বিজিএমইএকে শক্তিশালী করতে চান ফয়সাল সামাদ
ফয়সাল সামাদ বলেন, “আমি লম্বা সময় ধরে এই শিল্পের সঙ্গে আছি। যখন শুরু করেছিলাম, তখন যারা ব্যবসা শুরু করেছিলেন, তাদের অর্ধেকের বেশিই আজ এই শিল্পের সঙ্গে নেই। সে কথা ভাবলে কষ্ট লাগে। এভাবে অনেক উদ্যোক্তারাই ঝরে পড়েছেন। আমরা বিজিএমইএকে উদ্যোক্তাদের জন্য তৈরি করতে চাই।”
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে নানা ধরনের সংকটের কথা তুলে ধরে ব্যবসায়ী নেতা ফয়সাল সামাদ বলেছেন, এই সংকট মোকাবেলায় বিজিএমইএকে শক্তিশালী করতে চান তিনি। এজন্য সবার সহযোগিতাও চেয়েছেন।
আগামী ৯ মার্চ পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর নির্বাচন। নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট ‘ফোরাম’ এর প্যানেল লিডার হিসেবে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাভার টেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএ’র বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ফয়সাল সামাদ।
নির্বাচনে ফয়সাল সামাদের প্যানেল জয়ী হলে তিনি সংগঠটির ২০২৪-২৬ মেয়াদের সভাপতি নির্বাচিত হবেন।
ভোটের আগে মঙ্গলবার ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের জোটের বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি, জানান পরিকল্পনার কথাও।
সংবাদ সম্মেলনের আগে অন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় বসেন ফোরামের নেতারা।
নিজের বক্তব্যে ফয়সাল সামাদ বলেন, “এই মুক্ত আলোচনা শুধু নির্বাচনী প্রচারের জন্য নয়। তৈরি পোশাক শিল্প যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনার জন্যই এই আয়োজন। আমি মনে করি শুধু উদ্যোক্তারা নয়, আমরা সবাই এই শিল্পের অংশীদার।”
এরই মধ্যে উত্তরা ক্লাব, বনানী ক্লাব ও চট্টগ্রামের হোটেল রেডিসনে আলাদা তিনটি মুক্ত আলোচনায় সহউদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলেও জানান তিনি।
ফয়সাল সামাদ বলেন, “আমি লম্বা সময় ধরে এই শিল্পের সঙ্গে আছি। যখন শুরু করেছিলাম, তখন যারা ব্যবসা শুরু করেছিলেন, তাদের অর্ধেকের বেশিই আজ এই শিল্পের সঙ্গে নেই। সে কথা ভাবলে কষ্ট লাগে। এভাবে অনেক উদ্যোক্তারাই ঝরে পড়েছেন। আমরা বিজিএমইএকে উদ্যোক্তাদের জন্য তৈরি করতে চাই। যেন প্রয়োজনে বিজিএমইএ উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়াতে পারে।”
তৈরি পোশাক শিল্পকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ভূ-রাজনীতির পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য তথা দেশীয় অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার বাইরে রয়েছে প্রতিনিয়ত কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি, তৈরি পোশাকের মূল্য হ্রাস, ক্রেতাদের নতুন নতুন শর্ত আরোপ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি ইত্যাদি। এগুলো পোশাক রপ্তানিকারদের ব্যবসায় টিকে থাকার জন্য নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।”
সব ধরনের প্রতিকূল অবস্থাকে সামাল দিয়ে অনুকূল বাণিজ্য পরিস্থিতি তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে অবদান রাখতেই বিজিএমইএর পর্ষদ নির্বাচনে তার জোট ‘ফোরাম’ অংশ নিচ্ছে বলেও জানান ফয়সাল সামাদ।
এসময় ফোরামের পক্ষ থেকে করা একটি জরিপের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। সংগঠনের ৬৬ সাধারণ সদস্যের অংশগ্রহণে করা এই জরিপে দেখা যায়, ৭৯ দশমিক ১ শতাংশ মালিকই জানিয়েছেন নতুন মজুরি কাঠামোর পর তাদের ক্রেতারা পণ্যের দাম বাড়াননি।
