স্মার্ট বিজিএমইএ গড়তে ফোরামের ১১ দফা প্রতিশ্রুতি

স্মার্ট বিজিএমইএ গড়তে ফোরামের ১১ দফা প্রতিশ্রুতি

নির্বাচনকে সামনে রেখে ফোরামের দলনেতা ফয়সাল সামাদ স্মার্ট বিজিএমইএ গড়তে ফোরামের ১১ দফা প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন।

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে ইশতিহার ঘোষণা করতে গিয়ে ‘অযাচিত ভোটার তালিকা’ নিয়ে আবারও আপত্তি তুলেছে ফোরাম নামের প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল।

তবে এর মাঝেও ‘শিল্পের স্বার্থে’ ভোটের মাঠ ফাঁকা না ছেড়ে দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকার কথা বলেছেন এ প্যানেলের নেতারা।

সোমবার ঢাকার হোটেল র‌্যাডিসন ব্লুতে ফোরাম এর ইশতিহার ঘোষণা করার সময় এসব কথা বলা হয়।

নির্বাচনকে সামনে রেখে ফোরামের দলনেতা ফয়সাল সামাদ স্মার্ট বিজিএমইএ গড়তে ফোরামের ১১ দফা প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন।

এ সময় সংগঠনটির সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান সিনহা, আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ ও রুবানা হক বক্তব্য রাখেন।

ফোরামের সভাপতি এম এ সালাম বলেন, “আমাদের নেতারা যতবার ক্ষমতায় এসেছে যথাসময়ে ক্ষমতা হস্তন্তর করেছে। রাইট টাইম কোয়ালিটি সার্ভিস আমরা বারবার দেখিয়েছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের বন্ধুরা বারবার এক্সটেনশন নিয়েছেন।”

ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, গত ১৮ জানুয়ারি নির্বাচনের প্রাথমিক ভোটার তালিকায় মোট ২ হাজার ৫৬৩ জন ভোটারের তালিকা  প্রকাশ করেছিল নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড। সেখানে ঢাকা অঞ্চলে ২০৫১ জন ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৫১২ জন ভোটার তালিকায় স্থান পায়।

“ভোটার তালিকা প্রকাশের পর পরই তালিকা দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। কোভিড মহামারি , রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ২০২০ সাল থেকেই গার্মেন্টস উৎপাদন কমতে থাকে। কোটি কোটি টাকার ক্রয়াদেশ স্থগিত আর  শ্রমিকের বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকায় একে একে বন্ধ হয়ে যায় বহু কারখানা। যেখানে এবারের নির্বাচনে বহু কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোটার সংখ্যা কমে যাবার কথা,সেখানে চার শতাধিক ভোটারের নতুন করে সংযুক্তি সন্দেহের সৃষ্টি করবে এটাই স্বাভাবিক। শুরু হয় ভোটার তালিকার অসংগতি নিয়ে বিতর্ক।”

“আমরা ফোরামের পক্ষ থেকে এরকম ৪২৯ টি ভুয়া কারখানার ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করি। অভিযোগ দেওয়ার পর আপিল বোর্ড ৬৭ জনের ক্ষেত্রে তা গ্রহণ করে তাদের বাদ দিয়েছে। কিন্তু বাকি ৩৬২টি কারখানার সদস্যপদ বাতিল করেনি বিজিএমইএর নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড।”

এম এ সালাম বলেন, “আমরা যে স্বচ্ছতার কথা বলি এখানে সেটা কোথায়? আগামী ৯ মার্চ পর্যন্ত সময় আছে বিষয়টি সুরাহা করার। আমরা সেই অপেক্ষায় থাকব।”

সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান সিনহা বলেন, বিজিএমইএ পোশাক খাতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এখানকার নেতৃত্বও গুরুত্বপূর্ণ। ইতোপূর্বে ফোরাম নেতৃত্বে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে।

“যে ৩৫ জনকে প্রার্থী হিসেবে নিয়ে এসেছি এটি সব দিক থেকে ব্যালেন্সড পর্ষদ। ফয়সাল সামাদ খুবই প্রফেশনাল পার্সন। তাকে সুযোগ দিলে তিনি আপনাদের আশা আকাঙ্খার মূল্য দেবেন।”

সাবেক সভাপতি আনোয়া-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, বিজিএমইএ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে কারখানা মালিকরা স্বস্তিতে থাকতে পারে। এজন্য লিডারশিপ খুবই শক্ত ভূমিকা রাখতে পারে। নির্বাচনের মাধ্যমে সঠিক নেতৃত্ব বেছে নেওয়া যেতে পারে।

ফোরামের নেতৃত্বে বিজিএমইএ পরিচালিত হওয়ার সময় বন্ডেড ওয়ারহাউজ, চাইল্ড লেবার ইস্যু, টার্মিনাল হ্যান্ডেলিং চার্জ কমিয়ে আনা, জিএসপি সুবিধা নিয়ে আসাসহ অন্যান্য সুবিধাগুলোর কথা তুলে ধরেন তিনি।

সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলেন, যে শিল্পখাত বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যায় সেটার নির্বাচন প্রক্রিয়া কেন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এখানে বারবার অনিয়ম হলেও প্রতিবাদ করা থেকে বিরত থাকতে হয়। কারণ, বলা হয় একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এখানে চুপ করে থাকার সংস্কৃতি চালু হয়েছে।

দায়িত্ব পালনের শেষ পর্যায়ে একটি মহলের ‘গুন্ডামির’ শিকার হয়েছিলেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, “ফোরামকে জয়ী করলে শিল্পের জয় হবে। কোভিডের সময় মাথা স্থির করে কাজ করতে হয়েছে। পরবর্তীতে কিছু ইউডিতে অনিয়ম দেখে সেখানে হাত দেওয়া হয়। সেখানে বহু কেলেঙ্কারি দেখতে পাওয়া যায়।

“একদিন দেখলাম বাইরে অনেক গুন্ডা ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আমাকে ভয় দেখানোর জন্য এমনটি করা হয়েছিল। কিন্তু বিজিএমইএ তো কোনো গুন্ডামির জায়গা নয়।”

কী আছে ইশতিহারে

ফোরামের প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ বলেন, “বিগত ১১টি পর্ষদে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার। সেই সব অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। এবার যদি সঠিক নেতৃত্ব ঠিক করা না যায় তাহলে বার্ষিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের এই শিল্প তা অবস্থান ধরে রাখতে পারবে না।”

তিনি বলেন, ফোরামের নেতৃত্বে থাকাকালে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের হাত থেকে বিজিএমইএ প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে আরএসসি গঠন করা হয়েছে। দায়িত্ব পেলে আরএসসিকে আরও শক্তিশালী করা হবে।

“বর্তমানে বায়ার মার্কেট হিসাবে আমরা কাজ করছি। এটাকে সেলার মার্কেটে রূপ দেওয়ার কাজ করব। তিন মাস পর পর সদস্যদের কাছ থেকে আমাদের কাজের মূল্যায়ন নেব। নির্বাচিত পরিচালকদের বসিয়ে না রেখে সবার মাঝে দায়িত্ব ভাগ করে দেব।”

ফোরামের প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে রয়েছে-স্মার্ট বিজিএমইএ প্রতিষ্ঠা, স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন বিজিএমইএ প্রতিষ্ঠা, পোশাক শিল্পের জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন, ক্রেতার জবাবদিহিতা ও পোশাকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, শিল্পের নিরাপত্তা, শ্রম অধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষা, রুগ্ন শিল্প এবং ব্যবসা থেকে সম্মানজনক প্রস্থানের নীতি প্রণয়ন।

ফোরামের ৩৫ প্রার্থী

অনুষ্ঠানে ফোরাম প্যানেলের ৩৫ জন প্রার্থী পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এদের মধ্যে ঢাকা থেকে ২৬ জন এবং চট্টগ্রাম থেকে ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ঢাকা থেকে প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ ছাড়া অন্য যেসব প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা হলেন- এম সাজেদুল করিম, এম এ সালাম, কাজী মিজানুর রহমান, মো. শিহাব উদোজা চৌধুরী, ইনামুল হক খান বাবলু, মো. সোহেল, শেখ এইচ এম মোস্তাফিজ, ভিদিয়া অমৃত খান, মাশেদ আর আব্দুল্লাহ, মো. খায়ের মিয়া, শাহ রাঈদ চৌধুরী, মিজানুর রহমান, খান মনিরুল আলম, সামিহা আজীম, ওসামা তাসীর, এ এম মাহমুদুর রহমান, নাফিস উদ দৌলা, শারেক রহিম, আসিফ ইব্রাহিম, মজুমদার আরিফুর রহমান, এম সাফদার হোসেন দীপু, রুমানা রশীদ, ওয়াসিম জাকারিয়া, মাহির মান্নান ও রেজওয়ান সেলিম।

চট্টগ্রাম থেকে ফোরাম প্যানেল থেকে নির্বাচন করছেন সেলিম রহমান, মো. সাইফ উল্লাহ মানসুর, মো. রফিক চৌধুরী, এমডি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, ওদুদ মোহাম্মদ চৌধুরী, বিজয় শেখর দাশ, আরশাদ উর রহমান, মোরশেদ কাদের চৌধুরী ও রিয়াজ ওয়ায়েজ।

আগামী ৯ মার্চ উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে সংগঠনটির দ্বিবার্ষিক (২০২৪-২০২৬) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

বিজিএমইএকে শক্তিশালী করতে চান ফয়সাল সামাদ পরবর্তী

বিজিএমইএকে শক্তিশালী করতে চান ফয়সাল সামাদ

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর