পুঁজিবাজারে মূলধনী মুনাফায় কর অর্ধেকে নামল

পুঁজিবাজারে মূলধনী মুনাফায় কর অর্ধেকে নামল

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সোমবার এক প্রজ্ঞাপনে করহার কমানোর এই ঘোষণা দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়বে।

পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিনের মন্দা কাটাতে মূলধনি মুনাফার ওপর করহার (ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স) কমিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিদ্যমান আইনে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি আয়ের ওপর সর্বোচ্চ করহার ছিল ৩০ শতাংশ। সেই হার কমিয়ে অর্ধেক অর্থাৎ ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সোমবার এক প্রজ্ঞাপনে করহার কমানোর এই ঘোষণা দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়বে।

এ ছাড়া সম্পদশালী করদাতাদের প্রদেয় করের ওপর বিদ্যমান আইনে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হত। এতে পুঁজিবাজার থেকে অর্জিত মূলধনি মুনাফার ওপর আয়কর ও সারচার্জ বাবদ মোট ৪০ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে কর দিতে হত।

নতুন প্রজ্ঞাপনে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি মুনাফার ওপর প্রদেয় আয়কর ও সারচার্জ বাবদ সর্বোচ্চ করহার কমিয়ে ২০ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শেয়ার অর্জন–পরবর্তী লেনদেনের সময়–নির্বিশেষে অর্থাৎ শেয়ার ক্রয়ের পাঁচ বছরের মধ্যে অথবা পাঁচ বছর পরে সব ক্ষেত্রে শেয়ার বিক্রি থেকে অর্জিত মূলধনি আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর নির্ধারণ করা হয়েছে।

ফলে ১ জুলাই ২০২৪ থেকে ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত শেয়ার লেনদেন থেকে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি আয়ের পরিমাণ–নির্বিশেষে ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে।

এ ছাড়া করদাতার নিট সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি, ১০ কোটি, ২০ কোটি ও ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে প্রদেয় করের ওপর যথাক্রমে ১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ, ৩০ শতাংশ ও ৩৫ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হবে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, করদাতার ৫০ কোটি টাকার বেশি নিট সম্পদ থাকলে পুঁজিবাজার থেকে অর্জিত ৫০ লাখ টাকা অতিরিক্ত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর এবং সেই করের ওপর ৩৫ শতাংশ সারচার্জ দিতে হবে। তবে করদাতার নিট সম্পদের পরিমাণ ৫০ কোটি টাকার কম হলে সারচার্জের হার ৩৫ শতাংশের কম হতে পারে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত মূলধনি মুনাফা করমুক্ত রাখা হয়। ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফা করলে তার ওপর কর আরোপ করা হয়। সেকেন্ডারি বাজারে শেয়ার লেনদেন করে কোনো বিনিয়োগকারী এক বছরে ৫৫ লাখ টাকা মুনাফা করলে মুনাফার ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত-সুবিধার আওতায় আছে। বাকি পাঁচ লাখ টাকার মুনাফা ওই বিনিয়োগকারীর মোট আয়ের সঙ্গে যুক্ত হতো।

সম্প্রতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মূলধনি মুনাফার ওপর আরোপিত কর প্রত্যাহারের দাবি জানায় দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের সঙ্গে এক বৈঠকে এই দাবি জানানো হয়।

এরপর মূলধনি মুনাফার ওপর কর পুরোপুরি প্রত্যাহার করা না হলেও করহার কমানো হলো।

চাঙাভাব পুঁজিবাজারে

এদিকে মূলধনী মুনাফায় কর কমানোর খবরে চাঙাভাব দেখা দিয়েছে পুঁজিবাজারে। দুই পুঁজিবাজারেই মূল্যসূচক বেড়েছে। বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর।

সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬১ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ২৫২ দশমিক ৪৯ পয়েন্টে। শতাংশ হিসাবে এই সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ১৮ শতাংশ।

অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়া সূচক ১৫ দশমিক ২৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৬২ দশমিক ৩৯ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ২২ দশমিক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯৩৭ দশমিক ৫৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ১৯৯ পয়েন্টে উঠেছিল। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার অবশ্য এই সূচক ৮ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৯০ দশমিক ৮৫ পয়েন্টে নেমে আসে।

সোমবার ডিএসইতে মোট ৩৯২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২৫৭টির দাম বেড়েছে। কমেছে ১০৭টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩২টির দর।

৫৬৫ কোটি ২৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। রবিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৪৩১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

টানা পতনের পর গত সপ্তাহের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার দুই বাজারেই মূল্যসূচক বাড়ে; বেড়েছিল বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর।

অব্যাহত দরপতনে দেশের প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছিল। যা ছিল চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

সেই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহের প্রথম দুই দিন রবিবার ও সোমবারও বড় পতন হয় বাজারে। রবিবার ডিএসইএক্স প্রায় ১৫০ পয়েন্ট পড়েছিল। সোমবার ৬৭ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৮৯৮ দশমিক ৫২ পয়েন্টে নেমে এসেছিল।

তৃতীয় দিনে মঙ্গলবার পতন থেমে ঘুরে দাঁড়ায় বাজার। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১৮ দশমিক ৮০ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার পয়েন্টের উপরে ৫ হাজার ১৭ দশমিক ৩২ পয়েন্টে ওঠে। পরের দিন বুধবারও দুই বাজারে সূচকে উল্লম্ফন দেখা যায়। ওইদিন ডিএসইএক্স ১৪৭ দশমিক ৫১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৫ হাজার ১৬৪ পয়েন্টে।

অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জেও (সিএসই) গত কয়েক দিন একই চিত্র দেখা যায়।

সেই ধারাবাহিকতায় সোমবার সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১২২ দশমিক ০২ পয়েন্ট বেড়ে ১৪ হাজার ৫৮৪ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। শতাংশ হিসাবে এই সূচক বেড়েছে প্রায় ১ শতাংশ।

অন্য সূচকগুলোর মধ্যে সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ৮১ দশমিক ২০ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৮৭৮ পয়েন্টে। শরিয়া সূচক ১০ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট বেড়ে ৯৩৮ পয়েন্টে এবং সিএসই ৩০ সূচক ১১৩ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট বেড়ে ১২ হাজার ১১৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সোমবার সিএসইতে ২১৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৪২টির। কমেছে ৫৪টির এবং অপরিবর্তিত আছে ১৮টির দর।

বাজার বিশ্লেষক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “আমরা ডিএসই’র পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে মূলধনী মুনাফায় কর কমানোর দাবি জানিয়ে আসছি। বাজারের বাস্তব অবস্থা বুঝে এনবিআর এই করহার কমিয়েছে। সেই খবরেই সোমবার বাজারে সূচক বেড়েছে।”

‘এখন বাজার ভালোর দিকে যাবে’ আশার কথা শুনিয়ে তিনি বলেন, “বাজার অনেক পড়ে গিয়েছিল। এখন বিনিয়োগের সময়। বাজারের উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি শেষ কিছু উদ্যোগ নেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বিএসইসিতে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছে।”

 “সেই বৈঠকের সিদ্ধান্তের আলোকেই মূলধনী মুনাফায় কর কমানো হয়েছে। আরও কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে বলে মনে হচ্ছে। তাই সার্বিক বিবেচনায় মনে হচ্ছে বাজার এখন ভালো হবে।”

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পুঁজিবাজারে, সূচকে বড় উল্লম্ফন পরবর্তী

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পুঁজিবাজারে, সূচকে বড় উল্লম্ফন

কমেন্ট