এবারের বাজেটেও আইএমএফের শর্ত পূরণের চাপ
একদিকে মূল্যস্ফীতি, আরেক দিকে রিজার্ভ সংকট; অর্থনীতির অন্য সূচকগুলোতেও আশার জাগানিয়া কিছু নেই- এই অবস্থার মধ্যে বৃহস্পতিবার প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার।
সংকটের মধ্যেই আরেকটি বাজেট দিতে যাচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার। টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর দিতে যাওয়া তার সরকারের প্রথম বাজেটেও থাকছে আইএমএমের শর্তের বেড়াজাল।
করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই প্রায় আড়াই বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বেহাল অর্থনীতিতে জনজীবনে সংকট যখন বেড়ে চলছে, তখন বাজেট প্রণয়নেও যে সরকারের হিমশিম অবস্থা, তা বোঝা গেল অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার কথায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার কথা চিন্তায় রেখেই বাজেট দিতে হচ্ছে। কারণ শর্ত পূরণে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, সেদিকে চোখ থাকবে সংস্থাটির।
ডলার সংকটের মধ্যে সরকার এখন চাইছে, কোনওভাবেই যেন আইএমএফর ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের বাকি কিস্তিগুলো আটকে না যায়।
একদিকে মূল্যস্ফীতি, আরেক দিকে রিজার্ভ সংকট; অর্থনীতির অন্য সূচকগুলোতেও আশার জাগানিয়া কিছু নেই- এই অবস্থার মধ্যে বৃহস্পতিবার প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের এই বাজেট হবে আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট। আর দেশের ৫৩তম এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম বাজেট।
এক সময়ের ঝানু কূটনীতিক মাহমুদ আলী তার প্রথম বাজেটের শিরোনাম দিয়েছেন ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’।
আগের বছরগুলোর তুলনায় এবারের বাজেট খুব একটা বাড়ছে না বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। অতীতে দেখা গেছে, নতুন বাজেট আগের বছরের চেয়ে ১২ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
গত বছর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন, যা ছিল আগেরটির তুলনায় ১২ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। বিশাল সেই বাজেটে ঘাটতি ছিল ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
চলতি বাজেটের তুলনায় এবার মাত্র ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বাড়িয়ে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের ফর্দ তৈরি করতে যাচ্ছেন মাহমুদ আলী।
৩০ জুন শেষ হচ্ছে ২০২৩-২৪ অর্থবছর। আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার শর্ত পূরণের প্রতিফলন ছিল বিদায়ী বাজেটে। এই ঋণের শর্ত হিসেবে আইএমএফ যা যা করতে বলেছে, তার অনেকগুলো বাস্তবায়ন করেছে সরকার। বাকি শর্তগুলো নতুন বাজেটে বাস্তবায়ন করার ঘোষণা থাকবে।
এবারের বাজেটে আইএমএফের সবচেয়ে বেশি চাপ থাকবে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর দিকে। এছাড়া নাজুক অবস্থায় থাকা ব্যাংকিং খাতে শৃংখলা ফিরিয়ে এনে খেলাপি ঋণ কমানোরও চাপ দেবে আইন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি।
সরকারও এ সব বিষয়রে দিকে বেশ মনোযোগী হবে বলে মনে হচ্ছে। কেননা, ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের দুই কিস্তিতে ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার মাত্র পাওয়া গেছে। তৃতীয় কিস্তির ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার গত মে মাসের শেষের দিকে ছাড় করবে বলে জানিয়েছিল আইএমএফ; কিন্তু শেষ পর্যন্ত করেনি। চলতি জুন মাসের শেষের দিকে ছাড় করতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “নতুন বাজেটে বাকি শর্তগুলো পূরণে সরকার কি কি উদ্যোগ নেয়, সেটাই আসলে দেখতে চাচ্ছে আইএমএফ। যদি তাদের মন মতো হয়, তাহলে ৬ জুন বাজেট পেশের পর পরই তৃতীয় কিস্তির ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড় করবে। বাকি কিস্তিগুলোও নির্ভর করবে এই বাজেটে নেওয়া পদক্ষেপের ওপর।”
