তবুও চড়েছে মূল্যস্ফীতির পারদ

তবুও চড়েছে মূল্যস্ফীতির পারদ

৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির মানে হচ্ছে— ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, তা এই বছরের জানুয়ারিতে পেতে ১০৯ টাকা ৮৬ পয়সা ব্যয় করতে হয়েছে।

বর্তমানে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। চড়তে থাকা স্পর্শকাতর এই সূচকের লাগাম টানতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। সে উদ্যোগের অংশ হিসেবে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতেই সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাড়ানো হচ্ছে ব্যাংক ঋণের সুদহার; ৯ শতাংশ থেকে ঋণের সুদহার বেড়ে সাড়ে ১২ শতাংশে উঠেছে; ভোক্তায় গুনতে হচ্ছে সাড়ে ১৩ শতাংশ।

কমানো হয়েছে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যও। আমদানি কমানো হয়েছে। এছাড়া নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। তবুও চলতি বছরের শুরুতেই দেশের মূল্যস্ফীতির পারদ ফের চড়েছে, যা ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

অর্থনীতিবিদররা বলছেন, শুধু ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়িয়ে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি লাগামে রাখা সম্ভব না, কারণ এখানে ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়। প্রতিবারের মতো এবারও রমজানকে উপলক্ষ করে বাড়তি চাহিদার সুযোগে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে ব্যবসায়ীরা। আর তাতে চলতি ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি আরও খানিকটা বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।  

পর পর দুই মাস কমে গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৪১ শতাংশে নেমে এসেছিল। চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে তা বেশ খানিকটা বেড়ে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে উঠেছে।

এর মানে হচ্ছে— ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, তা এই বছরের জানুয়ারিতে পেতে ১০৯ টাকা ৮৬ পয়সা ব্যয় করতে হয়েছে।

সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বৃহস্পতিবার রাতে মূল্যস্ফীতির এই হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।

তবে অর্থনীতিবিদদের অনেকে বলে আসছেন, মূল্যস্ফীতি নির্ধারণে বিবিএস যে বাস্কেট হিসাবে নেয়, এর বাইরেও শহর ও গ্রামে আরও পণ্য আছে, যা বিবেচনায় নিলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির প্রকৃত হার আরও বেশি হতে পারে।

গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে শীতকালীন বিভিন্ন সবজির দামও ছিল অনেক চড়া। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যও তা বলছে। গত বছরের ৩১ জানুয়ারি এক কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, যা এ বছরের জানুয়ারি মাসে একই তারিখে ছিল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।

ঢাকার বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দর ফেব্রুয়ারিতে আরও চড়েছে। ১২০ থেকে ১২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বিবিএসের বৃহস্পতিবারের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, জানুয়ারিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিঞ্চিৎ কমলেও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি প্রায় ১ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়েছে। এই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ; ডিসেম্বরে হয়েছিল ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

অন্যদিকে জানুয়ারিতে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৪২ শতাংশে উঠেছে; ডিসেম্বরে এই হার ছিল ৮ দশমিক ৫২ শতাংশ।

জানুয়ারিতে শহরের পাশাপাশি গ্রামেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এই মাসে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ; গত বছরের জানুয়ারিতে হয়েছিল ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ।

এই জানুয়ারিতে গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ; গত বছরের জানুয়ারিতে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

গত বছরের শেষ দুই মাস নভেম্বর ও ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার কমে যথাক্রমে ৯ দশমিক ৪৯ এবং ৯ দশমিক ৪১ শতাংশে নেমেছিল। তার আগের মাস অক্টোবরে এই হার উঠেছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে।

আর গত বছরের মে মাসে এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে উঠেছিল মূল্যস্ফীতির পারদ। সবশেষ জানুয়ারি মাসের মূল্যস্ফীতি উঠেছে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে, যা ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

গত বছরের জানুয়ারি মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে শহরাঞ্চলের খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ; খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

আর এই মাসে গ্রামাঞ্চলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ; খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ১৯ শতাংশ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিসংখ্যান ব্যুরোর একজন কর্মকর্তা এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, এ বছরের জানুয়ারি মাসে শীতকালীন সবজি ও চালের দাম গত বছরের একই মাসের তুলনায় বেশি ছিল। বিশেষ করে পেঁয়াজ, রসুনসহ সব ধরনের সবজি গত বছরের একই মাসের তুলনায় বেশি থাকায় জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি বেশি হয়েছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আগস্টে হয়েছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।

আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

কয়েক মাস টানা বেড়ে গত বছরের মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে উঠে।

জুন মাসে তা খানিকটা কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশে নেমে আসে। জুলাই মাসে আরও কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশে নামে।

আগস্ট মাসে তা আবার বেড়ে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে উঠে যায়। সেপ্টেম্বরে তা কমে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশে নেমে এসেছিল।

গড় মূল্যস্ফীতি ৯.৫৯ শতাংশ

১২ মাসের গড় হিসাবে (২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে (২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন) গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ। তার আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার।

কিন্তু অর্থবছর শেষে দেখা যায়, বাজেটের লক্ষ্যের চেয়ে ৩ দশমিক ৪২ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি মূল্যস্ফীতি নিয়ে অর্থবছর শেষ হয়।

শতাংশে আটকে রাখা অসম্ভব

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছে। বাজেট ঘোষণার পর থেকেই দেশের সব অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থাগুলো বলে আসছে বাজারের যে অবস্থা তাতে সরকারের এই আশা কখনই পূরণ হবে না।

