‘সংকট সামাল দিতে বিচক্ষণ অর্থমন্ত্রী চাই’

‘সংকট সামাল দিতে বিচক্ষণ অর্থমন্ত্রী চাই’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করাচ্ছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। ছবি: পিআইডি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা বুধবার শপথ নিয়েছেন। ক্ষমতায় থাকছে আওয়ামী লীগ, তাও ঠিক হয়ে গেছে। এখন সরকার গঠনের পালা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন বৃহস্পতিবার। তাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এ বিষয়ে বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরাও বৃহস্পতিবার শপথ নেবেন।

কেমন হবে নতুন মন্ত্রিসভা, কারা কি মন্ত্রী হবেন? পুরনোদের কতোজন থাকবেন, নতুন কতোজন আসবেন-তা নিয়ে এখন সারা দেশে আলোচনার ঝড় বইছে। সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে অর্থমন্ত্রী নিয়ে। কে হচ্ছেন অর্থমন্ত্রী? দুই বছরের করোনা মহামারির ধাক্কা কাটতে না কাটতেই প্রায় দুই বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বেশ চাপের মধ্যে থাকা অর্থনীতিতে সামাল দিতে বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ফের অর্থমন্ত্রী হচ্ছেন, নাকি বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে গরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নতুন মুখ আসছেন—তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা।

দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা—সবাই অর্থমন্ত্রী হিসেবে নতুন কাউকে চেয়েছেন; যিনি দক্ষ ও বিচক্ষণতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে অর্থনীতিতে যে সংকট চলছে-তা সামলে উঠার নেতৃত্ব দেবেন বলে প্রত্যাশা করছেন তারা। নতুন অর্থমন্ত্রী শক্ত হাতে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক মূল্যস্ফীতির পারদ নামিয়ে আনতে এবং আর্থিক খাতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনবেন-এমনটাও আশা করেছেন তারা।

কেমন অর্থমন্ত্রী চান—এ প্রশ্নের উত্তরে রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় বাইক সার্ভিসিং সেন্টার আলিশা মটর্সের মালিক শরিফ আহমেদ এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “আমি কি চাই, তার কি কোনো দাম আছে? কে শুনবেন আমাদের কথা? আমার একটাই চাওয়া—এমন একজনকে অর্থমন্ত্রী করা হোক যিনি বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমাতে সাহসী ভূমিকা রাখবেন।

বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে দেশের মানুষের মধ্যে। তার কর্মকাণ্ডে খুশি হন অনেকে। অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল অর্থমন্ত্রীকে। কিন্তু গত পাঁচ বছরে তার অনুপস্থিতি সবার চোখে পড়েছে। শোনা যায়, অসুস্থতার কারণে তিনি ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কখনই কিছু জানানো হয়নি।

এমন পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী হিসেবে একজন ‘শক্ত’ মানুষকে চেয়েছেন জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।

এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “সত্যি কথা বলতে কি, গত পাঁচ বছরে আমরা অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্ব অনুপস্থিত দেখেছি। যেটা সবার চোখে পড়েছে। হতে পারে অসুস্থতার কারণে তিনি ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। তাই এবার আমি একজন ‘শক্ত’ অর্থমন্ত্রী চাচ্ছি।  যিনি দক্ষ ও বিচক্ষণতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে দেশের অর্থনীতিতে যে সংকট চলছে, তা মোকাবিলা করতে নেতৃত্ব দেবেন। মোদ্দা কথা সংকট সামাল দিতে বিচক্ষণ একজন অর্থমন্ত্রী চাই।”

“একটি বিষয় খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোটেই অনুকুলে নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ছোবল এখনও লাগছে আমাদের অর্থনীতিতে। সে কারণেই কিন্তু ডলারের সংকট। রিজার্ভ কমে গেছে।”

“তাই ইইরোপ-আমেরিকার বাজারে আমাদের পণ্য রপ্তানি যাতে কোনোভাবেই ক্ষতি না হয়-সে দিকে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের মোট রপ্তানির ৮৫ শতাংশ যায় কিন্তু এই দুই বাজারে। আরেকটি বিষয় গুরুত্ব দিতে হবে; সেটি হচ্ছে রেমিটেন্স। মধ্যপাচ্যের দেশগুলো থেকে যে রেমিটেন্স আসে, সেটা যাতে আরও বাড়ে-সেটার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। প্রয়োজনে প্রণোদনা আরও বাড়াতে হবে; আর সেই প্রণোদনা যেনো সরাসরি রেমিটেন্সভোগীরা পায়, মধ্যসত্বভোগীরা না পায়—সেটা নিশ্চিত করতে হবে।”

অর্থনীতির আরেক সূচক মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ানোর পাশপাশি সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবিকে শক্তিশালী করে এর কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করতে নতুন সরকারকে পরামর্শ দেন মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।

“একটা কথা আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই, যারা বেশি সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ নেন, তারা কিন্তু ঠিকই ঋণ শোধ করেন। কোনো দিনই খেলাপি হন না। আর যারা কম সুদে ঋণ নেন, তারা ঋণ শোধ করেন না। ইচ্ছে করে খেলাপি হন।”

একইসঙ্গে টাকা পাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আর এ সব কিছুর নেতৃত্ব দিতে হবে কিন্তু অর্থমন্ত্রীকে। আর সেজন্যই আমি একজন ‘শক্ত’ ও ‘দক্ষ’ মানুষকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই,” বলেন ফরাসউদ্দিন।

আরেক অর্থনীতিবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সানেমের (সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে নতনু সরকারকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের প্রায় সব মূল্যস্ফীতি কমিয়ে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসলেও আমরা কিন্তু পারিনি। তাই আমি মনে করি মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরাই নতুন সরকারের প্রথম চ্যালেঞ্জ হওয়া উচিৎ।”

“দ্বিতীয়ত, আর্থিক খাতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে পরিস্কার দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যাংকিং খাতের অবস্থা ভালো নয়—এটা স্বীকার করে নিয়ে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার পাশপাশি ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয়ত, রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। এ জন্য ব্যাপক সংস্কার করতে হবে।”

আর এ সবের জন্য একজন দক্ষ ও বিচক্ষণ ব্যক্তিকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান সেলিম রায়হান।

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “গত পনের বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। নতুন সরকারকে এটা ধরে রাখতে হবে। একইসঙ্গে দুর্নীতি কমাতে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে হবে। দেশের মানুষকে স্বস্তি দিতে মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। শিল্প খাতে গ্যাস-বিদ্যুতের যে সমস্যা আছে সেটা সমাধান করতে হবে।”

তিনি বলেন, “আমাদের অর্থনীতি কিন্তু চাপের মধ্যে আছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ অনেক কমে গেছে। এটা বাড়তে রপ্তানি আয় বাড়তে হবে। তাই বরাবরের মতোই রপ্তানি খাতের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।”

এ সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কেমন অর্থমন্ত্রী চান—এ প্রশ্নের উত্তরে ফারুক হাসান বলেন, “অবশ্যই এমন একজনকে চাই, যিনি বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠতে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন।”

মঙ্গার অভিবাসন হয়েছে, রংপুর থেকে বরিশালে গেছে পরবর্তী

মঙ্গার অভিবাসন হয়েছে, রংপুর থেকে বরিশালে গেছে

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর