অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে ১৪ ধাপ এগোল বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে ১৪ ধাপ এগোল বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে এবার ১৪ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। ১৭৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৩তম। গত বছর ছিল ১৩৭তম। এই তালিকায় ২০২১ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২০তম।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ ফাউন্ডেশন প্রকাশিত অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচক-২০২৩-এ এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের সূচকে ৫৪ দশমিক ৪ পয়েন্ট স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ, যা আগের বছরের স্কোর থেকে ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের সামগ্রিক স্কোর আঞ্চলিক ও বিশ্ব গড়ের চেয়ে কম।

সূচকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, নাগরিকের শ্রম ও সম্পদের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রত্যেক ব্যক্তির মৌলিক অধিকার। অর্থনৈতিকভাবে একটি সমাজে প্রতিটি নাগরিক শ্রম ও ব্যবসায় কতটুকু স্বাধীনতা ভোগ করছেন। কর্ম, উৎপাদন, ভোগ এবং যেভাবে খুশি সেভাবে বিনিয়োগ করার স্বাধীনতা পাচ্ছেন কি না। অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন দেশে শ্রম, পুঁজি এবং উৎপাদিত পণ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে বাধ্য সরকার। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে তৈরি করা হয় এই সূচক।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ভিত্তি ভঙ্গুর রয়ে গেছে। দেশটিতে দুর্নীতি ও বিচার বিভাগের অদক্ষতা আইনের শাসনকে ক্ষুণ্ন করে। কাঠামোগত সমস্যা এবং দুর্বল শাসন উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। অদক্ষ নিয়ন্ত্রক শাসন প্রায়শই ব্যাপকভাবে রাজনীতিকরণ করা হয়। এ ছাড়া উন্মুক্ত বাজারকে উদারীকরণ বা টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিগুলো অর্থনীতিতে সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে হ্রাস পায়।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, পাঁচ বছর ধরে উন্নতির ধারা অব্যাহত থাকলেও গত বছর ১৭ ধাপ পিছিয়ে যায় বাংলাদেশ। সে হিসাবে এবারের তালিকায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। ২০২২ সালের সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ১০০ এর মধ্যে ৫২ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২১ সালে ছিল ৫২ দশমিক ৫। তার আগের বছর ৫৬ দশমিক ৫ স্কোর নিয়ে ১৮৪ দেশের মধ্যে ১২০তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। এর আগে ২০২০ সালের এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২২তম। ২০১৯ সালে ছিল ১২১তম। ২০১৮ এবং ২০১৭ সালে এই অবস্থান ছিল একই; ১২৮তম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে আইনের শাসন দুর্বল। দেশটিতে নাগরিকদের সম্পত্তি অধিকার, বিচারিক কার্যকারিতা এবং সরকারের সততা স্কোর বিশ্ব গড় থেকে কম। বাংলাদেশে ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা অনেক। এর মধ্যে রয়েছে দুর্বল অবকাঠামো, অনির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ, অপ্রাপ্য অর্থায়ন এবং অস্বাভাবিক আকারের আমলাতন্ত্র। দেশটিতে শ্রম আইন ভালোভাবে প্রয়োগ করা হয় না।

সবশেষ সূচকে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনের শাসনের অবনতি ও নাগরিকের শ্রমের স্বাধীনতা কমে যাওয়ায় আগের বছরের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। তবে নাগরিকের ওপর করের বোঝা কিছুটা কমিয়ে আনা ও বিভিন্ন উন্নয়নকাজে সরকারের ব্যয় ছিল প্রশংসনীয়। পাশাপাশি, সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠায় বড় ধরনের বৈষম্য দেখা গেছে এই সূচকে। দলিলপত্রের জটিলতা ও মানহীন ব্যবস্থাপনা সম্পত্তি হস্তান্তরে ব্যাপক বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থান

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এ বছর বাংলাদেশের অবস্থান ‍দ্বিতীয়। তবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৩৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ২৬তম স্থানে রয়েছে। এবার ৯০তম অবস্থানে থাকা ভুটান দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ যা প্রথম ১০০ দেশের তালিকায় রয়েছে। গত বছর দেশটির অবস্থান ছিল ৯৪তম। ভুটানের স্কোর ৫৯ পয়েন্ট। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে ভারতে অবস্থান ১৩১তম। দেশটির স্কোর গত বছরের চেয়ে ১ শতাংশ কমে ৫২ দশমিক ৯ পয়েন্ট হয়েছে।

তালিকায় শ্রীলঙ্কার অবস্থান ১৩৬তম, স্কোর ৫২ দশমিক ২ পয়েন্ট। এ ছাড়া নেপাল ১৪২তম (স্কোর ৫১ দশমিক ৪ পয়েন্ট), পাকিস্তান ১৫২তম (স্কোর ৪৯ দশমিক ৪ পয়েন্ট) এবং মালদ্বীপ ১৬০তম (স্কোর ৪৬ দশমিক ৬ পয়েন্ট)। তালিকায় আফগানিস্তানের কোনো তথ্য দেয়া হয়নি।

শীর্ষ অবস্থানে কারা

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে ৮০-এর বেশি স্কোর করে শীর্ষ চারে রয়েছে সিঙ্গাপুর (স্কোর ৮৩.৯), সুইজারল্যান্ড (স্কোর ৮৩.৮), আয়ারল্যান্ড (স্কোর ৮২.০) ও তাইওয়ান (স্কোর ৮০.৭)। সূচকে এই দেশগুলোকে রাখা হয়েছে ‘পূর্ণ স্বাধীন’ ক্যাটাগরিতে। ‘প্রায় পূর্ণ স্বাধীন’ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে নিউজিল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক, সুইডেন,  ফিনল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ২২টি দেশকে। ‘মধ্যম স্বাধীন’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে জাপান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামসহ ৫৫টি দেশ। ‘প্রায় অধীন’ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে বাংলাদেশসহ ৬৪টি দেশ।

মাথাপিছু বিদেশি ঋণ
৬৪ হাজার টাকা পরবর্তী

মাথাপিছু বিদেশি ঋণ ৬৪ হাজার টাকা

কমেন্ট