পতন থেমেছে পুঁজিবাজারে, সূচকের উত্থান

পতন থেমেছে পুঁজিবাজারে, সূচকের উত্থান

মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১৮ দশমিক ৮০ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার পয়েন্টের উপরে ৫ হাজার ১৭ দশমিক ৩২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে প্রায় আড়াই শতাংশ।

পতন থেমেছে পুঁজিবাজারে। টানা পতনের পর চলতি সপ্তাহের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার দুই বাজারেই মূল্যসূচক বেড়েছে। বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর।

অব্যাহত দরপতনে দেশের প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছিল। যা ছিল চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

সেই ধারাবাহিকতায় চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই দিন রবিবার ও সোমবারও বড় পতন হয় বাজারে। রবিবার ডিএসইএক্স প্রায় ১৫০ পয়েন্ট পড়েছিল। সোমবার ৬৭ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৮৯৮ দশমিক ৫২ পয়েন্টে নেমে এসেছিল।

তৃতীয় দিনে মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১৮ দশমিক ৮০ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার পয়েন্টের উপরে ৫ হাজার ১৭ দশমিক ৩২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে প্রায় আড়াই শতাংশ।

অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৯৬ দশমিক ১৮ পয়েন্ট বেড়ে ১৪ হাজার ১৭ দশমিক ৫০ পয়েন্টে দাড়িয়েছে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে ১ দশমিক ৪২ শতাংশ।

রবিবার ধসের পর পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের কারণ অনুসন্ধানে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

কমিটির প্রধান করা হয়েছে সংস্থাটির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ শামসুর রহমানকে। অন্য সদস্যরা হলেন—বিএসইসির উপপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারিসুল হাসান রিফাত, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সহকারী মহাব্যবস্থাপক কাজী মিনহাজ উদ্দিন।

তদন্ত কমিটি গঠনসংক্রান্ত বিএসইসির আদেশে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার দরপতনের ধারায় রয়েছে। এই পতনকে অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে দরপতনের কারণ খতিয়ে দেখা দরকার। এ জন্য গঠিত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

কমিটিকে বেশ কয়েকটি বিষয় খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। এ জন্য সুনির্দিষ্ট কার্যপরিধিও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে—সাম্প্রতিক সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের টানা পতনের কারণ অনুসন্ধান, এ সময়ে বাজারে গুজব ছড়ানোর সঙ্গে কোনো ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন কি না—তা খুঁজে দেখা, দরপতনের পেছনে আকস্মিক কোনো ঘটনা রয়েছে কি না ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধিতে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ করবে কমিটি।

তদন্ত কমিটি সোমবার কাজ শুরু করার পর মঙ্গলবার বাজারে পতন থেমেছে।

বাজার বিশ্লেষক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, “বাজারে বর্তমানে আস্থার সংকট বেশী। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে না পারলে পুঁজিবাজার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে না।”

এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “পতনের পর পতনে বাজারে আতঙ্ক বিরাজ করছিল। আজ (মঙ্গলবার) সূচক বাড়ায় সেই আতঙ্ক কিছুটা হয়ত কমেছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।”

“আর এই আস্থা ফেরাতে আজ (মঙ্গলবার) আমরা ডিএসই’র পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ করেছি। এগুলো বাস্তবায়ন হলে বাজার ভালোর দিকে যাবে।”

ডিএসই’র বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, “পুঁজিবাজারকে দক্ষ, স্বচ্ছ ও অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বর্তমানে একটি দুর্লভ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত পরিবর্তন, অনিয়ম-দূর্নীতির তদন্ত ও বিচারের সাথে সাথে বিনিয়োগকারী এবং মধ্যস্থতাকারীদের আস্থা অর্জনে বাজার সংশ্লিষ্ট সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

“আর এজন্য ডিএসই কিছু কাজ স্বল্পমেয়াদী করছে। যেখানে প্রধান চ্যালেঞ্জ শেয়ারবাজারের প্রতি আস্থা পুনরুদ্ধার করা। সেটির কয়েকটি ধাপ রয়েছে। একটি হলো—নীতিগত সহায়তা বৃদ্ধি করা, এজন্য আমরা এনবিআর-এর সাথে যোগাযোগ করে শেয়ারবাজারের স্বার্থে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স, ডিভিডেন্ড ট্যাক্স, টার্নওভার ট্যাক্স হ্রাসসহ প্রাসঙ্গিক সমস্যাগুলো দূর করার চেষ্টা করছি।

