শনিবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার এস এম মান্নান কচি।

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর ২০২৪–২৬ মেয়াদের নির্বাচনে ৩৫ পরিচালক পদের মধ্যে সব কটিতে জয়ী হয়েছে সম্মিলিত পরিষদ।

ফলে সংগঠনটির পরবর্তী সভাপতি হচ্ছেন এই প্যানেলের দলনেতা এস এম মান্নান কচি। নির্বাচনে অপর প্যানেল ফোরামের প্রার্থীদের কেউ জয়ী হতে পারেননি।

বিজিএমইএর আগামী নেতৃত্ব নির্বাচনে শনিবার ঢাকা ও চট্টগ্রামে একসঙ্গে ভোট গ্রহণ হয়। ঢাকায় ভোট গ্রহণ শুরুর আগে দুই প্যানেলের প্রার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। বিকেলে ভোটকক্ষে বিশৃঙ্খলাও হয়।

শেষ পর্যন্ত ৮৯ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। সন্ধ্যা ছয়টার পর ভোট গণনা শুরু হয়। গণনা শেষে শনিবার মধ্যরাতে নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান বস্ত্রকলমালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন ফলাফল ঘোষণা করেন। এতে দেখা যায়, সম্মিলিত পরিষদের দলনেতা এস এম মান্নান সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫১০ ভোট পেয়েছেন।

নির্বাচনে মোট ৩৫ জন পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মধ্যে ঢাকা থেকে ২৬ জন এবং চট্টগ্রাম থেকে ৯ জন নির্বাচিত হন।

ঢাকা অঞ্চল থেকে নির্বাচিত ২৬ জন পরিচালক হলেন—সেহা ডিজাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মান্নান, টিম গ্রুপের এমডি আবদুল্লাহ হিল রাকিব, ক্ল্যাসিক ফ্যাশন কনসেপ্টের এমডি শহিদউল্লাহ আজিম, ডেনিম এক্সপার্টের পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল, ডিজাইনটেক্স নিটওয়্যারের এমডি খন্দকার রফিকুল ইসলাম, এনভয় ডিজাইনের পরিচালক শেহরিন সালাম, ফোরর্টিজ গার্মেন্টসের এমডি শাহদাৎ হোসেন, গালপেক্সের এমডি রেজাউল আলম, কাউজার নিটওয়্যারের এমডি জাকির হোসেন, লায়লা স্টাইলের এমডি ইমরানূর রহমান, মেসিস গার্মেন্টসের পরিচালক আশিকুর রহমান, বিটপী গ্রুপের এমডি মিরান আলী, মমসন সার্ভিস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি নুসরাত বারী, নিউটেক্স ডিজাইনের পরিচালক নুরুল ইসলাম, সাদমা ফ্যাশনওয়্যারের এমডি নাসির উদ্দিন, সায়েম ফ্যাশনের পরিচালক আবরার হোসেন সায়েম, শাশা গার্মেন্টসের এমডি শামস মাহমুদ, শিন শিন অ্যাপারেলসের এমডি মোহাম্মদ সোহেল সাদাত, স্প্যারো গ্রুপের এমডি শোভন ইসলাম, টেক্স টাউনের এমডি আনোয়ার হোসেন, টিএমএস ফ্যাশনের এমডি সাইফুদ্দিন সিদ্দিকী, টিআরজেড গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির এমডি হারুন অর রশীদ, তুসুকা ফ্যাশনসের চেয়ারম্যান আরশাদ জামাল, উর্মি গার্মেন্টসের এমডি আসিফ আশরাফ, উইন্ডি অ্যাপারেলসের এমডি মেসবাহ উদ্দিন খান এবং ইয়ং ফোরএভার টেক্সটাইলের এমডি রাজীভ চৌধুরী।

চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে বিজয়ী হয়েছেন আমহেকো ফেব্রিকসের এমডি এম আহসানুল হক, আর্জেন্টা গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি মোহাম্মদ রাকিব আল নাসের, হাই ফ্যাশনের এমডি আমজাদ হোসেন চৌধুরী, এইচকেসি অ্যাপারেলসের রাকিবুল আলম চৌধুরী, মদিনা গার্মেন্টসের এমডি মোহাম্মদ মুসা, আরডিএম অ্যাপারেলসের এমডি মোস্তফা সারোয়ার, সোনেট টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক গাজী শাহীদ উল্লাহ, টপ স্টার ফ্যাশনের এমডি আবজার হোসেন এবং ওয়েল গ্রুপের পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলামিন বলেন, “নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। ছোটখাট দুই-একটি অভিযোগ ছাড়া প্রার্থীদের তেমন বড় কোনো অভিযোগ ছিল না।”

তিনি জানান, নির্বাচনে মোট ২ হাজার ৪৯৬ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২ হাজার ২২৬ জন, যা শতকরা হিসাবে ৮৯ দশমিক ১২। এর মধ্যে ঢাকায় ২ হাজার ৩২ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন এক হাজার ৮৩৯ জন, মানে ৯০ দশমিক ৫০ শতাংশ।

আগামী ৬ এপ্রিল নির্বাচিত পরিচালকদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে একজন সভাপতি, একজন প্রথম সহ-সভাপতি, একজন জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এবং চার জন সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবেন।

নির্বাচনে ‘ফোরাম’ ও ‘সম্মিলিত পরিষদ’ নামে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্ব দেন সেহা ডিজাইন লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং বিজিএমইএর বতর্মান জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

সম্মিলিত পরিষদের দলনেতা হিসেবে এস এম মান্নান কচি বিজিএমইএর নতুন সভাপতি নির্বাচিন হচ্ছেন।

আর ফোরামের নেতৃত্ব দেন সুরমা গার্মেন্টসের পরিচালক ফয়সাল সামাদ। তিনি বর্তমান কমিটির পরিচালক। একবার সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

সবশেষ বিজিএমইএ নির্বাচন হয় ২০২১ সালে। ওই ভোটে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩৫ পরিচালকের ২৪টিতে জয়ী হয় সম্মিলিত পরিষদ। সভাপতি নির্বাচিত হন ফারুক হাসান। আর ওই নির্বাচনে এবিএম সামছুদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ফোরাম পায় ১১টি পরিচালক পদ।

২০২৩ সালের এপ্রিলে এই পরিচালনা পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই দফায় তারা এক বছর সময় বাড়িয়ে নেয়। ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪-২৬ মেয়াদে বিজিএমইএ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।

তার আগে ৪ ডিসেম্বর বিজিএমইএর নির্বাচনি বোর্ড গঠিত হয়। বোর্ডের চেয়ারম্যান হন বিটিএমএর সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন। অন্য সদস্যরা হলেন এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইকাব) সভাপতি শমী কায়সার ও ইকাবের সাবেক সভাপতি এ এস এম নাঈম।