যুদ্ধ আতঙ্কে পুঁজিবাজারে বড় পতন

যুদ্ধ আতঙ্কে পুঁজিবাজারে বড় পতন

কাশ্মীরে এই যুদ্ধবিমান পাকিস্তান ধবংস করেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের দামামায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বড় পতন হয়েছে। প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসই ১৫০ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৮০২ পয়েন্টে নেমে এসেছে।

এই সূচক চার বছর আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট ডিএসইএক্স কমতে কমতে ৪ হাজার ৭৮১ পয়েন্টে নেমে এসেছিল।

অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৭০ পয়েন্ট কমে ১৩ হাজার ৫৯০ পয়েন্টে নেমেছে।

বিক্রির চাপে দুই বাজারেই প্রায় সব শেয়ারের দাম কমেছে। ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যুদ্ধের ডামাডোলে মন্দা বাজারের পরিণতি কী হবে, তা নিয়ে দিশেহারা তারা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে বাজারে মন্দা চলছে। বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন। নতুন কমিশন (বিএসইসি) দায়িত্ব নেওয়ার পরও কোনও উন্নতি নেই; উল্টো বাজার পড়ছেই। সবার মধ্যে ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছিল। এর মধ্যেই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের দামামার কারণে বাজারে আরও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

এই যুদ্ধের জেরে বাজার আরও পড়বে, এই ভয়ে সবাই শেয়ার বিক্রি করে দিতে চাইছে। বিক্রির চাপেই বাজারে বড় পতন হয়েছে বলে জানান তারা।

পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জবাবে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কয়েকটি স্থানে বুধবার প্রথম প্রহরে সামরিক অভিযান চালায় ভারত। জবাবে পাকিস্তানও হামলা চালিয়েছে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে, যাতে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে।

এর জেরে বুধবার ঢাকার পুঁজিবাজারে বড় দরপতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শুরু হয়। লেনদেন শুরুর প্রথম ১০ মিনিটের মধ্যে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭০ পয়েন্টের বেশি পড়ে যায়। প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সূচক পড়ে যায় ৫০ পয়েন্টের বেশি। লেনদেন শেষ হওয়া পর্যন্ত পতনের ধারা অব্যাহত থাকে।

প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪৯ দশমিক ৩০ পয়েন্ট কমার মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়। সূচক নেমে এসেছে ৪ হাজার ৮০২ দশমিক ৪১ পয়েন্টে।

অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়া সূচক ডিএসইএস ৪১ দশমিক ৯২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৭ দশমিক ৯৮ পয়েন্টে নেমেছে। ডিএস৩০ সূচক ৪০ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৯৩ দশমিক ৪২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

বুধবার ডিএসইতে মোট ৩৯৯টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৯টির দাম বেড়েছে; কমেছে ৩৮৫টির। অপরিবর্তিত ছিল ৫টির দর।

এদিন ডিএসইতে মোট ৫১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের দিন মঙ্গলবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৫৪৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ১৫৭ দশমিক ২৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৩০৫ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৭০ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট কমে ১৩ হাজার ৫৯০ পয়েন্টে নেমেছে। শরিয়াহ সূচক ১৮ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট কমে ৮৭৬ পয়েন্টে এবং সিএসই ৩০ সূচক ১৫৪ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ৫৬৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

বুধবার সিএসইতে মোট ২১৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২০টির দর বেড়েছে; কমেছে ১৮৭টির। অপরিবর্তিত আছে ১০টির দর।

এদিন সিএসইতে ৬ কোটি ৫২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ১১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আতঙ্কেই বুধবার বাজারে বড় পতন হয়েছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী।

এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “এমনিতেই পতনের পর পতনে বাজারে আতঙ্ক বিরাজ করছিল। এরই মধ্যে যুদ্ধের আতঙ্কে আরও খারাপ অবস্থা হয়েছে। একদিনেই দেড়শ পয়েন্ট নেই। জানি না আগামী দিনে কী হবে?”

শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, “বাংলাদেশের পুঁজিবাজার একটি অদ্ভুত বাজার। যুক্তিযুক্ত কোনও কারণ ছাড়াই বাজারে পতন হয়। আজ ভারতের শেয়ারবাজারে সূচক বেড়েছে। তারা যুদ্ধ করছে, তাদের শেয়ার বাজার চড়ছে। আর তার প্রভাবে আমাদের বাজারে বড় পতন হচ্ছে।

“তবে এটাও ঠিক, পাশের দুই দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। তার প্রভাব আমাদের অর্থনীতিতে পড়বে। সব মিলিয়ে শেয়ারবাজারেও তার প্রভাব পড়াটা স্বাভাবিক। এখন দেখা যাক, শেষ পরিণতি কী হয়?”

বিএসইসির ২১ কর্মকর্তা বরখাস্ত পরবর্তী

বিএসইসির ২১ কর্মকর্তা বরখাস্ত

কমেন্ট