সে কারণেই বিদায়ী বাজটের মতো এবারের বাজেটেও আইএমএফের শর্তের চাপ থাকবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
সরকার নিজের মতো করেই এত দিন বাজেট প্রণয়ন করে আসছিল। সংকট সামাল দিতে আইএমএফের কাছে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছিল সরকার। গত বছরের ৩০ জানুয়ারি বেশ কিছু শর্তে বাংলাদেশের চাওয়ার বেশি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। অনুমোদনের দুই দিনের মাথায় ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ছাড় করে। সেই ঋণের জন্য আইএমএফের চাওয়া অনুযায়ী বাজেটে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়: দেওয়া হয় কিছু সংস্কারের ঘোষণাও। ১৩ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৬৯ কোটি ডলার ছাড় করে আইএমএফ।
দুই কিস্তির এই ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য অর্থবছরজুড়ে আইএমএফের কথামতো একটার পর একটা শর্ত বাস্তবায়ন করেছে সরকার।
আইএমএফ সাড়ে তিন বছরের জন্য মোট ৩৮টি শর্ত দিয়েছিল। যার অর্ধেক বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে বলেছিল। এর মধ্যে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া, রিজার্ভের যথাযথ গণনা পদ্ধতি প্রণয়ন, মুদ্রা বিনিময় হারের একটি দর রাখাসহ কয়েকটি শর্ত পূরণের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। এর সবগুলোই বাস্তবায়ন করেছে সরকার।
মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে বাজারে টাকার প্রবাহ কমাতে সংকোচনমূল্যক মুদ্রানীতির পথে যেতে বলেছিল আইএমএফ। গত দুই মুদ্রানীতিতে সেটাও করেছে আইএমএফ। আইএমএফের চাওয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ। এ শর্ত পূরণের জন্য কাজ করছে সরকার।
আইএমএফ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমাতে বলেছিল; সে শর্তও বাস্তবায়ন করছে সরকার। কৃষি ছাড়া সব খাতেই ভর্তুকি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিত্যুৎ ও পানির দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ানো হচ্ছে।
স্বাভাবিক বৃদ্ধির চেয়ে যাতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় দশমিক ৫ শতাংশ হারে রাজস্ব আয় বাড়ে, সেই কৌশল প্রণয়ন করতে বলেছিল আইএমএফ। এছাড়া আর এনবিআরকে শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ইউনিট করতে বলেছিল। এ শর্তগুলো এখনও বাস্তবায়ন করেনি সরকার।
আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জিডিপির তথ্য প্রকাশ করতে হবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করতে হবে। এ দুটিই পূরণ করেছে সরকার।
এ ছাড়া রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা,বার্ষিক আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে পুনঃ তফসিল করা ঋণ ও খেলাপি ঋণের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। এগুলো পূরণ করেনি সরকার।
আইএমএফের ছকেই রাজস্ব আদায়ের অঙ্ক কষছে সরকার
বিদায়ী অর্থবছরের দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) দুই লাখ ৮৯ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।
তবে এই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলেও অর্থবছরের শেষ দুই মাসে অর্থাৎ মে-জুন মাসে এক লাখ ২০ হাজার ৬২২ কোটি টাকা আদায় করতে হবে সরকারের রাজস্ব আদায়কারী প্রধান সংস্থা এনবিআরকে।
যা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মনে করেন সংস্থাটির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেছেন, “বরাবরই অর্থবছরের শেষ দিকে রাজস্ব আদায় একটু বেশি হয়। তবে দুই মাসে সোয়া লাখ কোটি টাকা আদায় কখনই সম্ভব নয়।”
