‘তাহলে দাম বেঁধে দিয়ে লাভ কী’
১৫ দিন হতে চললেও এই তিন পণ্যের একটির দামও কমেনি; আগের সেই চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে।
১৫ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু ১৫ দিন হতে চললেও এই তিন পণ্যের একটির দামও কমেনি; আগের সেই চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে।
এর মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে জাতীয়-ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করেছেন। জরিমানা করেছেন। ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে দাম বেঁধে দিয়ে লাভ কী?
১৫ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সংবাদ সম্মেলনে করে প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২ টাকা, আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা, হিমাগার পর্যায়ে ২৬-২৭ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজের দাম হবে ৬৪-৬৫ টাকা বেঁধে দেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা শীর্ষক বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী ওইদিন তিন পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছিলেন।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিদিনের খুচরা বাজার দর অনুযায়ী, শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি আলু মানভেদে ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকা টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া প্রতি হালি ফার্মের ডিম ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
কিন্তু শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল ও শেওড়াপাড়া—এই তিন কাঁচাবাজারের কোনোটিতেই সরকার নির্ধারিত প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়নি। প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। এ হিসাবে প্রতিটির দাম পড়ে কমপক্ষে ১২ টাকা ৫০ পয়সা।
প্রতি কেজি সাদা আলু ৪৮-৫০ টাকায় আলু বিক্রি হচ্ছে। বগুড়ার লাল আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়।
তবে শুক্রবার এই তিন বাজারে টিসিবির দামেই পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি কেন করছেন না এমন প্রশ্ন করলে শেওড়াপাড়া বাজারের মুনা মুদিদোকানদার জসিম উদ্দিন এআরএইচ ডটকমকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সরকার যদি কিনে দেয় তাইলে আমাগো বেঁচতে সমস্যা কোনো সমস্যা নেই। আমরা খুব কম লাভে পণ্য বিক্রি করি। কম দামে পণ্য কিনতে পারলে অবশ্যই কম দামে বিক্রি করব। বেশি দামে কিনলে কিভাবে কম দামে বিক্রি করব।”
বাজারের এমন পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। শেওড়াপাড়া বাজারে সপ্তাহের বাজার করতে আসা তহমিনা ইয়াছমিন এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও আমরা ক্রেতারা আলু, ডিম, পেঁয়াজ এখনও বাড়তি দামেই কিনছি। বাজার মনিটরিং যদি না থাকে তাহলে দাম নির্ধারণ করে দিয়ে কি লাভ হলো? দাম নির্ধারণের আগেও যে দামে কিনেছি এখনও সেই বাড়তি দামেই কিনছি।”
একই কথা বলেছেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান। এআরএইচ ডটকমকে তিনি বলেন, “১৫ দিন হয়ে গেল সরকার এই তিন পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু এক টাকাও দাম কমেনি; আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। তাহলে দাম বেঁধে দিয়ে লাভ কী?”
তিনি বলেন, “বার বার আমরা ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কথা বলছি; অতিরিক্ত মুনাফার কথা বলছি। কিন্তু সরকার এই সিন্ডিকেট ভাঙার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।”
সে কারণেই ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যা খুশি তাই করছে। ইচ্ছেমতো মুনাফা করছে।”
গোলাম রহমান বলেন, “বাজারে এমন কিছু নেই যার দাম বাড়তি না। খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১২ শতাংশের বেশি। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ খুব খারাপ অবস্থায় আছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে বাজার মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নিতে হবে।”
“অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা যেনো সরকারকে ভয় পায়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে।”
কমেন্ট