এফবিসিসিআই নির্বাচন সোমবার, ভোট হবে শুধু অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ২৩ পরিচালক পদে
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) সকাল ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরু হবে, বিরতিহীনভাবে চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
দুই মেয়াদ পর দেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদের একাংশের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সোমবার। ২০২৩-২৫ মেয়াদের এই নির্বাচনে শুধু অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ২৩ পরিচালক পদে ভোট হবে।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) সকাল ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরু হবে, বিরতিহীনভাবে চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
ভোট গ্রহণ শেষে গণনা করে পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচিত পরিচালকদের নাম ঘোষণা করা হবে।
নির্বাচিত পরিচালকদের ভোটে ২ অগাস্ট এফবিসিসিআই সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ছয়জন সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হবেন।
এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদের মোট ৮০ জন পরিচালকের মধ্যে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ১৭ জন করে মোট ৩৪ জন পরিচালক হিসেবে ইতোমধ্যে মনোনীত হয়েছেন।
এর বাইরে জেলা চেম্বার গ্রুপে ২৩ জন এবং খাতভিত্তিক অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপে ২৩টি পদে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চেম্বার গ্রুপের ২৩টি পদের বিপরীতে ২৩টি মনোনয়ন পত্র জমা পড়ায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
সে কারণে সোমবার ভোট হবে কেবল অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ২৩টি পদে, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ৪৯ জন।
এর মধ্যে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ প্যানেল থেকে ২৩ জন, সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেল থেকে ২৩ জন এবং ৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপে মোট ভোটার সংখ্যা ১৯৯০ জন। সোমবার কেবল তারাই ভোট দেবেন।
এফবিসিসিআইয়ের ২০২৩-২০২৫ মেয়াদের নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সাবেক সভাপতি এ মতিন চৌধুরী। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক শামছুল আলম এবং অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক কে এম এন মঞ্জুরুল হক।
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে এ মতিন চৌধুরী এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “সবাই যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমাদের চেষ্টা থাকবে এই নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে এবং আনন্দঘন পরিবেশে সম্পন্ন করতে পারি।”
এফবিসিসিআই নির্বাচন বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভোট দেওয়ার জন্য একজন ভোটারকে একটি মাত্র ব্যালট পেপার সরবরাহ করবেন পোলিং অফিসার। কোন ভোটারকে ডুপ্লিকেট বা অতিরিক্ত ব্যালট দেওয়া হবে না।
ব্যালট পেপার সরবরাহের সময় ভোটারের কাছ থেকে তার ভোটার আইডি কার্ড রেখে দেওয়া হবে, যা আর ফেরত দেওয়া হবে না।
একজন ভোটার ব্যালট পেপারে উল্লেখিত প্রার্থীদের মধ্যে ২৩ জনকে ভোট দিতে পারবেন। ২৩ জনের কম বা বেশি প্রার্থীকে ভোট দিলে ব্যালটটি বাতিল বলে গণ্য হবে।
ভোটার ছাড়া অন্য কারো নির্বাচন কেন্দ্রে প্রবেশাধিকার থাকবে না। নির্ধারিত ভোটার আইডি কার্ড ছাড়া কোনো প্রার্থী বা ভোটার কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না।
ভোটের দিন নির্বাচন কেন্দ্রের ১০০ গজের মধ্যে কোন প্রচার বা মিছিল করতে পারবেন না প্রার্থীরা। নির্বাচন কেন্দ্র বা তার আশেপাশে কোনো প্রার্থী ভোটারদের উপহার সামগ্রী দিতে পারবেন না। কোনো প্রার্থী বা ভোটার নির্বাচন কেন্দ্রে কোনো প্রকার আগ্নেয়াস্ত্র বা বিপদজনক বস্তু বহন করতে পারবেন না।
ভোট শুরুর ১৫ মিনিট আগে সব প্রার্থীর উপস্থিতিতে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স উন্মুক্ত করে প্রদর্শন করা হবে এবং সিলগালা করে ব্যালট বাক্স বন্ধ করা হবে।
সবশেষ ভোট হয়েছিল ২০১৭ সালে
এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্ব নির্বাচনে সর্বশেষ ভোট হয় ২০১৭ সালে, তা-ও আংশিক। পরিচালক পদে চেম্বার অংশে ভোট ছাড়াই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। পণ্যভিত্তিক সংগঠন বা অ্যাসোসিয়েশন অংশে ভোট হয়েছিল।
সেবার সভাপতি হন শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। পরের দুই মেয়াদে নির্বাচন ছাড়াই সভাপতি হন যথাক্রমে শেখ ফজলে ফাহিম ও জসিম উদ্দিন।
দুই মেয়াদ পর ভোট হওয়ার সাধারণ সদস্যদের অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা বলছেন, ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন হওয়াটা ইতিবাচক। কারণ, ভোটে জয় পেতে প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যান। বিভিন্ন ভালো কাজের প্রতিশ্রুতি দেন। কাজের জবাবদিহির সুযোগও তৈরি হয়।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালায়েড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “ভোটারদের মধ্যেও উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, অনেক দিন পর প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ্রে সরাসরি ভোট হলে নির্বাচনটা আরও জমজমাট হতো।”
মাহবুবুল আলমের সভাপতি হওয়া নিশ্চিত
দীর্ঘদিন ধরেই এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কে হবেন সেটি সরকারের উচ্চ মহল থেকে চূড়ান্ত করা হয়। এবার সভাপতি পদে চট্টগ্রাম চেম্বারের বর্তমান সভাপতি মাহবুবুল আলম সবুজ সংকেত পেয়েছেন। গত ২০ জুন ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাকে এফবিসিসিআইয়ের পরবর্তী সভাপতি হিসেবে সমর্থন দিয়েছেন ফেডারেশনের সাবেক সভাপতিসহ বিভিন্ন চেম্বার ও পণ্যভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠনের নেতারা।
সেই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান মাহবুবুল আলমকে এফবিসিসিআইর ‘পরবর্তী সভাপতি’ হিসাবে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
ফলে মাহবুবুল আলমের সভাপতি হওয়া মোটামুটি নিশ্চিত। আর ভোটের আগেই মনোনীত ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ৫৫ পরিচালক হয়েছেন। তারা মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বাধীন প্যানেলের পক্ষের।
ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের প্যানেল লিডার মাহবুবুল আলম এআরএইচ ডটকমে বলেন, “নির্বাচন বেশ জমে উঠেছে। আমরা জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।”
অন্যদিকে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের আহ্বায়ক মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা সাধারণ সদস্যদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নির্বাচন করছি। আমাদের হারানোর কিছু নেই। তবে যেখানেই নির্বাচনী সভা করেছি, সেখানে সাধারণ ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন। ফলে আমরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।”
কমেন্ট