এ বিষয়ে ফয়সাল সামাদ বলেন, “ক্রেতাদের বার বার চিঠি দেওয়া হলেও, এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ ক্রেতাই পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করেনি। আমাদের ক্রেতাদের সঙ্গে আরও সরাসরি কথা বলতে হবে এবং পণ্যের বর্ধিত মূল্য আদায় করতে হবে।”
উদ্যোক্তাদের নিজেদের মধ্যে কম দামে ক্রয়াদেশ নেওয়ার যে প্রতিযোগিতা রয়েছে সে সম্পর্কে জানতে চান এক সাংবাদিক।
এর জবাব দিতে আসেন বিজিএমইএর পরিচালক পাওয়ার হাউজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, “যদি সরাসরি বাংলায় বলি, আমাদের নিজেদের ভিতরে মূল্য নিয়ে এক ধরনের মারামারিই করতে হয়। আমাদের প্রোডাকশন লাইন যদি না চলে তাহলে তো ব্যবসা চলবে না। ফলে, কম দামে হলেও আমাদের কাজ নিতে হচ্ছে। তখন হয়ত ব্যবসায় লাভ হবে না তবে ব্যবসা চলবে।”
এ প্রসঙ্গে ফয়সাল সামাদ বলেন, “আমরা যদি বারবার বলি আমরা ভালো আছি, সব ঠিক আছে তাহলে তো হবে না। আমাদের বাস্তবতা জানতে হবে। আমি একা বায়ারের সঙ্গে আলোচনা করে লাভ হবে না। তবে বিজিএমইএ কথা বলতে পারে। বায়ারদের সঙ্গে পরিসংখ্যান নিয়ে কথা বলতে হবে। আমরা যদি বিজিএমইএকে নিয়ে বসতে পারি তাহলে বায়ার আমাদের কথা শুনতে বাধ্য হবে। আমরা বিজিএমইএকে যদি শক্তিশালী করতে পারি, তাহলে কেউ আমাদের ভাঙতে পারবে না।”
নির্বাচিত হলে বিজিএমইএকে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
ফোরামের করা জরিপের ফলাফলে জানানো হয়, ২০২৩ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে মাত্র ৯৭৬ কারখানায় সক্ষমতার শতভাগ ক্রয়াদেশ ছিল। ৮২ শতাংশ কারখানার সক্ষমতার চেয়ে অনেক কম ক্রয়াদেশ ছিল এবং ৬ শতাংশ কারখানায় কোনও ক্রয়াদেশ ছিল না।
দায়িত্ব পেলে কোন কোন খাতে কাজ করবেন তা তুলে ধরেন ফয়সাল সামাদ।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও বাজারি রপ্তানিকারকদের উন্নয়ন, কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে ক্রেতাদের সম্পৃক্ত করা, ক্রেতার নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করা, ক্রেতার চাপিয়ে দেওয়ার প্রবনতা বন্ধ করা, ক্রেতার কাছ থেকে যৌক্তিক মূল্য পাওয়া, এইচএস কোডের (হারমোনাইজড সিস্টেম কোড) দ্বৈততা নিরসন করা, উদ্যোক্তাদের এক্সিট পলিসি প্রবর্তন করাসহ বিভিন্ন বিষয় ধরে কাজ করবেন।
বিজিএমইএর সব সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন তিনি।
সবকিছুর জন্য প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না মন্তব্য করে এই প্রতিদ্বন্দ্বী বলেন, “তিনি আমাদের অনেক কিছু দিয়েছেন। এখন নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই সমাধান করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে সত্যিকার পরিসংখ্যান দেখাতে হবে। মুখে মুখে অনেক রপ্তানি বললে তো হবে না। দাবি-দাওয়া করার জন্য সরকারের সঙ্গে আমি বসতে চাই না। আমি আলোচনা করতে বসতে চাই, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উপায় বের করতে চাই।”
শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামো নিয়েও কথা বলেন ফয়সাল সামাদ।
তিনি বলেন, “শ্রমিকদের নতুন মজুরি দেবে না এমন কোনও কারখানা বাংলাদেশে নেই। আমরা দিতে চাই, কিন্তু কতদিন দিতে পারব। সেই সমস্যার সমাধান আমরা করতে চাই। তাই আমরা একটা শিল্পবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে চাই, যেন শিল্প রক্ষা হয়।”
শ্রমিকদের জন্য রেশনিং এবং গৃহায়ণ নিয়েও সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানালেন এই নেতা। বলেন, “আমরা শ্রমিকদের জীবন মান উন্নত করতে চাই।”
কমেন্ট