আর এমন পরিস্থিতিতে আইএমএফ এখন রাজস্ব আদায় বাড়াতে সবচেয়ে বেশি জার দিচ্ছে। আর সে অনুযায়ীই সরকার বা এনবিআর রাজস্ব আদায়ের অঙ্ক কষছে। সংকটের এই সময়ে কোনো অবস্থাতেই যাতে আইএমএফের ঋণের বাকি কিস্তিগুলো হাতছাড়া না হয় সে বিষয় বিবেচনায় নিয়ে নতুন বাজেটে সরকার রাজস্ব আদায় বাড়াতে নানামূখী পদক্ষেপ নিচ্ছে।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির অন্যতম শর্ত ছিল—২০২৪-২৫ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। রাজস্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে করের আওতা সম্প্রসারণ, কর প্রশাসনের সংস্কার ও আদায় প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়করণের পাশাপাশি কর অব্যাহতি ও শুল্ক-কর ছাড় তিন অর্থবছরের মধ্যে (২০২৬ সালের মধ্যে) শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছিল সংস্থাটি। এনবিআর এই প্রথম বাজেটে কর অব্যাহতি ও শুল্ক-কর ছাড় কমিয়ে রাজস্ব বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করছে।
এর অংশ হিসেবে শূন্য শুল্কের অর্ধশতাধিক পণ্যে আগামী অর্থবছর থেকে ১ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক আরোপ হতে পারে বলে জানিয়েছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা। বর্তমানে বেশ কিছু পণ্য আমদানিতে শুল্ক নেই। এ ধরনের পণ্যের সংখ্যা ৩২৯। এ তালিকায় আছে খাদ্যপণ্য, সার, গ্যাস, ওষুধশিল্পের কাঁচামাল, কৃষি উপকরণ ইত্যাদি।
নতুন বাজেটে ওই তালিকার ১৫-২০ শতাংশ পণ্য আমদানিতে ন্যূনতম ১ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ হতে পারে। যেসব পণ্যে ১ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানোর চিন্তা করা হচ্ছে, তার প্রাথমিক তালিকায় আছে গম, ভুট্টা, সরিষাবীজ, তুলাবীজ, বিভিন্ন শাকসবজির বীজ, কয়লা, জিপসাম, ভিটামিন, পেনিসিলিন, ইনসুলিন, বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক, প্লাস্টিক কয়েল, পেপার বোর্ড, স্টিলজাতীয় পণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি-যন্ত্রাংশ ইত্যাদি।
একই সঙ্গে বর্তমানে কর অব্যাহতি অথবা করছাড় সুবিধা পাওয়া স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কিছু ইলেকট্রনিকস পণ্যের ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) বাড়ানো হতে পারে। তরল পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাস সিলিন্ডারের মতো পণ্যেও বাড়তে পারে ভ্যাট। তবে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতি না বাড়াতে আইএমএফের পরামর্শ থাকলেও এ খাতে আরও কয়েক বছর কর অব্যাহতি থাকতে পারে।
নতুন ভ্যাট আইনে একটি স্ট্যান্ডার্ড ভ্যাট হার (১৫ শতাংশ) ছিল। তবে নানা কারণে সেটি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। এ জন্য একাধিক হারে ভ্যাট আদায় হচ্ছে। আগামী বাজেটে এ হার যৌক্তিক করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় পণ্যে ভ্যাট হার বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে এনবিআরের।
আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, ২০২৬ সাল নাগাদ পর্যায়ক্রমে সব পণ্য ও সেবার ওপর স্ট্যান্ডার্ড ভ্যাট হার আরোপ করবে এনবিআর।
মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও বাড়তি আয়কর আদায়ের লক্ষ্যে নতুন বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ছে না। এ ছাড়া পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে ৪০ লাখ টাকার বেশি মুনাফার ওপর ‘ক্যাপিটাল গেইন’ কর আরোপের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এ হার হতে পারে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ।
বিত্তশালীদের কাছ থেকেও বাড়তি কর আদায়ের পদক্ষেপ থাকছে বাজেটে। ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হতে পারে। কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নিতে গেলেও রিটার্ন জমার সনদ প্রদান বাধ্যতামূলক হতে পারে।