দুই বছরের কোভিড-১৯ অতিমারীর ধকল কাটতে না কাটতেই দুই বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় তছনছ হয়ে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতির বেহাল দশার কারণে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনও মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের উপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছিল। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে উঠানামা করেছে।

২০১০-১১ অর্থবছরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ। এরপর তা দুই অঙ্কের (ডাবল ডিজিট) নিচে নেমে আসে। ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত এই সূচক ৯ শতাংশের ওপরে ওঠেনি।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি চড়তে থাকে।

যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে বলে সতর্ক করছিলেন অর্থনীতিবিদরা। তারই প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায় গত অর্থবছরজুড়ে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এ রকম এক সময়ে গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এই দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম।

ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে উঠে যায়। যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে নেমে আসে। অক্টোবরে তা আরও কমে ৯ শতাংশের নিচে ৮ দশমিক ৯১ শতাংশে নেমে আসে।

নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি হয় ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ডিসেম্বরে তা কমে ৮ দশমিক ৭১ শতাংশে নেমে আসে।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজার মাসকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল। মে মাসে মূল্যস্ফীতির পারদ বেড়ে এক লাফে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে গিয়ে উঠেছিল।

ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি বেশ দ্রুত গতিতে কমলেও বাংলাদেশে কমার তেমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এমনকি অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি কমে ১ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে।

শ্রীলঙ্কার শুমারি ও পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দেশটির মূল্যস্ফীতি ছিল ৬৯ দশমিক ৮ শতাংশ। গত বছরের জানুয়ারিতে ছিল ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে এটি কমে ৪৩ দশমিক ৫৬ শতাংশে দাঁড়ায়। মার্চে মূল্যস্ফীতি ছিল ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ। এপ্রিলে এটি আরো কমে দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ৮ শতাংশে।

এর পরে মে মাসে দেশটির মূল্যস্ফীতি ছিল ২০ দশমিক ৩ শতাংশ। জুনে মূল্যস্ফীতি এক অংকে নেমে আসে, যা ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ।

জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি নেমে আসে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। আগস্টে এই সূচক আরও কমে ৪ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়ায়। সেপ্টেম্বরে দেশটির মূল্যস্ফীতি ছিল ১ দশমিক ৯ শতাংশ। অক্টোবরে তা আরও কমে ১ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছিল।

তবে গত কয়েক মাসে একটু একটু করে বেড়ে সর্বশেষ জানুয়ারিতে ৬ দশমিক ৪ শতাংশে উঠেছে।

শুধু সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমবে না

মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়িয়েই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়ে ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশে উঠেছে; ভোক্তার গুনতে হবে সাড়ে ১৩ শতাংশ।

নভেম্বর ও ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি নিম্মমুখী হওয়ায় মনে হচ্ছিল, সুদের হার বাড়ানোর সুফল পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু জানুয়ারিতে তা ফের বাড়ায় প্রশ্ন উঠেছে সুদের হার বাড়িয়ে বাজারে টাকার সরবরাহ কমিয়ে কি মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব?

এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “মূল্যস্ফীতি কমানোর একটি অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারতসহ অনেক দেশই এই হাতিয়ার ব্যবহার করে সফল হয়েছে।”

“বাংলাদেশ ব্যাংক গত কয়েক মাস ধরে সেই কাজটি করছে। কিন্তু বাংলাদেশের পেক্ষাপট তো ভিন্ন। পৃথিবীর কোনও দেশেই সিন্ডিকেট করে বা একজোট হয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয় না। বাংলাদেশে অহরহ সেটা হচ্ছে; প্রায় সব পণ্যের ক্ষেত্রে হচ্ছে।”

“তাই আমাদের দেশে শুধু সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা যাবে না। ব্যবসায়ীরা যাতে ভোক্তাদের জিম্মি করে অতিরিক্ত মুনাফা করতে না পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে,” বলেন আজিজুল ইসলাম।

মজুরি সূচক বাড়ছেই

বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, প্রায় দেড় বছর ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। সবশেষ জানুয়ারিতে তা বেড়ে ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশে উঠেছে। আগের মাস ডিসেম্বরে এই হার ছিল ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। নভেম্বরে ছিল ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ।

২০২২ সালের অক্টোবরে এই হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। নভেম্বরে ছিল ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ডিসেম্বরে তা ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে বেড়ে হয় ৭ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশে ওঠে।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মজুরি সূচক আরও খানিকটা বেড়ে ৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশে ওঠে। ফেব্রুয়ারি মাসে হয় ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। মার্চ মাসে মজুরি সূচক বেড়ে হয় ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। এপ্রিলে তা বেড়ে হয় ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ।

মে মাসে মজুরি সূচক বেড়ে হয় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। জুন মাসে তা আরও খানিকটা বেড়ে ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশে উঠে। জুলাইয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক বেড়ে ৭ দশমিক ৫২ শতাংশে উঠে। আগস্ট মাসে তা আরও বেড়ে ৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ হয়।

সেপ্টেম্বর মাসে আরও খানিকটা বেড়ে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশে উঠে। অক্টোবর মাসে বেড়ে হয় ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

অর্থনীতিতে নতুন সরকারের চার চ্যালেঞ্জ পরবর্তী

অর্থনীতিতে নতুন সরকারের চার চ্যালেঞ্জ

কমেন্ট