“আরেকটি হলো তারল্য সাপোর্ট। এজন্য আমাদের দেশীয় উৎসের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া হবে৷ ব্যাংক খাতের মত শেয়ারবাজারের জন্য সরকারের সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন। বাজার মধ্যস্থতাকারীরা যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একসাথে একটি প্লাটফর্ম হিসেবে যেতে পারি, তবে আমাদের পলিসিগত সুবিধা পাওয়া সহজ হবে,” বলেন তিনি।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর পুঁজিবাজারে ব্যাপক উত্থান শুরু হয়। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। টানা চার কর্মদিবসে (৬, ৭, ৮ ও ১১ আগস্ট) প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৮০০ পয়েন্টের মতো বেড়েছিল।

১১ আগস্ট ডিএসইএক্স ৯১ পয়েন্টের বেশি বেড়ে ৬ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে ৬ হাজার ১৫ দশমিক ৯০ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। লেনদেন ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

তবে ১২ ও ১৩ আগস্ট বাজার হোঁচট খায়; এই দুই দিনে ডিএসইএক্স প্রায় ১৫০ পয়েন্টের মতো পড়ে যায়; সূচক নেমে আসে ৫ হাজার ৮৬৭ দশমিক ৯৬ পয়েন্টে। লেনদেন নেমে আসে হাজার কোটি টাকায়।

এরই মধ্যে ১৩ আগস্ট অর্থনীতিবিদ পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

তার নিয়োগের খবরে ১৪ আগস্ট দুই বাজারেই সূচক বাড়ে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বাড়ে ৮৪ দশমিক ৮১ পয়েন্ট। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বাড়ে ১৩২ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট।

মাসরুর রিয়াজের নিয়োগের পরপরই বিতর্ক ওঠার প্রেক্ষাপটে তার নিয়োগ স্থগিত রাখে সরকার। এ খবরে ১৫ আগস্ট দুই বাজারেই সূচকের পতন দেখা যায়। ডিএসইএক্স ৪৮ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৯০৩ দশমিক ৮৩ পয়েন্টে দাঁড়ায়।

এরই মধ্যে ১৬ আগস্ট পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান মাসরুর রিয়াজ। পদত্যাগের কারণ জানিয়ে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতিও দেন মাসরুর।

এমন পরিস্থিতিতে ১৮ আগস্ট দুই বাজারেই মূলসূচকের বড় পতন হয়েছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১২৫ দশমিক ১৯ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৭৭৮ দশমিক ৬৩ পয়েন্টে নেমে আসে।

মাসরুর রিয়াজ রাজি না হওয়ায় ১৮ আগস্ট পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের জন্য খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে নিয়োগ দেয় সরকার।

কিন্তু পুঁজিবাজারে পতন থামেনি। দু-একদিন ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই সূচক পড়েছে দুই বাজারে। লেনদেনেও খরা নেমে আসে।

অনেক দিন পর মঙ্গলবার দুই বাজারেই সূচক বেশ খানিকটা বেড়েছে।

মঙ্গলবারের বাজার পরিস্থিতি

মঙ্গলবার ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১৮ দশমিক ৮০ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১৭ দশমিকট ৩২ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়া সূচক ২৬ দশমিক ২০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১১৩ দশমিক ৬৬ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৫২ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৮৫৮ দশমিক ২৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

এদিন ডিএসইতে মোট ৩৯৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৩১২টিরই দাম বেড়েছে। কমেছে ৫৭টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২৫টির দর।

৩৪৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। সোমবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৩৫৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৯৬ দশমিক ১৮ পয়েন্ট বেড়ে ১৪ হাজার ১৭ দশমিক ৫০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ১২১ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৫২৭ পয়েন্টে। শরিয়া সূচক ১০ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট বেড়ে ৯০৩ পয়েন্টে এবং সিএসই ৩০ সূচক ১৮১ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট বেড়ে ১১ হাজার ৬৯১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

এদিন সিএসইতে ১৮০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১০২টির। কমেছে ৫৬টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২২টির দর।

১০ কোটি ৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। সোমবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

ডুবছে পুঁজিবাজার, দেখার কেউ নেই পরবর্তী

ডুবছে পুঁজিবাজার, দেখার কেউ নেই

কমেন্ট