নতুন বাজেটে সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক ও মোবাইল ফোনে কথা বলা বা ইন্টারনেটের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। এসব ক্ষেত্রে আরও ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক যোগ হতে পারে। বর্তমানে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও থিম পার্কে প্রবেশে এবং রাইডে চড়তে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
কোমল পানীয়, কার্বোনেটেড বেভারেজ, এনার্জি ড্রিংকস, ফলের জুস, আমসত্ত্বের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। এ ছাড়া কার্বোনেটেড বেভারেজের ওপর ন্যূনতম কর আরও ২ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ শতাংশ হতে পারে।
আইএমএফের আরও একটি বড় শর্ত হচ্ছে, সঠিক বাজেট ব্যবস্থাপনার স্বার্থে বিশেষ করে জ্বালানি ও বিদ্যুতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে হবে। ভর্তুকি কমানোর ওই টাকায় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সম্প্রসারণের পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। সরকার ভর্তুকি তুলে নিতে ইতোমধ্যে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করছে। পাশাপাশি আগামী অর্থবছরও চারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা যা বলেছেন
আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “বাংলাদেশকে আইএমএফ খুব একটা কঠিন শর্ত দেয়নি। আমরা এতদিন ধরে সরকারকে যে সব সংস্কার করতে বলেছি, সেগুলোই বলেছে সংস্থাটি। আমরা রাজস্ব আদায় বাড়াতে জোরালো পদক্ষেপ নিতে বলে আসছি। আইএমএফ সেটাটেই সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে। সরকারের উচিৎ নতুন বাজেটে সেদিকেই সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া।”
তিনি বলেন, “হতাশ হওয়ার কিছু নেই। দেরিতে হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা-ডলার বিনিময় হারের নতুন পদ্ধতি ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করেছে। এর পর থেকে ডলারের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, ডলারের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। রিজার্ভও বাড়বে।”
তিনি বলেন, “রিজার্ভ কমায় সার্বিক বিষয় বিবেচনা নিয়ে আইএমএফ বাংলাদেশের নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রাও কমিয়েছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত আইএমএফের দেওয়া নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আইএমএফ ১৪ দশমিক ৭৫ কোটি ডলারে নামিয়েছে। এটা একটা স্বস্তির খবর।”
“আমার মনে হয়, রিজার্ভ আর কমবে না; বাড়তেই থাকবে।”
আরেক অর্থনীতিবিদ ২০০৭-০৮ মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন,“আইএমএফ মোটা দাগে যেসব শর্ত দিয়েছে, তা সার্বিকভাবে অর্থনীতির জন্য ভালো। এসব সংস্কারের উদ্যোগ নিজেদের তাগিদে অনেক আগে থেকেই ক্রমান্বয়ে নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু অর্থনীতি যখন সংকটের মধ্যে তখন সব উদ্যোগ একসঙ্গে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে হিতে বিপরীত হতে পারে।”
“ঊর্ধ্ব মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিতে কোনো পণ্যে শুল্ক বাড়ানো হলে তার প্রভাবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় চাপ তৈরি করবে। সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।”
তবে ভিন্ন কথা বলেছেন আরেক অর্থনীতিবিদ সাবেক তত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
তিনি বলেছেন, “বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সুপারিশ অনুসরণ করা সবসময় বুদ্ধিমানের কাজ নয়, কারণ বাংলাদেশের পরিস্থিতি অন্যান্য দেশের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
“বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে আইএমএফ খুব বেশি জানে, এটি বিশ্বাস করার কারণ নেই। তা ছাড়া আইএমএফ সব দেশে গিয়ে একই ফর্মুলা দেয়। কিন্তু সব দেশের জন্য এক নীতি প্রযোজ্য নয়। তাই আইএমএফের পরামর্শ দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে গ্রহণ করতে হবে।”
কমেন্ট