প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের খবরে ঘুরে দাঁড়াল পুঁজিবাজার, সূচক বাড়ল ১০০ পয়েন্ট
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুঁজিবাজার নিয়ে বৈঠকে বসছেন। ১১ মে (রবিবার) দুপুর ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। বৈঠকের বিষয় ‘পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণ’।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে বসছেন- এমন খবরে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আতঙ্কের ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার দুই বাজারেই মূল্যসূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে লেনদেন কমেছে।
এদিকে এদিন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অপসারণ দাবিতে কাফনের কাপড় পরে রাস্তায় নেমেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের দামামায় বুধবার দুই বাজারেই বড় পতন হয়। প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৫০ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৮০২ পয়েন্টে নেমে আসে, যা ছিল চার বছর আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।
২০২০ সালের ২৫ আগস্ট ডিএসইএক্স কমতে কমতে ৪ হাজার ৭৮১ পয়েন্টে নেমে এসেছিল।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৭০ পয়েন্ট কমে ১৩ হাজার ৫৯০ পয়েন্টে নেমেছিল।
বৃহস্পতিবার সেই ধাক্কা কিছুটা সামলে নিয়েছে পুঁজিবাজার। দিনশেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১০০ পয়েন্ট বেড়েছে। সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১১৩ পয়েন্ট।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুঁজিবাজার নিয়ে বৈঠকে বসছেন। ১১ মে (রবিবার) দুপুর ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। বৈঠকের বিষয় ‘পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণ’।
বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) আনিসুজ্জামান চৌধুরী, বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেককে উপস্থিত থাকবেন।
এই বৈঠককে ঘিরেই বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। এছাড়া সরকারের উপরের মহলের নির্দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) বিনিয়োগ বাজার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ফেরার পেছনে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন তারা।
বৃহস্পতিবারের বাজার পরিস্থিতি
আগের দিনের হারানো পয়েন্ট থেকে ১০০ পয়েন্ট পুনরুদ্ধার করেছে দেশের বড় পুঁজিবাজার ডিএসই। বৃহস্পতিবার ৯৯ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট যোগ হয় ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সূচকে। আগের দিন সূচক ছিল ৪ হাজার ৮০২ পয়েন্ট ।
বৃহস্পতিবার এই সূচক বেড়ে ৪ হাজার ৯০২ দশমিক ২৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়া সূচক ডিএসইএস ২৬ দশমিক ২৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৭৪ দশমিক ২৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএস৩০ সূচক ২৭ দশমিক ০৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৮২০ দশমিক ৪৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিন অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়লেও লেনদেন কমেছে।
বৃহস্পতিবার ডিএসইতে মোট ৩৯৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭৭টির দাম বেড়েছে; কমেছে মাত্র ১০টির। অপরিবর্তিত ছিল ৭টির দর।
৩৬৬ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৫১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার সিএসইর সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ৬০ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৩৬৬ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১১৩ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট বেড়ে ১৩ হাজার ৭০৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
শরিয়াহ সূচক ৭ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বেড়ে ৮৮৩ পয়েন্টে এবং সিএসই ৩০ সূচক ১০৩ দশমিক ০৫ পয়েন্ট বেড়ে ১১ হাজার ৬৭২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিন সিএসইতে মোট ১৮৯টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১২৯টির; কমেছে ৪৫টির। অপরিবর্তিত আছে ১৫টির দর।
বাজার বিশ্লেষক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আতঙ্কেই বুধবার বাজারে বড় পতন হয়েছিল। বাজার নিয়ে রবিবার প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের খবরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও আস্থা ফিরে এসেছে।
“সবাই ভাবছে এবার বোধ হয় ভালো কিছু হবে। এই খবরে বৃহস্পতিবার বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।”
তিনি বলেন, “এমনিতেই পতনের পর পতনে বাজারে আতঙ্ক বিরাজ করছিল। এরই মধ্যে যুদ্ধের আতঙ্কেও বুধবার বড় পতন হয়। বাংলাদেশের পুঁজিবাজার একটি অদ্ভুত বাজার। যুক্তিযুক্ত কোনও কারণ ছাড়াই বাজারে পতন হয়।
“বাজার স্বাভাবিক করতে হলে প্রথমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। বাজেট সামনে রেখে বিনিয়োগকারীদের আস্বস্ত করতে হবে যে, আগামীতে বাজার ভালো হবে। তাহলেই তারা বাজারমুখী হবে। বাজারের স্বাভাবিক গতি ফিরে আসবে।”
কাফনের কাপড় পরে রাস্তায় বিনিয়োগকারীরা
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অপসারণ দাবিতে বৃহস্পতিবার কাফনের কাপড় পরে রাস্তায় নামেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
পুঁজিবাজারে চলমান ধস, আস্থার সঙ্কট এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতার প্রতিবাদে দুপুর ২টার দিকে মতিঝিলে ডিএসই ভবনের সামনে এই প্রতীকী ‘কাফন মিছিল’ করেন তারা।
কর্মসূচির আয়োজন করে বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমআইএ)।
বিসিএমআইএর সভাপতি এসএম ইকবাল হোসেন বলেন, “আমরা আগামী সপ্তাহে কাফন মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম। কিন্তু বাজারের টানা পতনের প্রেক্ষাপটে তা এগিয়ে এনে আজই (বৃহস্পতিবার) আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”
তিনি বলেন, “বাজারে প্রতিদিন রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অথচ বিএসইসি চেয়ারম্যান দেশের বাইরে প্রশিক্ষণে। এখন আবার তাকে সরকার ১১ মে যমুনায় আয়োজিত পুঁজিবাজার উন্নয়ন সভায় তলব করেছে। বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ এখানেই, যাদের কারণে বাজার এই অবস্থায়, তাদের দিয়েই আবার উন্নয়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।”
বিসিএমআইএর সভাপতি বলেন, “আমরা কাফনের কাপড় পরে এসেছি। কারণ পুঁজিবাজারে আমাদের পুঁজি মৃতপ্রায়। এখন আর হারানোর কিছু নেই।”
ইকবাল হোসেন বলেন, “খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে বিএসইসি বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। বরং তার নীতিনির্ধারণী ভূমিকা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, কমিশনের কিছু সিদ্ধান্ত স্বচ্ছতা ও ভারসাম্যহীনতার পরিচায়ক, যা পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।”
মিছিলে অংশ নেওয়া বিনিয়োগকারীরা জানিয়েছেন, এই আন্দোলনের একমাত্র লক্ষ্য চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ।
কমেন্ট