২ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট।
মাসরুর রিয়াজের নিয়োগের পরপরই বিতর্ক ওঠার প্রেক্ষাপটে তার নিয়োগ স্থগিত রাখে সরকার। এ খবরে ১৫ আগস্ট দুই বাজারেই সূচকের পতন দেখা যায়। ডিএসইএক্স ৪৮ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৯০৩ দশমিক ৮৩ পয়েন্টে দাঁড়ায়।
এরই মধ্যে ১৬ আগস্ট পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান মাসরুর রিয়াজ। পদত্যাগের কারণ জানিয়ে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতিও দেন মাসরুর।
এমন পরিস্থিতিতে ১৮ আগস্ট দুই বাজারেই মূলসূচকের বড় পতন হয়েছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১২৫ দশমিক ১৯ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৭৭৮ দশমিক ৬৩ পয়েন্টে নেমে আসে।
মাসরুর রিয়াজ রাজি না হওয়ায় ১৮ আগস্ট পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের জন্য খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে নিয়োগ দেয় সরকার।
কিন্তু পুঁজিবাজারে পতন থামেনি। দু-একদিন ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই সূচক পড়েছে দুই বাজারে। লেনদেনেও খরা চলছে।
কমেন্ট