ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য বাংলালিংকের আবেদন
বাংলাদেশের ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের যাত্রায় অংশীদার হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে বাংলালিংক বলছে, বিশ্বের ছয়টি বাজারে তাদের অংশীদার ভিওন এর আর্থিক সেবাগ্রহীতার সংখ্যা দুই কোটির বেশি। তাদের সেবার মধ্যে ডিজিটাল ঋণ ব্যবস্থাপনাও রয়েছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে আলোচনায় থাকা মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংক আলোচিত ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে আবেদন করেছে।
বাংলালিংক তার মূল কোম্পানি ভিওন এর সঙ্গে যৌথভাবে এই আবেদন দাখিল করেছে বলে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, “ডিজিটাল পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলালিংক বাংলাদেশের ডিজিটাল সেবার মান ও পরিসর সম্প্রসারণে অবদান রাখতে চায়। আমাদের মূল বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ভিওন গ্রুপের ডিজিটাল লেনদেন পরিষেবা বিষয়ে অন্যান্য দেশে অভিজ্ঞতা রয়েছে।”
ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য লাইসেন্সের আবেদন গ্রহণে গত ২১ জুন একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, সেই আবেদন দাখিলের সময় বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে।
বাংলাদেশের ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের যাত্রায় অংশীদার হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে বাংলালিংক বলছে, বিশ্বের ছয়টি বাজারে তাদের অংশীদার ভিওন এর আর্থিক সেবাগ্রহীতার সংখ্যা দুই কোটির বেশি। তাদের সেবার মধ্যে ডিজিটাল ঋণ ব্যবস্থাপনাও রয়েছে।
ভিওনের এই অভিজ্ঞতাকে বাংলাদেশে কাজে লাগাতে চায় দেশের অন্যতম মোবাইল অপারেটরটি।
১৭ কোটির বেশি জনসংখ্যার এই দেশে ব্যাংকিংয়ে অন্তভুর্ক্তি ‘এখনও কম’ উল্লেখ করে বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক আস বলেন, সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা মানুষের সামনে অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে।
“ডিজিটাল পরিষেবাদানকারী হিসেবে বাংলালিংক ও ভিওন এর যেসব অভিজ্ঞতা আছে, সেসব কাজে লাগিয়ে আমরা ডিজিটাল আর্থিক সেবাদানের চ্যালেঞ্জ নিতে চাই।”
বাংলালিংকের মূল কোম্পানি নেদারল্যান্ডসভিত্তিক ভিওন লিমিটেড সেখানকার পুঁজিবাজার ‘ইউরোনেক্সট আমস্টারডেম’ ও যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজার ‘নাসডাক’ এ তালিকাভুক্ত।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় সহযোগী হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে ভিওন গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কান তেরজিওগ্লু বলেন, “বাংলাদেশে উদ্ভাবনী, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ডিজিটাল রূপান্তরে বাংলালিংক যে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে সহযোগিতা করতে আমাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা রয়েছে।”
মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকের বর্তমানে চার কোটি ২০ লাখের বেশি গ্রাহক রয়েছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বিনোদনের মতো বিষয়ে কোম্পানির ডিজিটাল সেবায় আস্থা রাখছেন মানুষ। তারই ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল আর্থিক সেবায় অংশীদার হতে চায় তারা।
নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে ১২৫ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে। কোনো খেলাপী এ ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবেন না।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল ব্যাংকের একটি প্রধান কার্যালয় থাকবে বাংলাদেশে। এই কার্যালয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ও সার্পোট স্টাফদের দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হবে। পাশাপাশি সশরীরে বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে গ্রাহকের অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির কাজটি এই কেন্দ্রীয় দপ্তরে হবে।
ডিজিটাল ব্যাংকগুলো প্রচলিত ব্যাংকের মত সরাসরি কাউন্টারে গ্রাহকদের লেনদেন সেবা দিতে পারবে না। এ ব্যাংকের নিজস্ব কোনো শাখা, উপশাখা, এজেন্ট বা উইন্ডো থাকবে না। এমনকি নিজস্ব কোনো এটিএম/সিডিএম/সিআরএম বা স্পর্শযোগ্য ইনস্ট্রুমেন্ট থাকতে পারবে না।
ডিজিটাল ব্যাংকে গ্রাহক হিসাব খোলা হবে কেওয়াইসি পরিপালন করে অনলাইনে। হিসাব খোলার পর ভিন্ন কোনো ব্যাংক বা এমএএফএস এজেন্ট, এটিএম বুথ, সিডিএম, সিআরএম নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অনলাইনে অর্থ স্থানান্তর এবং ব্যবহার করতে পারবে গ্রাহক। নিজের অ্যকাউন্ট থেকে টাকা তোলা যাবে একই পদ্ধতিতে।
লেনদেন সহজ করতে ভার্চুয়াল কার্ড, কিউ আর কোড বা অন্য কোনো অগ্রসরমান প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য চালু করতে পারবে ডিজিটাল ব্যাংক। এ ব্যাংকের মাধ্যমে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, শিক্ষার্থীর বেতন, সার্ভিস চার্জ ও ট্রেজারি চালানসহ সরকারি বিভিন্ন ফি আগের চেয়ে কম সময় ও কম খরচে দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
কমেন্ট